পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের মানচিত্রে উত্তরাঞ্চলে নতুন করে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। শহর থেকে কর্ম হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসা মানুষদের কর্মসংস্থানের অভাব সৃষ্টি হয়েছে। এতে কর্মহীনদের মাঝে হতাশা বাড়ছে। সে সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
করোনাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি করা রংপুর বিভাগের ৮ জেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। গ্রামেও এখন তেমন কাজ নেই। রাজধানী থেকে এসে এসব মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার কাজ না থাকায় গ্রামে গ্রামে তাস খেলা, জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ছে। এতে অপরাধ প্রবণতা যেমন বাড়ছে, তেমনি হাজার হাজার পরিবারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। রংপুর বিভাগের বেশ কয়েকটি উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তর ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের আখড়া’-এই প্রবাদটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার গ্রামাঞ্চলে। মহামারী করোনা নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় লকডাউনে চাকরি হারিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বেকার বসে আছেন অসংখ্য তরুণ-যুবক। কাজ না থাকায় এসব তরুণ-যুবক বেকার বসে থেকে তাস, লুডু, মোবাইল গেম, ক্যারামবোর্ড খেলাসহ পরোক্ষভাবে জুয়া ও নানা প্রকার অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন এসব তরুণ-যুবক। এর ফলে গ্রামে গ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনে রংপুরের প্রতিটি গ্রামেই বাড়তি মানুষের চাপ বেড়েছে। দফায় দফায় লকডাউনের কারনে দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অফিস বন্ধ থাকায় কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কাজ না থাকায় স্বল্প আয়ের এসব মানুষ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। গ্রামে কম বেশি প্রতিটি বাড়িতেই বাড়তি মানুষের চাপ পড়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারে ইতোমধ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দিন এনে দিনে খাওয়া নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর হাতে কাজ না থাকায় ইতোমধ্যে তারা খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। তার ওপর পরিবারে বাড়তি লোকের চাপ তাদেরকে চরম বেকায়দায় ফেলেছে। গ্রামেও কাজ না থাকায় তাস-লুডু খেলেই দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত তরুন-যুবকরা।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে শিল্প-কারখানা না থাকায় এ অঞ্চলের একটা বিশাল জনগোষ্ঠি রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছোট-খাট চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। করোনা মহামারীতে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। কর্ম হারিয়ে বিশাল অঙ্কের এই জনগোষ্ঠি বাধ্য হয়ে গ্রামে চলে এসেছে। গ্রামে এসে কোন কাজ না পেয়ে অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অটোরিকশা কিনে মোটামুটি দিন পার করছিল। কিন্তু দফায় দফায় লকডাউনে তাদের সে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের সঞ্চয় ইতোমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। এমনিতেই বর্ষা মওসুমে গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত-খামারে তেমন কাজ থাকে না। হাতে কাজ না থাকায় একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে এসব পরিবারের সদস্যরা। অভাব-অনটনে পড়ে জীবিকার তাগিদে অনেকেই অসৎ পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিটি পরিবারের কর্মহীন যুবকদের মনে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি থানার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ইদানিং তাস ও লুডু খেলার প্রবণতা বেড়ে গেছে অনেকাংশে। রাস্তায় চলতে গিয়েও এরক দৃশ্য চোখে পড়ছে হরহামেশাই। স¤প্রতি মোটরসাইকেল যোগে বদরগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়নে যাবার প্রাক্কালে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি আম বাগানে গাছের নিচে ৩/৪টি করে তাসের আড্ডাখানা। এসব আড্ডাখানায় ৪ জন মিলে খেললেও আরও ৪/৫ জন দর্শক হিসেবে গাদাগাদি করে বসে আছে। একইভাবে লুডু খেলার একাধিক দৃশ্যও চোখে পড়ে। শুধু আম বাগানেই নয়, বড় বড় গাছের নিচে, রাস্তার ধারে টং-এ বসে, হাট-বাজারে বন্ধ থাকা চায়ের দোকান, চৌকিতে বসে এভাবে তাস ও লুডু খেলতে দেখা গেছে। তাস ও লুডু খেলা ছাড়াও নতুন যোগ হয়েছে মোবাইল গেম। এই মোবাইল গেম খেলে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। খেলার টাকা যোগাড় করতে অসৎ পথও বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। গ্রামের তরুণ, যুবকসহ মাঝ বয়সীদের প্রায় সকলেই এসব খেলা খেলতে খেলতে পরোক্ষাভাবেই জড়িয়ে পড়ছেন জুয়া খেলায়। যার কারণে সমাজের নানা স্তরে বিভিন্ন প্রকার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঝগড়া, অশান্তি লেগেই আছে প্রতিটি পরিবারে।
রংপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে অভাবী এলাকা হিসেবে পরিচিত গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া এবং পীরগাছা উপজেলা। এলাকায় তেমন কাজ না থাকায় করাল গ্রাসী তিস্তার ভাঙনে সর্বশান্ত হওয়া এই তিন উপজেলার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যরা আয়ের উপার্জনের তাগিদে থাকতেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। সেখানে তারা কৃষি শ্রমিক, চা শ্রমিক, রিকশা শ্রমিকসহ নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, কেউবা কাজ করতেন পোশাক কারখানায়। কিন্তু বর্তমান করোনাকালে সেখানে কারোরই আর কাজ মিলছে না। চাকরি হারিয়ে বাধ্য হয়ে তারা ফিরে এসেছেন নিজ গ্রামে। এলাকায় কাজ না থাকায় বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব লোকজন।
ঢাকার নারায়ণগঞ্জে একটি গার্মেন্টস এ কাজ করতেন গঙ্গাচড়া থানার কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাঝ বয়সী যুবক জাহাঙ্গীর। শিক্ষায় গ্রাজুয়েশন করা। করোনায় ওই প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের করণে চাকরি হারান তিনি। কথা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর জানান, ঢাকায় চাকরি করে কোন রকম সংসার চলছিল। এখন অনেক কষ্টে আছি।
পীরগাছা উপজেলার নেকমামুদ এলাকার নাজমা বেগম ঢাকায় একটি বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। করোনা আতঙ্কে বাড়িওয়ালা তাকে কাজ থেকে বাদ দেয়ায় নিজ এলাকায় ফিরে এসেছেন। স্বামী পরিত্যক্ত এই নারী এক সন্তান নিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
গঙ্গাচড়ার ল²ীটারী ইউনয়নের ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া জানান, এই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি চর আছে। তার মধ্যে জয়রাম ওঝা নামের এই চরে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবারের বসবাস। জীবিকার তাগিদে প্রায় ৬শ’ পরিবারের প্রধানই বছরের বেশিরভাগ সময় থাকেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কাজ না থাকায় বর্তমানে তারা সবাই বাড়িতে ফিরে এসেছেন। বেকার হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন তারা।
এদিকে, দফায় দফায় লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন বন্ধ থাকায় পরিবহন সেক্টরের একটা বিশাল জনগোষ্ঠি বেকার হয়ে আছে। পাশাপাশি হোটেল শ্রমিক, দর্জি শ্রমিক, স্বর্ণ শ্রমিক, ঠেলাগাড়ি শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক, দোকান শ্রমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিকদের বিশাল একটা সংখ্যা প্রায় ৩ মাসের অধিক সময় ধরে বেকার হয়ে পড়ে আছে। এসব পরিবারে সাধারণত ২/৩ দিনের বেশি খাবার মজুত থাকে না। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বেকার থাকায় এসব পরিবারের মাঝে হাহাকার পড়ে গেছে। এসব পরিবারের কর্তা ব্যক্তিরা বাধ্য হয়েই বিভিন্ন পন্থা বেছে নিচ্ছেন।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপ থেকে জানা গেছে, করোনা ক্রান্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি করা রংপুর বিভাগের আট জেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এসব মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এতে দেশের মানচিত্রে উত্তরাঞ্চলে নতুন করে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। শহর থেকে কর্ম হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসা মানুষদের কর্মসংস্থানের অভাব সৃষ্টি হয়েছে। এতে কর্মহীনদের মাঝে হতাশা বাড়ছে। সে সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এখন সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া কেউই ভালো নেই। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রায় দুই কোটি মানুষ চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছেন। বিশেষ করে কর্ম হারিয়ে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলে দুই লক্ষাধিক মানুষ ফিরে আসার বিষয়টি বেশ হতাশাব্যঞ্জক। কর্মহীন মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলে বড় ক্ষতি হবে। সেজন্য কৃষিনির্ভর এই এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন করে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।