Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন ঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সত্যের দিশারী?

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

উত্তর : মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহ মানব জাতির হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনের সূরা আলে-ইমরানের ১৬৪ নং আয়াতে আছে, “আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে রাতের বেলা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন। একবার কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় সর্দার আবু সুফিয়ান বিন হারব, আবু জাহল বিন হিশাম ও আখনাস বিন শুরাইক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিলাওয়াত শুনতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। তারা রাতের বেলা গোপনে বাসস্থান থেকে বেরিয়ে আসে। তিনজন পৃথকভাবে অতি সন্তর্পনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়। প্রত্যেকে একে অপরের ব্যাপারে অনবহিত ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের কাছে পৌঁছে তারা তিনজন পৃথক পৃথক স্থানে বসে সারা রাত কুরআন তিলাওয়াত শুনতে থাকে। এভাবে সকাল হয়ে যায়। সকালে প্রত্যেকে নিজ বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার সময় পরষ্পরের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এতে তারা লজ্জিত হয় এবং একে অপরকে দোষারোপ করে। কিন্তু পরের রাতেও তারা পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত শুনার আকর্ষণে উৎসুক হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের কাছে যায় এবং তিনজন তিন কোনায় বসে তিলাওয়াত শুনতে থাকে। খুব ভোরে ফিরতি পথে তিনজনের দেখা হয়ে যায়। তখন তারা একে অপরকে দোষারোপ করে এবং এ কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলে ফিরে যায়। তৃতীয় রাতে তাদের অন্তরে পবিত্র কুরআন শোনার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পায়। তাই তিনজনই ঘরে থাকতে না পেরে আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের কাছে গিয়ে লুকিয়ে বসে পড়ে। আর সারা রাত তিলাওয়াত শুনতে থাকে। সকালে ঘরে যাওয়ার পথে আবারও তিনজন মুখোমুখি হয়ে যায়। এবার তারা একে অপর থেকে মুখ লুকাতে থাকে। এরপর পরষ্পর আর কখনো না আসার প্রতিজ্ঞা করে ঘরে ফিরে যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা আবু তালিব ঈমান না আনলেও সবসময় তিনি আল্লাহর রাসূলের সহযোগিতা করতেন। এক পর্যায়ে কুরাইশের লোকেরা আবু তালিবের কাছে এসে বলতে লাগল, ‘আপনার ভাতিজা তো সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সে আমাদেরকে মজলিসে ও ইবাদতখানায় কষ্ট দেয়া শুরু করেছে। কাজেই ওকে বাধা দিন’।

আবু তালিব আকীলকে বললেন, ‘মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাছে নিয়ে এসো’। আকীল গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘আপনাকে আমার চাচা ডাকছেন’। তিনি আসার পর আবু তালিব বলেন, ‘প্রিয় ভাতিজা তোমার গোত্রের এই লোকজন আমার কাছে এসেছে। এরা বলছে, তুমি নাকি তাদের মজলিসে ও উপাসনালয়ে তাদের মন্দ বলো। তুমি তাদেরকে কষ্ট প্রদান থেকে বিরত হও’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে ইশারা করে কুরাইশদের লোকদের বললেন, ‘তোমরা কি এই সূর্য দেখছো’? তারা বলল, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি সূর্যের একটি রশ্মিও নিয়ে আসো, তবুও আমি তোমাদের দীনের দাওয়াত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারবো না’। আবু তালিব কুরাইশ সর্দারদের বললেন, ‘আমার ভাতিজা কখনো কোনো ভুল কথা বলে না। তাই তোমরা চলে যাও’। বাস্তবিকপক্ষে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সত্যের দিশারী। তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী-রাসূলের আগমন ঘটবে না।

উত্তর দিচ্ছেন : মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ