Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতারণা করে টাকা নেয়াই ছিল উদ্দেশ্য

রংপুরে অক্সিজেন সিলিন্ডার চুরি

রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভুয়া চালানের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচারের চেষ্টার ঘটনায় দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- পাবনা সদর থানার শ্রীপুর পারচিথুলিয়া গ্রামের শাহিদ মেকারের ছেলে সোহেল ফকির এবং একই থানার ভাউডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে নাছিম হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, গত ২৩ জুলাই দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভুয়া চালানের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচারের চেষ্টা করে একটি চক্র। ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি থানাকে অবহিত করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনজন ট্রাকচালক ও তাদের তিন সহযোগীকে আটক করে এবং ৩টি ট্রাক জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় নিয়মিত মামলার জন্য এজাহার দাখিল করেন।
তিনি আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহ আলমসহ কোতোয়ালি থানার একটি তদন্ত টিম মামলার রহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের গ্রেফতারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
আবু মারুফ হোসেন আরও জানান, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- তারা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পর যোগসাজশে অভিনব কৌশলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন গাড়ির চালকের নিকট থেকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে দিনাজপুরের নিজপুরস্থ ট্রাক-ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের মনজুরুল আলমকে ২৩ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আসামি সোহেল ফকির নিজেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলে পরিচয় দিয়ে ফোন করেন। এ সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য সরবরাহকৃত অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার ঢাকায় প্রেরণ এবং ঢাকা হতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার আনার কথা বলে ট্রাকপ্রতি ৪০ হাজার টাকা করে তিনটি ট্রাক ভাড়া করেন সোহেল ফকির।
এদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের মনজুরুল ইসলাম বিষয়টি ট্রাকচালকদের সঙ্গে আলোচনা করলে চালকরা প্রস্তাবিত ভাড়ায় যেতে রাজি হন। এ সময় তারাও কথিত ডা. রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং ভাড়া ও গন্তব্যস্থল জেনে নেন। অতঃপর ট্রাকচালকরা শ্রমিক ইউনিয়ন হতে ট্রাক ভাড়ার চালান নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এসে কথিত ডা. রেজাউল করিমকে ফোন করেন। এ সময় প্রতারক সোহেল ফকির রংপুর মেডিকেলে আছেন এবং তাদের কাছে আসার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে প্রতারক সোহেল ফকির বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল ফ্রি করে দেয়ার কথা বলে ৩টি ট্রাকের জন্য চালকদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা একটি বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য বললে চালকরা সেই নম্বরে তিন হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। বিকাশে টাকা পাওয়া মাত্র প্রতারক সোহেল ফকির তার ফোন বন্ধ করে রাখেন।
আবু মারুফ হোসেন আরও জানান, আসামিরা ইউটিউব, ফেসবুক বা বিভিন্ন গাড়ির পেছনে থাকা মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ট্রাক ভাড়া প্রদানের জন্য দালালের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি করে ৩-৫ হাজার টাকা নিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন। এই প্রতারক চক্র গত ২-৩ বছর ধরে সারাদেশে একই উপায়ে অসংখ্য প্রতারণা করেছে। টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় অনেকেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এড়িয়ে যান।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভুয়া চালানের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচারের মামলার ঘটনায় তাদের প্রতারণার কৌশল উন্মোচিত হয়েছে। প্রতারকদের প্রতারণা হতে বাঁচতে সর্বসাধারণকে গাড়ি ভাড়া প্রদান ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ