পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রেফতারকৃত পরীমণি, পিয়াসা ও মৌয়ের পৃষ্ঠপোষক দশ জনের নাম বেরিয়ে এসেছে একাধিক সংস্থার তদন্তে। তাদের জব্দ করা কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপেও ওই পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এই তালিকা যেমন রয়েছেন দেশের প্রথম সারির ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য, তেমনি রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিও। তাদের কেউ কেউ প্রশাসন এবং রাজনৈতির সাথেও সম্পৃক্ত। তবে এ বিষয়ে আরো শক্তিশালী প্রমান সংগ্রহে মাঠে কাজ করছেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। অন্যদিকে গতকাল রোববার রিমান্ডে মডেল পিয়াসা ও অভিনেত্রী পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অনেকের নাম উঠে আসছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, পৃষ্ঠপোষকের মধ্যে রয়েছেন সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাদের তালিকা করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া কয়েক জনের কাছ থেকে তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কিছু নাম পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতেই শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ভুক্তভোগীদের পরিচয়ের বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ভুক্তভোগীরা মানসম্মানের ভয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ করছেন না। তবে কারা এসব মডেলদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন, অবৈধ সুবিধা দিতেন এবং অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন সেসব তদন্তে উঠে আসছে। ইতোমধ্যে পিয়াসা, পরীমনি কাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়েছে তাদের নাম বেরিয়ে আসছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী একাধিক সদস্যেরও নামও আছে এ তালিকায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, সিআইডির হেফাজতে নেয়ার পর পরীমনি, পিয়সা ও মৌকে একই রুমে রাখা হয়েছে। বাকিদের রাখা হয়েছে আরেকটি রুমে। ফ্লোরে শুয়ে রাত কাটিয়েছেন পরীমনি ও পিয়াসা। গত দুইদিন ধরে তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিআইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এই সময় মিশুর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ফেরারী মডেলের গাড়ি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তিনি গাড়িটির সিসি গোপন করে আমদানি করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। পাশাপাশি এ ধরনের আরো কয়েকটি গাড়ি তিনি আমদারী করে বিক্রিও করেছেন বলে জানান। বিক্রি করা গাড়িগুলোর মালিকদের মধ্যে রয়েছে শিল্পপতি ও ধনীর দুলালেরা। গাড়ি বিক্রি করতে ব্যবহার করা হতো পিয়াসাকে। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি অনেক মুখোশধারী ভিআইপির নাম বলেছেন। রাজও একই তথ্য দিয়ে বলেছেন, সুন্দরী তরুনী পেলে তিনি আগে তাদের ব্যবহার করে ভিআইপিদের ব্যবহারের সুযোগ দিতেন। পরীমনিও একই কারবার চালাতেন।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, আসামিরা আমাদের হেফাজতে আসার পর থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছি। তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। তবে সেগুলো তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাবে না। আমরা তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি। পরীমনি-পিয়াসাদের সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততার কথা আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারছি। এদের মধ্যে বিত্তশালী ও পদস্থ ব্যক্তিদেরও নাম পাচ্ছি আমরা। কিন্তু যাচাই বাছাই না করে এসব নাম আমরা গণমাধ্যমে বলতে পারব না। কারণ এতে অনেক নিরীহ মানুষও ফেঁসে যেতে পারেন।
পরীমনির সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সখ্যতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রতিবেদন ছেপেছে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, আমরা বিভিন্ন পেশার অনেকেরই নাম পাচ্ছি, কিন্তু সেগুলো এখনই বলা যাবেনা। আমরা একটা বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে মাথায় রেখে তদন্ত কাজ চালাচ্ছি, সেটি হলো যেহেতু অনেকগুলো মামলা এবং অনেক তথ্যের ছড়াছড়ি সেজন্য অনেক নিরপরাধ মানুষ ফেঁসে যেতে পারেন। সেটি যেন না হয় সেজন্য আমরা কোনো ধরনের তাড়াহুড়া করছিনা। ধারাবাহিকভাবে আমরা তদন্ত কাজ এগিয়ে নেবো।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আমরা চাই না অযথা শুধুমাত্র একটি নাম বলে দিয়ে কাউকে হয়রানি করা হোক। আমরা দেখছি কিছু গণমাধ্যম বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করে সংবাদ প্রচার করছে। এমনকি আজও (রোববার) একটি স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকা সিআইডির রেফারেন্স দিয়ে কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেছে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই সিআইডির কোনো কর্মকর্তা এসব তথ্য দেননি। এভাবে খবর প্রকাশ করা খুবই দুঃখজনক। ব্যাংক এমডি-চেয়ারম্যানদের সংশ্লিষ্টতা তদন্ত হচ্ছে।
পরীমনি-পিয়াসাদের বø্যাক মেইলিংয়ের শিকার এমন কোনো ভিকটিম অভিযোগ করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক জানান, এখন পর্যন্ত কোনো ভিকটিম অভিযোগ করেননি। তবে কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সে অনুযায়ী তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও তথ্যের প্রয়োজন হলে আসামিদের আবার রিমান্ডে নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মামলাগুলোর দাযিত্ব পাওয়ার পর ছয়জন আসামির বাসায় আমরা তল্লাশি চালিয়েছি। তল্লাশি চালিয়ে আমরা কিছু আলামত কিছু ডিভাইস উদ্ধার করেছি। আমরা কয়েকটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার পাসপোর্টসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করেছি। সেইসঙ্গে পুলিশের হেফাজতে থাকা একটি ফেরারি গাড়ি আমরা নিয়ে এসেছি, যেটা মিশু হাসানের কাছ থেকে র্যাব জব্দ করেছিল। তদন্তের অংশ হিসেবে আমরা আসামিদের বাসায় এই তল্লাশি অভিযান চালিয়েছি। আরও কোনো আলামত পাওয়া যায় কিনা সে চেষ্টাই আমাদের ছিল। আমরা প্রতিটি বাসা থেকেই কম বেশি অনেক আলামত জব্দ করেছি, যেটি তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা যাবে না।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, আমরা যে মামলাগুলো তদন্ত করছি তা প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত। অন্য বিষয়ে তথ্য বা অভিযোগ এলে বা থেকে থাকলেও আমরা আমলে নেব। সিআইডির হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে থাকা ছয় আসামির বিরুদ্ধেই মাদক রাখা ও পার্টির নামে জিম্মি ও বø্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। পরীমণির বাসায় তল্লাশি অভিযানে কী জব্দ করা হয়েছে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, অনেক কিছুই জব্দ করেছি। তা ফরেনসিক করা হচ্ছে। পরীমণিসহ ৬ আসামির বø্যাকমেইল ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেবে না সিআইডি।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, পরীমনি ও পিয়াসার মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাইবাছাই করছে সিআইডি। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডও উদ্ধার হয়েছে। সিআইডি তাদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসআপ ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন থেকে প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির অডিও রেকর্ড ও ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজ ও অডিও রেকর্ড দিয়ে পরীমণি ও পিয়াসা প্রভাবশালীদের বø্যাকমেইল করতেন বলে সূত্রে জানা যায়। চিত্রনায়িকা পরীমণি, কথিত মডেল পিয়াসা, মৌ, প্রযোজক রাজ, হেলেনা জাহাঙ্গীর ও মিশুর বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করছে সিআইডি।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী রিমান্ড শেষে কারাগারে: পল্লবী থানার প্রতারণার মামলায় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে স¤প্রতি বহিষ্কৃত ‘বিতর্কিত’ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম দুই সহযোগী হাজেরা খাতুন ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসীর আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো.আল হেলাল দুই আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এডিসি গোলাম সাকলায়েনের তদন্ত ধীরগতি: বোট ক্লাবের ঘটনায় পরীমনির করা মামলা তদারকি করতে গিয়ে সম্পর্কে জড়ান ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম সাকলায়েন শিথিল। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর শনিবার তাকে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে সরিয়ে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে বদলি করা হয়েছে। মামলা তদারকির সময় পরীমণির সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাকলায়েন। এমনকি রাজারবাগে পুলিশ কর্মকর্তাদের সরকারী বাসভবনে পরীমণিকে নিয়ে ১৮ঘন্টা সময় কাটান ওই কর্মকর্তা। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এডিসি গোলাম সাকলায়েনের বিষয়ে ডিবি থেকে অন্যত্র বদলি করা ছাড়া আর কোন উদ্যোগ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পরীমণির সাথে এডিসি গোলাম সাকলায়েনের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এটির তদন্ত চলছে ধীরগতিতে। গোলাম সাকলায়েনের কর্মকান্ডে পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে এ ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ততার হার কমে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) হায়দার আলী জানান, পরীমনির সঙ্গে ডিএমপির এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিলের ‘প্রেমের সম্পর্ক’ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দপ্তরের একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সিআইডির একজন সদস্য ও ডিএমপির একজন সদস্য রয়েছেন। তবে কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কয়দিনের মধ্যে জমা দেবে তা জানাতে পারেননি ওই সূত্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।