Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরীমণি-মৌ-রাজ ফের রিমান্ডে

ডাক না পেলে আতঙ্কের কিছু নেই : সিআইডি প্রধান আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে, আর আপনারা হাসছেন : আদালত প্রাঙ্গণে পরীমণি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর মামলায় প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের ছয়দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এছাড়া বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় পরীমণির সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দিপুর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রাজের সহযোগি সবুজ আলীকেও ৬ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে বনানী থানার পৃথক দুই মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড শেষে চার আসামিকে আদালতে হাজির করে তদন্ত সংস্থা সিআইডি। মাদকের পৃথক ২ মামলায় এ চার আসামির আবার ৫ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। এছাড়া রাজ এবং সবুজের বনানী থানার পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় আরও ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। পরীমণির পক্ষে অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান এবং রাজ ও সবুজের পক্ষে এস এম আক্তার-উজ্জামান (হিমেল) রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মাদক মামলায় পরীমণি ও দিপুর ২ দিন এবং রাজ ও সবুজের মাদক মামলায় ২ দিন ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। গত ৫ আগস্ট এ চার আসামির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল মাদকসহ গ্রেপ্তার মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে আবার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
অন্যদিকে সিআইডি প্রধান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, পরীমণি, পিয়াসা ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ ছয়জনের বাসায় অভিযান চালিয়ে জব্দ ছয়টি দামি গাড়ির প্রকৃত মালিক কারা, সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে সিআইডি। মাদক মামলায় দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শুনানি শেষে বেরিয়ে লিফটে উঠার আগে উৎসুক জনতাকে উদ্দেশ্য করে চিত্রনায়িকা পরীমণি বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে আর আপনারা হাসছেন।
সিআইডির ডাক না পেলে আতঙ্কের কিছু নেই:সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, জব্দ গাড়িগুলোর প্রকৃত মালিক কারা, তা বিআরটিএর কাছে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ছয়টি গাড়ির মধ্যে পরীমণির গাড়িটি টয়োটা হেরিয়ার, পিয়াসার ফেরারি ও বিএমডবিøউ, নজরুল ইসলাম রাজের দুটি হেরিয়ার, শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানের ফেরারি গাড়ি রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পরীমণি, পিয়াসা, মৌ, হেলেনা জাহাঙ্গীর, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মোট ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। পরীমণিসহ তাদের মধ্যে ছয়জনের বাসায় অভিযান চালিয়ে ছয়টি দামি গাড়ি, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইল উদ্ধার করেছে সিআইডি। জব্দ করা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। যারা প্রতারণা করেছেন, তাদের অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সিআইডি শুধু মাদকের মামলাই দেখছে না। এর পাশাপাশি তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব, অর্থের উৎস, কারা দিয়েছেন, কোথা থেকে সেগুলো এসেছে, সবকিছু তদন্ত করে দেখছে। সিআইডি অনেক তথ্য পেয়েছে। তবে মামলা তদন্তাধীন হওয়ার কারণে তা প্রকাশ করছে না। প্রতারক চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও বিদেশে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। যদি এ ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়, তা পরে জানানো হবে।
সিআইডির প্রধান বলেন, সামাজিক ও গণমাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আসছে, এতে নানা ধরনের কনফিউশন তৈরি হচ্ছে। এভাবে তথ্য ছড়ালে অনেকের সম্মানহানি হবে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। আমরা যদি কাউকে না ডাকি, তাহলে বুঝতে হবে তিনি ওই মামলায় রেলেভেন্ট কেউ না। পরীমণি-পিয়াসাকেন্দ্রিক মামলাগুলোর তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনেককেই ডাকা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি আশ্বস্ত করে বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের ডাকা হবে তাদের কোনো তালিকা হচ্ছে না। এ বিষয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অভিযোগের বিষয়ে কেউ এখনও লিখিত অভিযোগ করেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে সিআইডি। এ ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমেও তাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগের কথা শোনা গেলে সেসবও যাচাই করা হচ্ছে। পরীমণি-রাজকে নতুন করে রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের আরও কিছু জিজ্ঞাসা, কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কয়েকজন আসামিকে আবারও রিমান্ডে নিয়েছি।
আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে, আর আপনারা হাসছেন: পরীমণি: গতকাল মাদক মামলায় দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শুনানি শেষে বেরিয়ে লিফটে উঠার আগে উৎসুক জনতাকে উদ্দেশ্য করে চিত্রনায়িকা পরীমণি বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে আর আপনারা হাসছেন।
আদালত থেকে বের হওয়ার সময় তিন বার চিৎকার করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি বলেন, আমি নির্দোষ, আমাকে ইচ্ছা করে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এরপরই তাকে আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল পরীমণিকে দেখতে দুপুর ১২টায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছান তার নানা শামসুল হক। দুপুরে রিমান্ড শুনানিতে কাঠগড়ায় আনা হলে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় পরীমণিকে। এ সময় তাকে দেখতে এজলাসে ভিড় করেন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় আদালতের এক কর্মচারী পরীমণির ছবি তুলতে গেলে পুলিশ, আইনজীবী ও উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্যে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শুনানি শেষে পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভি বলেন, পরীমণি যেদিন গ্রেফতার হয়েছিলেন সেদিন যে পোশাকে ছিলেন এ পর্যন্ত সেই একই পোশাকে আছেন। তার পোশাক নিয়ে তার পরিবারের লোকজন পুলিশের কাছে গেলেও তারা তাকে (পরীমণির) সঙ্গে দেখা করতে দেননি। পোশাকও গ্রহণ করেননি।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ পরীমণিকে আইনজীবীদের সঙ্গেও দেখা করতে দেয়নি। তাই আজ একই কাপড়ে আবার বিজ্ঞ আদালতে এসেছেন পরীমণি। ওইদিন পরীমণির আইনজীবী বলেন, তার (পরীমণির) বাসা থেকে যে সাড়ে ১৮ লিটার মদ উদ্ধার দেখানো হয়েছে, তা তার বাসায় ছিল না। তার বাসায় কয়েকটি খালি মদের বোতল ছিল। সেগুলো ডেকোরেশন পিস হিসেবে রাখা ছিল। এগুলো জব্দ তালিকায় দেয়া হয়েছে। এছাড়া, তার কাছে কোনো আইস এবং এলএসডি ছিল না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, পরীমনি ইচ্ছা করেই কাপড় চেঞ্জ করেনি। এটা তার রাজনীতি। সব আসামি পোশাক চেঞ্জ করার সুযোগ পান। তার সঙ্গে অপর যে তিনজন আসামি আছেন, তারা সবাই কিন্তু পোশাক চেঞ্জ করেছেন। পরীমণি ইচ্ছে করেই কাপড় চেঞ্জ করেনি। তাকে কাপড় দেয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, যতটুকু জেনেছি পরীমণি কাপড় চেঞ্জ করেছিলেন। আদালতে আসার আগে আবারও আগের দিনের পোশাক পরেই এসেছেন।
রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, পরীমণিকে আগে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তার বাসায় কীভাবে মাদক এলো, তার বাসায় এসে কারা মাদক গ্রহণ করত ও এর উৎস কোথায়— এসব জানতে রিমান্ডের প্রয়োজন। এসব উদঘাটন না করতে পারলে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল সম্ভব হবে না। এর পিছনে অনেক রুই-কাতলা আছে।
পরীমণিকে দেখতে এসে আদালতে যা বললেন শতবর্ষী নানা: পরীমণির নানা শতবর্ষী শামছুল হককে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে যান পরীমণিকে দেখতে। আদালতের উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরীমণি জীবনে কিছুই করেনি। মানুষের জন্য দান করেছে। এখন সে পরিস্থিতির স্বীকার। প্রতিবছর গরিবদের জন্য গরু কোরবানি দেয়। নিজে কিছু করে নাই। যা কিছু করে মানুষকে বিলিয়ে দেয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, তার বাড়িতে খালি মদের বোতল ছিল। মাদক ছিল কি-না আমি জানি না। আল্লাহ যদি চায় তার মুক্তি হবে। মেয়েটার বাপ মা কেউ নাই। আমার কাছেই বড় হয়েছে, মানুষ হয়েছে। ওর জন্য দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম হয় না। কেউ নেই ওকে দেখার জন্য। আমার নিজেরও কিছুদিন আগে অপারেশন হয়েছে। এখনো আমি অসুস্থ। তাকে কতদিন দেখি না। তাই বাধ্য হয়েই একনজর দেখতে আদালতে এসেছি।
ফের দুই দিনের রিমান্ডে মডেল মৌ: গত ১ আগস্ট রাতে মডেল মৌয়ের মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। কথিত এই মডেলকে এরই মধ্যে দুই দফায় রিমান্ডে সাত দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মাদকসহ গ্রেপ্তার মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে আবার দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান এ আদেশ দেন। মৌকে আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় আরও পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক প্রবীণ কুমার ঘোষ। আসামির পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধীতা করেন আদালতে মোহাম্মদপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা এসআই মো. শরিফুল ইসলাম। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরীমণি-মৌ-রাজ ফের রিমান্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ