Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনায় ৪ মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙ্গচুরের ঘটনায় মামলা, আটক ১০

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২১, ৪:২৫ পিএম

খুলনা রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে শুক্র ও শনিবার চারটি মন্দির, ছয়টি দোকান এবং দুইটি বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে। আজ রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খুলনা রেঞ্জের দু’ জন ডিআইজি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

শিয়ালি পুরাতন জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা নাজিম উদ্দিন বলেন, ৬ আগস্ট (শুক্রবার) এশার নামাজ চলাকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষ ও নারীরা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মসজিদের সামনে দিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় বের হয়ে নামাজের সময় তাদের শব্দ না করার জন্য অনুরোধ করি। তখন তাদের একজন আমাকে ধাক্কা দেন। এতে মুসল্লি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। রাতেই সে ঘটনা শেষ হয়ে যায়। এরপর কে বা কারা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গচুর চালায়।
পূজা উদযাপন পরিষদ রূপসা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল সেন বলেন, হামলায় চারটি মন্দিরের ১০টি প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। এলাকায় এখন চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৬ আগস্ট রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নামসংকীর্তনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র এ হামলার ঘটনা ঘটে। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ইমামের ওপর কোনও হামলা করেনি।
স্থানীয়রা জানান, শেখপুরা, বামনডাঙ্গা এবং চাঁদপুর এলাকার শতাধিক যুবক সংঘবদ্ধভাবে শনিবার সন্ধ্যায় শিয়ালি মহাশ্মশান মন্দিরে হামলা চালায়। তারা সেখানকার প্রতিমা এবং শ্মশানের যাবতীয় উপকরণ ভাঙচুর করে। এরপর তারা শিয়ালি পূর্বপাড়া এলাকায় হামলা চালায়। এসময় পূর্বপাড়ার হরি মন্দির, শিয়ালি পূর্বপাড়া দূর্গা মন্দির এবং শিবপদ ধরের গোবিন্দ মন্দিরের সব প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। দুর্বৃত্তরা স্থানীয় শিবপদ ধরের বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর হামলাকারীরা বলাই মল্লিকের দোকান ও বাড়ি, অনির্বাণ হীরার চায়ের দোকান, প্রিতম মজুমদারের মেশিনারিজের দোকান, গনেশ মল্লিকের ওষুধের দোকান, শ্রীবাস মল্লিকের মুদি দোকান এবং সৌরভ মল্লিকের মুদি দোকান ভাঙচুর করে।
ঘটনার পর শনিবার রাতে খুলনার পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

হামলা ও ভাঙ্গচুরের এ ঘটনায় আজ রোববার রূপসা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শক্তিপদ ধর ২৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরো দেড় থেকে দুই শ’ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ এজাহারভুক্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম জানান, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। আইন শৃংখরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্ররে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন জানান, মামলা দায়েরের পর ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে মামলার আসামিদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে। গ্রেফতার অভিযান চলছে। তিনি আরো জানান, আজ রোববার সকালে খুলনা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম ও মো. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় এলাকাবাসীকে অনাকাঙ্খিত এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ