Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামে করোনায় বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিতে বিপাকে মানুষ

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২১, ৩:১৪ পিএম

বন্যা প্রবণ কুড়িগ্রামের নদ-নদী তীরবর্তী মানুষ প্রতিবছর বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্ততি নিয়ে থাকে। কিন্তু এবারে মহামারী করোনা আর লকডাউনের কারণে শ্রমজীবী মানুষ পরেছে চরম বিপাকে। কাজ নেই, জমানো অর্থও শেষ হয়ে যাচ্ছে ফলে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারছে না তারা। নিজেদেরকে সপে দিয়েছে ভাগ্যের উপর। অপরদিকে জেলা প্রশাসন বলছে বন্যা মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৬টি নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম জেলায় রয়েছে-৩১৬কিলোমিটার নদী পথ। প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ী ঢলের কারণে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যায় প্রায় ৪/৫ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পরে যায়। এছাড়াও রয়েছে আগ্রাসী নদী ভাঙন। ফলে নদ-নদী তীরবর্তী মানুষের দুর্দশা যেন সারা জীবনের। প্রতিবছর বন্যার পূর্বে লোকজন আগাম প্রস্ততি নেয়। ঘরবাড়ী মজবুত করে। আলগা চুলা, ঔষধপত্র, শুকনো খাবার ও জ্বালানী সংগ্রহ করে। পর্যাপ্ত চাল-ডাল ঘরে রাখে। কিন্তু এবার অতিমাত্রায় করোনা আর লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষকে ঘরে বন্দি থাকতে হচ্ছে। ফলে কাজ না থাকায় উপার্জনও কমে গেছে। এরফলে হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় আগাম প্রস্তুতির কাজে হাত দিতে পারছে না তারা। অপেক্ষা করছে বন্যা বুঝে ব্যবস্থা নিবে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের শেখ পালানু গ্রামের আবুল হোসেন, আশরাফ আলী ও মমেনা বেগম জানান, লকডাউনের কারণে ঢাকায় কাজ করতে যেতে পারি নাই। যা টাকা নিয়ে আসা হয়েছে, তাই দিয়ে সংসার চলছে। ঘরবাড়ী মেরামত করাতে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরফারাজী পাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আশরাফুল, আবুল হোসেন, বক্কর ও মজিবর জানান, আমরা করোনা, নদী ভাঙন আর লকডাউনের কারণে খুব খারাপ অবস্থায় আছি। গত বন্যায় বাড়ীঘর দুর্বল হয়ে গেছে। বেড়াগুলা ঠিক করা দরকার কিন্তু টাকা খরচ করতে ভয় হচ্ছে। যদি লকডাউন শেষ না হয়, তাহলে আমাদেরকে ভীষণ বিপদের মধ্যে পরতে হবে।
এই ইউনিয়নের মেম্বার রিপন মিয়া জানান, এবার অনেকের ডিঙি নৌকা শুকনো জায়গায় পরে আছে। মেরামত করার অর্থ নেই। ফলে বন্যায় পারাপারে খুব সমস্যা হবে।
বেসরকারি এনজিও কর্মী আব্দুল মালেক জানান, লোকজন আগাম প্রস্ততি নেয়ার এবার কোন সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা লকডাউন আর করোনার কারণে বেসরকারি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম থমকে গেছে। এই সময়টিতে তারা চরাঞ্চলের মানুষদের সচেতনতামূলক নানান কার্যক্রম হাতে নেয়। বর্তমানে সব ধরণের কার্যাদি বন্ধ থাকায় এসব বন্যা কবলিত মানুষের জন্য কোন সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না।
সার্বিক বন্যার প্রস্তুতি নিয়ে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, করোনালকডাউনের কারণে মানুষ ইনকাম করতে না পেরে আগাম জিনিসপত্র কিনে রাখা, ঘরবাড়ী ঠিক করা, কিছু অর্থ সঞ্চয়ে রাখতে পারেনি। ফলে বন্যা মোকাবেলা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে উত্তরের এই জনপদে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিক নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়া শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্দ রেজাউল করিম জানান, বন্যা মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা কবলিতদের জন্য পর্যাপ্ত চাল, নগদ অর্থ উপজেলা পর্যায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে এর প্রভাব তেমনটা পরবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা পরিস্থিতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ