Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গাড়ি ও কপ্টার ভর্তি অর্থ নিয়ে পালিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট

দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতেই পালিয়েছি : গনি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হওয়ার পর রোববার তাজিকিস্তানে পালিয়ে যান আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। পালানোর সময় তিনি চারটি গাড়ি এবং একটি হেলিকপ্টার ভর্তি করে নগদ অর্থ নিয়ে গিয়েছেন বলে সোমবার জানিয়েছে কাবুলে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাস। এদিকে, দেশত্যাগের পর প্রথমবারের মতো দেয়া এক ফেসবুক পোস্টে গনি দাবি করেন, আফগানিস্তানে রক্তের বন্যার এড়াতেই তিনি পালিয়ে গেছেন।

এছাড়া তার হাতে আর কোন বিকল্প ছিল না। ৬০ লাখ মানুষের কাবুল নগরীতে রক্তপাত, খুনোখুনি এবং ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে আগেভাগেই দেশত্যাগের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
গতকাল রাশিয়ান দূতাবাসের বরাতে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গণি এমনকি জায়গা না হওয়ায় কিছু অর্থ ফেলে যেতেও বাধ্য হয়েছেন। গণির টাকা নিয়ে পালানোর প্রসঙ্গে রাশিয়ান দূতাবাসের মুখপাত্র নিকিতা ইশচেনকো বলেছেন, চারটি গাড়িতে অর্থ ছিল। তারা বাকি অর্থ হেলিকপ্টারে ঢোকানোর চেষ্টাও করে। কিন্তু পুরোটা জায়গা না হওয়ায় কিছুটা টারমার্কের ওপর পড়ে ছিল। আফগানিস্তানের জন্য প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বিশেষ প্রতিনিধি জমির কাবুলভ বলেন, ‘এটা স্পষ্ট নয় যে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা কত টাকা ফেলে রেখে গিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি যে সরকার পালিয়ে গেছে সে রাজ্যের বাজেট থেকে সমস্ত অর্থ নেয়নি। যদি কিছু বাকি থাকে তবে সেটি নতুন বাজেটের ভিত্তি হবে।’ রাশিয়া বলেছে, তারা কাবুলে ক‚টনৈতিক উপস্থিতি বজায় রাখবে এবং তালেবানদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার আশা করছে। তাদেরকে দেশের শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং তাদের আচরণ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

এদিকে দেশ ত্যাগ করেন আশরাফ গনি বর্তমানে তাজিকিস্তানে অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইন্টেরিয়র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। গতকাল গণি ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘আজ আমি এক কঠিন পরিস্থিতি পার হয়ে এসেছি। ২০ বছর ধরে আমি নিজেকে আমার দেশের জন্যই উৎসর্গ করেছি। আমি যদি কাবুলে থেকে সশস্ত্র তালেবানদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতাম, তাহলে কাবুল ধ্বংস হয়ে যেত। অনেক দেশপ্রেমিক নাগরিক শহীদ হতেন। পরিণামে নেমে আসত ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।’

আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘তালেবান আমাকে সরিয়ে দিতে পেরেছে। তারা কাবুলে ঢুকে পড়েছে এখানকার বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালাতে। এমন অবস্থায় রক্তের বন্যা এড়াতে প্রাসাদ থেকে চলে আসাটাই আমি শ্রেয় মনে করেছি।’ দীর্ঘ ২১ বছর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসা তালেবান এখন ‘ঐতিহাসিক পরীক্ষার’ সম্মুখীন হবে বলে মন্তব্য করেন আশরাফ গনি। তিনি বলেন, ‘তালেবান তলোয়ার ও বন্দুকের যুদ্ধে জিতে গেছে। দেশবাসীর সম্মান, সম্পদ ও সুরক্ষার দায়িত্ব এখন তাদের। আফগানিস্তানের জনগণের ভালোবাসা তাদের জিতে নিতে হবে। দূর করতে হবে ভয় ও আশঙ্কা।’

অন্যদিকে দেশকে সঙ্কটে রেখে ‘পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে’ আফগানরা প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির ‘বিচার করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শীর্ষ রাজনীতিক আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ। তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় আপোষবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের শান্তি কাউন্সিল গঠন করা হলে তার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ। ফেসবুক দেয়া এক ভিডিও বার্তায় আশরাফ গনিকে ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দেশকে এই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে চলে গেছেন। আল্লাহর কাছে তিনি দায়বদ্ধ থাকবেন এবং জাতি তার বিচার করবে।’ সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ