Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কাজের সন্ধানে ক্যাম্প ছেড়ে লোকালয়ে রোহিঙ্গারা, একমাসে ৩৭০ জন আটক

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২১, ১:৩৮ পিএম

মানবিক কারণেই ক্যাম্প ছেড়ে কাজের সন্ধানে বাইরে আসছে রোহিঙ্গারা। গত একমাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ৩৭০ জন রোহিঙ্গা।

চলমান কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে রামু উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা অস্থায়ী চেকপোষ্ট তাদের আটক করা হয়। সেই চেক পোষ্টে দায়িত্বরত চৌকিদার, রোভার স্কাউটস, বিজিবি, পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর হাতে গেল কয়েক সপ্তাহ ব্যবধানে আটক হয়েছেন ৩৭০ রোহিঙ্গা। কাজের সন্ধ্যানে তারা ক্যাস্প থেকে এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছিল বলে জানা গেছে।

গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে রামুতে দফায় দফায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আটকের এই ঘটনা ঘটেছে। গেল ৭ ই জুলাই বুধবার থেকে ০৪ আগষ্ট বুধবার বিকেল পর্যন্ত সর্বমোট ০৯ দফায় রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা, ফতেখাঁরকুল, রশিদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩৭০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, রশিদনগর ইউনিয়নের প্রবেশমুখ, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বাইপাস ফুটবল চত্বর থেকে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে আটক হওয়া উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ২ নং ক্যাম্প এলাকার নুর কাছেমের পুত্র মাহমুদুর রহমান জানান, তারা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত খাবার আর নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচ্ছেন না। তাই তারা নিরুপায় হয়ে পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অধিক টাকা রোজগারের আশায় ক্যাম্প ছেড়ে কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন। যদিও তারা স্বীকার করেছেন- ‘ক্যাম্প ছেড়ে আসাটা অন্যায় হয়েছে’। তারা প্রায় সময় কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও চটগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাটির জোগালি, ধান রোপন সহ বিভিন্ন কাজ করছিল, লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ হওয়াতে তারা ক্যাম্পে যাত্রা করেন। আবার কেউ কেউ কাজের সন্ধানে ক্যাম্প থেকে ওই এলাকার উদ্যেশে যাত্রা করেন। কাজ শেষে অবশ্য তারা আবার ক্যাম্পে ফিরে যায় বলেও জানান তিনি।

প্রাপ্ত সুত্রমতে জানা যায়, গত জুলাই মাসের ৭.১২.১৯.২৫.২৬.২৮ তারিখ বুধবার পর্যম্ত প্রর্যায়ক্রমে ০৫.০৪.১৯.৭৮.১৩৯.১৯.২৫ সর্বমোট ২৮৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী আটক করা হয়। সর্বশেষ আগষ্ট মাসের ৩ ও ৪ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৭০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উপজেলার বিভিন্ন স্থান হতে আটক করা হয়। তাছাড়া ৩৭০ জনের মধ্যে ৮০% রোহিঙ্গা জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান হতে আটক করা হয়।

সুত্র মতে রামু উপজেলা ও ঈদগাঁও উপজেলার কতিপয় দালাল মিডিয়া হিসাবে কাজ করে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে নিয়োগ করে তাকে। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন সময় এই রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মে লিপ্ত করারও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে প্রায়ই রামুতে রোহিঙ্গা আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় অনেক সচেতন বাসিন্দা। রামুর স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া জানান, প্রতিবার রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে আসতে পারার কারণ হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা। পাশাপাশি স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এখানে জড়িত। বর্তমানে এই দেশে নাগরিক হয়ে গেছে এমন অনেক রোহিঙ্গারা এটির সঙ্গে জড়িত বলেও জানান তিনি।

কিভাবে এতো রোহিঙ্গা শরণার্থী নিরাপত্তা চৌকির চোখ ফাঁকি দিয়ে রামুসহ লোকালয়ে প্রবেশ করছেন জানতে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ্‌ রেজওয়ান হায়াত এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকার পরেও কিভাবে তারা ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রনয় চাকমা জানান, আটক রোহিঙ্গাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের কাউকে ০১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। আবার তাদের অনেককেই জরিমানা আদায় করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমান আদায় করা হয়েছে। আটক রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে কৌশলে পালিয়ে কাজের সন্ধানে কক্সবাজারের চকরিয়া, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, পটিয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছিলো বা ওদিক থেকে রামুর সীমানা পার হচ্ছিলো বলে তিনি জানান।

এদিকে রামুতে কয়েক দফায় রোহিঙ্গা আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন রোহিঙ্গাদের চলাচল রামুর সার্বিক নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে জানান তারা।

এদিকে ক্যাম্পের বাহিরে রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত করার জন্য ক্যাম্পসমুহের চার পাশে কাঁটা তারের ঘেরা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাঁটা তারের ঘেরা দেয়া প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন।এছাড়াও আগে ক্যাম্পের বাহিরে পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও এখন রোহিঙ্গাদের অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এপিবিএন এর ক্যাম্প করা হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরেই। তার পরেও রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়া যেমন উদ্বেগের বিষয়। তেমনি রোহিঙ্গাদের পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে কাজের সন্ধানে ক্যাম্পের বাইরে আসা একপ্রকার মানবিক ব্যাপার বলেই মনে করেন অনেকেই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ