বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অবশেষে পায়রা বন্দর সহ দক্ষিণাঞ্চলকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিস্তারিত নকশা, সম্ভব্যতা সমিক্ষা ও টেন্ডার ডকুমেন্ট সহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র রেলওয়েতে জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। ফলে রেললাইন বিহীন দক্ষিণাঞ্চলে ট্রেন চালানোর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃসাহসিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন একধাপ অগ্রগতি লাভ করল। চলতি মাসের মধ্যে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে এসংক্রান্ত সমুদয় কাগজপত্র রেলওয়ের পরিকল্পনা বিভাগে যাচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। ৪১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ২১১ কিলোমিটার দীর্র্ঘ এ রেলপথ নির্মান প্রকলটি পিপিপি পদ্ধতিতে ডিপিএম-এ ১টি প্যকেজে বা ওটিএম পদ্ধতিতে ৪টি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হতে পাড়ে। তবে এসব কিছুই নির্ধারিত হবে একনেক-এর সভায়। প্রকল্পটির জন্য এখনো দাতা পাওয়া না গেলেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়াও পিপিপি পদ্ধতিতে বিনিয়োগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ ব্যক্ত করলেও কিছুই চুড়ান্ত হয়নি।
রেলপথ অধিদপ্তরের অনুমোদন শেষে ডিপিপি’টি মন্ত্রনলয় ও পরিকল্পনা কমিশনে আগামী মাসেই যাবার সম্ভবনা রয়েছে। রেলওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল থেকে আগামী ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী-এডিপি’তে প্রকল্পটি অন্তভর্’ক্তিরও আশাবাদ ব্যক্ত করে ২০২৮-এর জুনের মধ্যে ভাংগা-বরিশালÑপায়রা-কুয়াকাটা রেলপথ চালুর আশাবাদ ব্যাক্ত করা হয়েছে। এ রেলপথ দক্ষিণাঞ্চলের আর্র্থÑসামাজিক ব্যবস্থায় বিশাল মাইল ফলক হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতির শিক্ষকগন। এমনকি পায়রা বন্দরের পরিপূর্ণ ব্যাবহার ছাড়াও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশেও এ রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৮-এর অক্টোবরে ফরিদপুর Ñ ভাংগা Ñ বরিশাল Ñ পায়রা Ñ কুয়াকাটা রেলপথ নির্মানের সম্ভাব্যতা সমিক্ষা, বিস্তারিত নকসা প্রনয়ন ও টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরীর লক্ষে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০-এর মার্চে প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাবিত এ রেলপথ, স্টেশন ও জংশন স্থাপনের সমিক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা জমা দেয়ার কথা থাকলেও সে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। করোনা সংকটের পাশাপাশি এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের কারণেও বিলম্বের কথা জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সরকারের সিদ্ধান্তনুযায়ী প্রস্তাবিত রেলপথের কয়েকটি স্থানে পুনরায় জরিপ পরিচালনা করে নতুন এলাইনমেন্ট অনুযায়ী নকশা প্রনয়ন করা হয়েছে।
এ রেলপথ নির্মানের ফলে পায়রা বন্দর ছাড়াও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এবং বরিশাল বিভাগীয় সদর সহ দক্ষিণাঞ্চল রেলপথে ভাংগা জংশন হয়ে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও উত্তরবঙ্গে সংযুক্ত হবে। তবে মূল ‘প্রকল্পÑপ্রস্তাবনা’য় ২০২৩ সালের মধ্যে এ রেলপথ চালুর লক্ষ্য থাকলেও সে সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শুরু নিয়েই এখনো সংশয় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার প্রধান যথেষ্ঠ আগ্রহী হলেও মাঠ পর্যায়ে নানামুখি জটিলতা সহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সময়মত ডকুমেন্নট ও নকশা দিতে বিলম্ব করায় তা যথেষ্ঠ পিছিয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে বরিশালের বাকেরগঞ্জের কাছে মূল এলইনমেন্ট কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এতে জমির প্রয়োজনীয়তাও কিছুটা কমবে। পাশাপাশি লাইনটি পায়রা বন্দর ছুয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমনকি ভাংগাÑবরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা রেলপথ নির্মান কাজ শেষ হবার মধ্যেই পায়রা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায় সম্পন্ন হওয়ায় বন্দর থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনের পথ সুগম হবে।
বৃটিস যুগ থেকে দেশের প্রাথমিক পাঠ্যবইতে প্রশ্ন ছিল, ‘রেল লাইন নেই কোন জেলায়’, উত্তর ছিল ‘বরিশাল’! যদিও বৃটিস যুগেই ফরিদপুরÑবরিশাল রেল লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত ছিল। এলক্ষে ১৮শ শতাব্দীর শেষভাগে জরিপ কার্যক্রম শুরু করে প্রায় ৫০ বছর পরে জরিপ প্রতিবেদন পেস করা হলেও নদীÑনালার দেশ দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল সংখ্যক সেতু ও কালভার্ট নির্মান করতে হবে বিধায় প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে দেশ বিভাগের পরে পাকিস্তান সরকার ফরিদপুরÑবরিশাল রেল যোগাযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ভ’মি অধিগ্রহনও সম্পন্ন করে। কিন্তু এর পরে আর খুব অগ্রগতি হয়নি।
স্বাধিনতার পরে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর-এর উদ্যোগে ফরিদপুর প্রান্ত থেকে নির্মান কাজ শুরু করে তালমা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু করা হয়। ১৯৮২ সালে পুকরিয়া পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রেল যোগাযোগ চালু হয়। লাইন নির্মানের লক্ষে ভাংগা পর্যন্ত মাটির কাজ সম্পন্ন হয় এর আগেই। কিন্তু এরশাদ সরকার ক্ষমতা দখলের পরে ১৯৮৩ সালে ফরিদপুরÑবরিশাল রেল লাইন প্রকল্পটি বাতিল ঘোষনা করে অধিগ্রহনকৃত ভ’মি অবমূক্ত করার নির্দেশ দেন। ফলে দক্ষিণাঞ্চলকে রেল যোগাযোগে আনার বিষয়টি পরিপূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিভাগীয় সদর সহ পায়রা বন্দরকে রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আনার গুরুত্ব অনুধাবন করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। ফরিদপুর থেকে পুকুরিয়া হয়ে ভাংগা পর্যন্ত লাইন স্থাপন করে গতবছর ২৬ জানুয়ারী তা উদ্বোধনও করা হয়েছে। এখন ভাংগা থেকে পুকুরিয়াÑফরিদপুর হয়ে রাজশাহী এবং রাজবাড়ী পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে।
রেলওয়ের দায়িয়ত্বশীল মহলের মতে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মর্চের মধ্যে ‘ভাংগা-বরিশালÑপায়রা-কুয়াকাটা রেলপথ প্রকল্প’টি একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করতে পারে। তবে এ রেল লাইন নির্র্মানে যে ৫ হাজার ৬৩৮ একর ভূমি অধিদগ্রহন করতে হবে, সে কাজেও অন্তত দুবছর লেগে যেতে পাড়ে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টগন জানিয়েছেন।
অপরদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালা নির্ধারন, নির্মান প্রতিষ্ঠান ও পরমর্শক নিয়োগ সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেও অন্তত ১বছর লাগবে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল একনেক-এর অনুমোদনের পরে সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভ’মি অধিগ্রহন সহ একই সাথে টেন্ডার আহবান করে নির্মান প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের বিষয়টি চুড়ান্ত করতে চাচ্ছেন। যাতে ২০২৩-এর জুলাই নাগদ বাস্তব অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু করা যায়। এতে করে ২০২৮-এর মধ্যে ভাংগা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথে ট্রেন চালুর আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টগন। তবে ইচ্ছে করলে ভাংগাÑবরিশাল সেকসনের ৯৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্র্মান ৩ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করে রেল যোগাযোগ চালু সম্ভব বলেও মনে করছেন একাধীক কারিগরি বিশেষজ্ঞ।
পরমর্শক প্রতিষ্ঠান ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ রেলপথে মোট ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করেছে। এ রেলপথের জংশন থাকছে ফরিদপুরের ভাংগাতেই। ভাংগা থেকে একটি লাইন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় এবং অপর একটি লাইন ভাটিয়াপাড়াÑনড়াইল-যশোর হয়ে খুলনা ও বেনাপোল লাইনে যুক্ত হচ্ছে। প্রস্তাবিত রেলপথে ভাংগা’র পরে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমান বন্দর, বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী,পয়রা বিমান বন্দর, পায়রা বন্দর হয়ে সর্বশেষ কুয়াকাটাতে স্টেশন নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্টেশনগুলোর ভবন দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ইলিশের আদলে নির্মানের নকশা করা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বরিশাল স্টেশনে কারশেড ছাড়াও জ¦ালানীর জন্য পিওএল ডিপো সহ আরো বেশ কিছু সুবিধা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।