Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মানুষের উপচেপড়া ভিড়

রাজধানীতে গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনার সংক্রমণরোধে সরকার সারাদেশে গণটিকা কার্যক্রম চালাচ্ছে। আগের দিনের মতো গতকালও সকাল ৯টা থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। যেখানে নিবন্ধন ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা নেয়ার সুয়োগ রয়েছে। এই সুবিধা নিয়ে প্রথম দিনে ৩০ লাখের বেশি মানুষ টিকা পেয়েছে। প্রথম দিনের মতো ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কেউ ভোর রাতে কেউ ফজরের নামায পড়ে এসে লাইন ধরেন। মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই গণটিকা কার্যক্রম।

আগের দিনের মতোই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও প্রখর রোদে পুড়ে, কোথাও বৃষ্টিতে ভিজে টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত মানুষ। এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। দেশের কোনো কোনো এলাকার গণটিকাকেন্দ্রে ছিল অব্যবস্থাপনার অভিযোগও। এছাড়া নিয়মভেঙ্গে প্রভাবশালীদের টিকাদান, টিকা পাওয়ার আগেই টিকাদান সম্পন্ন ম্যাসেজ পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, গণটিকা কার্যক্রম সফল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারপরেও ক্যাম্পেইনে কিছু ভুল ত্রæটি থাকতেই পারে। তবে ভবিষ্যতে সেগুলো সংশোধন করা হবে।

সরেজমিন মিরপুরের ডিএনসিস’র ২ নং ওয়ার্ডের কমিউনিটি সেন্টারে সকালে গিয়ে দেখা যায়, শতশত নারী পুরুষ গায়ে গায়ে লেপ্টে টিকা পেতে অপেক্ষা করছেন। টিকা প্রার্থীদের ভীড় সামলাতে সকাল থেকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। লাইনে দাড়ানো ও সিরিয়াল ঠিক রাখতে নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা হাতাহাতি ও ধাক্কা ধাক্কি করেন টিকা প্রত্যাশিরা। ৫ নং ওয়ার্ডের জান্নাত স্কুলে টিকা নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করে অপেক্ষমানরা বলেন দলীয় নেতাকর্মীদের মুখ দেখে টিকা দেয়া হয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্র রাড্ডাতে দুপুর ১২ টার আগেই সব টিকা শেষ হয়ে যায়। অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়েও টিকা দিতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নগরির পল্লবীতে ২য় ডোজ টিকা গ্রহন না করেও অনেকের মোবাইলে ম্যাসেজ এসেছে আপনার ২ টি ডোজ সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাপ থেকে ভ্যাকসিন সনদ গ্রহন করুন। গতকাল সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পল্লবীর নগর মাতৃসদন কেন্দ্রে। ভুক্তভোগী মহসিন জানান, এই দিনে ২য় ডোজ টিকা গ্রহনের তারিখ ছিলো। সকালে এসে টিকাদান কার্ড জমা দিয়ে লাইনে দাঁড়ান। এর কিছু পরেই মোবাইলে ম্যাসেজ পান তার ২য় ডোজ টিকা গ্রহন সম্পন্ন। তিনি বলেন, এ কেন্দ্রে ৬০ জনের মতো এসেছে ২য় ডোজ টিকা নিতে। তাদের সবারই একই অবস্থা। কেউ টিকা পাননি অথচ সবার মোবাইলে ম্যাসজ এসেছে টিকা গ্রহন সম্পন্ন। পল্লবীর নগর মাতৃসদস কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর ডা. লাবিবা বলেন, গতকাল থেকে সার্ভারে সমস্যা হয়েছে। যাদের এ ধরনের সমস্যা হয়েছে তারা সরাসরি যোগাযোগ করলে সমস্যার সমাধান করা হবে।

গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে পুরান ঢাকায় কেন্দ্রগুলোতে হট্টগোল চরম আকার ধারণ করে। পর্যাপ্ত টিকা না পাওয়া ও সিরিয়াল ভঙ্গ করে পেছনের লোককে আগে প্রদান ও বেলা ২টা টিকা কার্যক্রম স্থগিত করায় কেন্দ্রগুলোতে এমন হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এছাড়া টিকা কেন্দ্রে লাইনে দাড়ানো লোকজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই ছিলনা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একজন আরেকজনের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে দেখা গেছে। পুরান ঢাকার লালবাগ, বংশাল, সূত্রপুর, কামরাঙ্গীরচর ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিএসসিসি নিয়ন্ত্রিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, ভোররাত থেকে স্থানীয় লোকজন লাইনে বসে আছে। ওখানে টিকা প্রদান খুবই ধীর গতিতে চলছিল। এছাড়া অনেকে পরে এসে আগে টিকা নেযার সুয়োগ পায়। এতে অপেক্ষমানরা কিছুক্ষণ পর পর হট্টগোল শুরু করে।

এদিকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে টোকেন প্রাপ্তদের টিকা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইসব ওয়ার্ডগুলোতে সকাল থেকে টিকা পেতে লোকজন লাইনে দাঁড়ালেও কাউন্সিলরের টিকেট প্রাপ্তরাই কেবল টিকা নিতে পেরেছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিস) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রেও মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। টিকা নিতে আসা অনেকে অভিযোগ করেন, ভোর রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকা পাচ্ছেনা, অথচ স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী লোকজন এসেই টিকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলেন, এখানে নিয়ম মানানো এবং লাইন ঠিক রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। স্থানীয়রা প্রভাব বিস্তার করে লাইনের সামনে চলে আসে। কিছু বললে হট্টগোল বাধিয়ে দেয় বলে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব বলেন, আমরা প্রথম থেকেই আন্তরিকভাবে টিকা প্রদান করছি। নির্ধারিত সময়ের পরও টিকা প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৮, ৬০, ৬১ ও ৬২ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ৬২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোস্তাক আহমেদ বলেন, মানুষ টিকা নিতে খুবই আগ্রহী। আমরা টিকা দিতে পারি ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ জনকে। অথচ মানুষ হাজির হয় ৯’শ থেকে ১ হাজার। সে কারণে অনেক মানুষ বাড়ি ফেরত যেতে হয় টিকা না দিয়ে।

রাজধানীর ডেমরায় ডিসসিসি’র ওয়ার্ড পর্যায়ে গণটিকাদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টিতে ভিজেও লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন এলাকাবাসী। সকাল থেকেই ডিএসসিসি’র ৬৪ থেকে ৭০ নম্বর ওয়াডের্র কাউন্সিলরদের সঞ্চালনায় এ কর্মসূচী পালন করা হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ জনের মাঝে টিকাদান করা হয়। এ সময় সুষ্ঠ ও শুশৃঙ্খলভাবে টিকাদানের লক্ষ্যে ঢাকা-৫ আসনের সাংসদ কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর নির্দেশনায় প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালনসহ পর্যবেক্ষণ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ডে অগ্রিম কার্ডের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে ৩’শ ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে প্রথম দিনে ১৭ জন এবং দ্বিতীয় দিনে ১৪ জন অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আইয়ুব আনছার মিন্টু। তিনি বলেন, ২৫ উর্ধ্ব ব্যক্তিদের টিকা দেয়া হলেও ৫০ উর্ধ্বদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ