Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রদল কর্মীদের ঝুলিয়ে পেটানো সেই ওসি ৯ বছরে পেলেন তৃতীয় দফায় পদোন্নতি

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০২১, ৮:৩১ পিএম

ঠিক ৯ বছর আগে খুলনা সদর থানায় ওসি থাকাকালীন তিনি ছাত্রদলের দুই কর্মী এসএম মাহমুদুল হক টিটো ও ফেরদাউসুর রহমান মুন্নাকে গ্রেফতারের পর চোখ বেধে থানায় সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে বেদম পিটিয়েছিলেন। সে ঘটনার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হলে হাইকোর্টে বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা একটি রীট করে। এরপর তাকে ওসির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয় । ২০১১ সালের ১৪ মার্চ ওসি হিসেবে যোগদানের পরপরই খুলনার স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে জুতা তৈরীর তিন কারিগরকে থানায় ডেকে জুতা তৈরী করে দিতে বলেন। তারা কারখানায় গিয়ে জুতা তৈরী করবে জানালে তাদেরও বেধড়ক পেটান তিনি। এর প্রতিবাদে খুলনার সমস্ত জুতা কারিগে ও জুতা তৈরী প্রতিষ্ঠান আন্দোলনে নেমেছিল। আন্দোলন দমন করতে ১৭ জনকে ধরে এনে লকআপে ঢুকিয়েছিলেন। ২০১২ এর ১২ এপ্রিল খুলনা মহানগরীর নিরালঅ এলাকায় এক টুকলো লোহা চুরির অপরাধে ১০ বছরের শিশু বেলালকে থানায় এনে বৈদ্যুতিক শক দেন। এ ঘটনা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে ব্যপক আলোড়ন হয়। এ ঘটনায়ও হাইকোর্টে রীট হয়েছিল। এর এক মাস না যেতেই ১০ মে নগরীর হাজী মুহসীন রোডে মারামারির ঘটনায় দুই কিশোর সাদিক (১২) ও শাকিল (১৫) কে ধরে এনে তিনি চোখ বেঁধে থানায় মারপিট করে মিথ্যা পেন্ডিং মামলায় আদালতে চালান দেন।

তিনি হচ্ছেন কেএমপিতে কর্মরত সদ্য (৮ আগষ্ট) অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার পদে পদোন্নতি পাওয়া এসএম কামরুজ্জামান। যাকে এখনো সবাই ওসি কামরুজ্জামান বলেই বেশী চেনেন। গত ৯ বছরে তিনি পরপর তিনটি পদোন্নতি পান। আজ বৃহষ্পতিবার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাংক ব্যাজ পরানো হয়।

খুলনা সদর থানায় ওসি পদে থাকাকালীন দেশের প্রথম সারির দৈনিক ও জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত তথ্যমতে, ‘তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপালে। যেহেতু বর্তমান সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বাড়ি ওই জেলায়, তাই তিনি মেয়রের ভাগ্নে পারিচয় দেন। যদিও বারবার সিটি মেয়র এ কথা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। রামপালে রয়েছে তার কয়েকশ’ বিঘা মৎস্যঘের। মহানগরীর বাগমারা এলাকায় ১২ কাঠার উপর বাড়ি ও রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাড়ির মালিক তিনি। এছাড়াও তার রাজধানীতে একাধিক ফ্লাট রয়েছে। রামপালের উজুলপুর ইউনিয়নের তুলশিরাবাদ গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুল মান্নানের ছেলে এসএম কামরুজ্জামানের সম্পদ সবই অবৈধ উপার্জনে করা বলে অনেকেই মনে করেন।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, পারিবারিক তথ্য হিসেবে জানা গেছে, দরিদ্র পিতার সংসারে অভাব অনটনের কারণে এসএম কামরুজ্জামান রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের হাফিজুর রহমান মোল্লার বাড়িতে গৃহশিক্ষক হিসেবে থেকে পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি ১৯৮৮ সালে পুলিশের এএসআই পদে চাকরি নেন। সারদায় ট্রেনিং শেষে তিনি কুষ্টিয়া, যশোর, ভোলা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন। কিছুদিন পর তিনি ভোলার বোরহানউদ্দিন থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। ওই সময় এলাকাবাসী তার উপর অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালের ১৫ মার্চ সাতক্ষীরার সদর থানার ওসি হিসেবে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মাথায় এপ্রিল মাসে কামরুজ্জামান আওয়ামী সমর্থিত লোকজন নিয়ে সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল দখল করেন। এভাবেই সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গন, পরিবহন সেক্টর, চোরাচালান জগত, সন্ত্রাসীদের আন্ডারওয়ার্ল্ড সবকিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন তিনি। ওসি হিসেবে খুলনা থানার দায়িত্ব গ্রহণের পর কামরুজ্জামান বিরোধীদলের নেতাকর্মী দমনের বিশেষ স্কিম নেন। এমনকি ইতোপূর্বে হরতাল চলাকালে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেন। এ ছবি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রপত্রিকায় আসার পর খুলনার মানুষ তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তার অতিউৎসাহী কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারি দলের নেতারাও ওই সময় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। সরকার দলীয় কয়েকজন নেতা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ওসি কামরুজ্জামান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন।

এবিষয়ে এসএম কামরুজ্জামানের সাথে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 



 

Show all comments
  • jack Ali ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:৩৪ পিএম says : 0
    May Allah destroy Taghut, Murtard Barbarian ruler and establish the rule of Allah then we will be able to live in our beloved country without any fear of torture.
    Total Reply(0) Reply
  • jack Ali ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৬:০৫ পিএম says : 0
    আল্লাহকে জাহান্নামে উপুর করে আগুনের রড দিয়ে পিটাবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ