Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চ সংক্রমণে সবকিছু স্বাভাবিক

বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় পুরনো রূপে ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

লকডাউন তুলে নেয়ায় গণপরিবহন রাস্তায় নেমেছে। ট্রেন, লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। অফিস-দোকানপাট খুলে গেছে। মানুষের ব্যস্ততা আর গাড়ির চাপে রাজধানীতে ফিরেছে চিরচেনা যানজট আর কোলাহল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করার দৃশ্য দেখা গেছে। বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিনোদনকেন্দ্র ছাড়া সবকিছুই চালু হচ্ছে। করোনার উচ্চ সংক্রমণ ও সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবরের মধ্যেই জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাÐ সচল রাখা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধিনিষেধ শর্তসাপেক্ষে শিথিল করা হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে ফের বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালি, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা গেছে উৎসবমূখর পরিবেশ। অথচ দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় না এনে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একদিকে দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থায় দীর্ঘ সময় বিধিনিষেধ (লকডাউন) পালন সম্ভব না। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার যে প্রণোদনা দেয় তাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সে প্রণোদনাও সঠিকভাবে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে লকডাউন খুলে দিলে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে অনীহা দেখা যায়। গণপরিবহন ও শপিংমলগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। এ অবস্থায় সংক্রমণ বেড়ে গেলে হাসপাতালগুলোর সেবা দেয়ার সক্ষমতা থাকবে না। অক্সিজেনের সঙ্কট আগে থেকেই। মৃত্যুহার বাড়ার পেছনে স্বাস্থ্য খাতের এ অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পর সব সরকারি, বেসরকারি অফিস, দোকানসহ বিপণি বিতানগুলো খুলেছে। মার্কেটগুলোতে সকালে দেখা যায় দোকান আর বিপণি বিতানের কর্মীরা ধোয়া মোছা করছেন। হোটেলগুলো ধোয়া মোছা করছেন। সড়কের বিভিন্ন স্টপেজে বাসের সহকারীর পরিচিত গন্তব্যের নাম ধরে হাঁকডাক, দুই বাসের পাল্লাপাল্লি, ট্রাফিক সিগন্যালে অপেক্ষা, ফুটপাতজুড়ে অফিসগামী মানুষের হেঁটে চলা, গণপরিবহনের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা সব দৃশ্য চোখে পড়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় বিমানবন্দর সড়কের একপাশে ছিল তীব্র যানজট। করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে গত ১ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ শুরু হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবারো বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়। পরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। যা বুধবার সকাল থেকে শিথিল করা হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিধিনেষেধের আগে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রাজধানীতে তুলনামূলক কম সংখ্যক গণপরিবহণ চলাচল করছে। তবে একই রুটের আরেকটি বাসের সঙ্গে পাল্লাপাল্লি নিয়ে সড়কে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা গেছে আগের মতোই। আবার নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী সড়কে অর্ধেক সংখ্যক বাস চলাচল করায় সকালে গণপরিবহন সঙ্কটে পড়েছেন যাত্রীরা। এছাড়া সড়কে ব্যাপক সংখ্যক সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঢাকা টু চিটাগাং রোডের রায়েরবাগ এলাকায় কথা হয় শহিদুল ইসলাম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিধিনিষিধের মধ্যে বেশকিছু চাকরিজীবীর হোম অফিস ছিল। যাদের সশরীরে অফিস করতে হয়েছে তারা বিভিন্নভাবে অফিসে পৌঁছেছে। এখন থেকে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার কারণে সবাই অফিসে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল বের হয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন অর্ধেক চালুর কারণে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

এই সড়কে চলাচলকারী হিমালয় নামের একটি বাসের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কে মানুষের সংখ্যা বেশি। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক বাস চলাচল করছে। এতে করে যাত্রীরা গণপরিবহন সঙ্কটে ভুগছে। অনেক বাসের গেট লাগানো তাই যাত্রীরাও গাড়িতে উঠতে পারছে না। সবকিছু খুলে দিয়ে অর্ধেক বাস চালুর সিদ্ধান্তের কারণ কী, এটা আমরা জানি না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবে দেখা যায়, গতকালও সারা দেশে ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৯৮ জন। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৪২০ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৪২ জন। এর আগে মঙ্গলবার ২৬৪, সোমবার ২৪৫, রোববার ২৪১, শনিবার ২৬১, শুক্রবার ২৪৮, বৃহস্পতিবার ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়। গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এ দিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই করোনায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ জন করে মারা যাচ্ছেন করোনায়। আর আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এ অবস্থায় সবকিছু খুলে দেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা এবং সঠিকভাবে সকলকে মাস্ক পরিধান করানো গেলে আমরা এ যাত্রায় হয়তো উতরে যেতে পারি। নাহলে সমস্যা আরো বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ