পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার সূর্য নারায়নপুর গ্রামের পাতুর ছেলে আল মামুন। গত কয়েকদিন আগে বিয়ে করেন দক্ষিণ পাঁকা তেররশিয়া গ্রামের মো. হোসেন আলীর মেয়েকে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও বাকি ছিল বৌভাত।
গতকাল বুধবার সকালে বৌভাতের অনুষ্ঠানে নারায়নপুর গ্রামের ২৫-৩০ জন বরযাত্রী নৌকাযোগে আলিমনগর ঘাট এলাকা থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের বিশরশিয়া এলাকায় বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় পদ্মা নদীর নয় রশিয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছালে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বরযাত্রীরা ঘাটের টিনের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই ১৬ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বজ্রপাতে নিহতদের উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় বরের ১২ স্বজন হলেন বাবা সদর উপজেলার জনতার হাট গ্রামের শরিফুল ইসলাম (৪২), চাচাতো ভাই ধুলু মিয়ার ছেলে মো. সজিব (২২), দুলাভাই গোঠাগ্রামের মো. সোহবুল (৩৫), ফুফু বেলিয়ারা বেগম (৩৪), ফুপা টিপু সুলতান (৪০), মহারাজনগর ডাইলপাড়া গ্রামের নানা মো. তোবজুল (৭০), নানি জমিলা বেগম (৬০), খালা লেতন বেগম (৪৫), মামা মো. সাইদুল (৪০), মামি টকিয়ারা বেগম (৩০), মামাতো ভাই মো. বাবু (১৫) ও খালাতো ভাই মো. বাবলু (২২)।
বরপক্ষের অপর চারজন হলেন জনতার হাট গ্রামের মো. আলম (৪৫), মো. পাতু (৪০), মো. শাহালাল ওরফে বাবুর স্ত্রী মোসা. মৌসুমী (২৫) ও পাশের সুন্দরপুর গ্রামের সেরাজুল ইসলামের ছেলে আসিকুল ইসলাম (২৪)। বরপক্ষের বাইরে মো. রফিক (৫০) নামে ফেরিঘাটে উপস্থিত শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা গ্রামের একজন মারা যান। এবং একজনের নাম তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি।
বৌভাতের অনুষ্ঠানে এমন আনন্দের উপলক্ষ মুহূর্তেই রূপ নেয় শোকে। হঠাৎ বজ্রপাতে বাবাসহ একসঙ্গে ১৭ স্বজনকে হারানোর শোকে দিশেহারা বর মো. মামুন। নিহত ও আহতদের দ্রæত নিয়ে যাওয়া হাসপাতালে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে হাসপাতালসহ গ্রামের বাড়িতেও। স্থানীয়রা বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে এক সাথে এত মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন মাস্টার জানান, সদর উপজেলার নারায়ণপুর থেকে বউভাতের অনুষ্ঠানে আসার পথে বৃষ্টি শুরু হলে নৌকার সবাই নদীর ধারে একটি অস্থায়ী ছাউনির নিচে আশ্রয় নেন। এ সময় সেখানে হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হলে ঘটনাস্থলেই ১৫ থেকে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
বরপক্ষের আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার দিন আগে সদর উপজেলার জনতার হাট গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে মো. মামুনের সঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের তেরোরশিয়া গ্রামের হোসেন আলীর (৫৫) মেয়ে সুমি খাতুনের (১৮) বিয়ে হয়। গতকাল বর ও কনেকে আনতে পদ্মা নদী দিয়ে নৌকায় করে কনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন বরপক্ষের লোকজন। দুপুর ১২টার দিকে তারা পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ফেরিঘাটে পৌঁছান। বৃষ্টির কারণে নৌকা থেকে একে একে নেমে ঘাটের পাশে ছাউনির নিচে আশ্রয় নিচ্ছিলেন তারা। এ সময় বজ্রপাত হয়। ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুন নাহার নাসু জানান, বজ্রপাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ১২ জনের মৃত্যু দেহ আছে। আর হাসপাতালে আহত ১৩ জনের মধ্যে ১ জনের অবস্থা গুরুতর হলে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল-রাব্বি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ও শিবগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ হোসেনসহ অন্যরা।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দাফনের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে। এদিকে এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। বুধবার এক শোক বার্তায় এই শোক প্রকাশ করেন তিনি। শোক বার্তায় রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, কোন পরিবারে কতজন মারা গেছে সেটা যাচাই বাচাই করে প্রত্যেক মৃত্যু ব্যক্তি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের চিকিৎসার সব খরচ বহন করা হবে জেলা প্রশাসন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।