Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে শত বছরের নৌকাহাট

মো. হাবিবুর রহমান, দেবিদ্বার (কুমিল্লা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরানো নৌকার হাট কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এ বাজারটিতে ব্যবসায়ীরা নৌকার সারিসারি স্ত‚প করে সাজাতো। বর্তমানে অল্প সংখ্যক নৌকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা এ বাজারে আসে।
পানি না হওয়ার কারণে ক্রেতাদেরও নেই আনাগোনা। বিক্রির আশায় তীর্থের কাকেরমতো বসে থাকে বিক্রেতারা। অল্প সংখ্যক বিক্রি হলেও লাভের মুখ দেখছে না ব্যবসায়ীরা। এমন চিত্রটি ফুটে ওঠেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন রামচন্দ্রপুর বাজারে। এ অবস্থায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নৌকা কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী রামচন্দ্রপুর বাজারে সাধ্যের মধ্যে সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য রয়েছে নানা ধরনের নৌকা। বড় কয়েকটি নদীতে পানি বাড়ায় ধীরেধীরে খাল বিলগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
উপজেলার ভেতর ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলা থেকে নৌকার ক্রেতা ও বিক্রেতারা আসছেন এই শত বছরের পুরানো নৌকার হাটে। জানা যায়, উপজেলার ১৭১টি খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় নৌকার ব্যবহার আগেরমতো আর হচ্ছে না। আগে নৌকা দিয়ে মানুষরা স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। আর জেলেরা নৌকা দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
এছাড়া খালের পানি দিয়ে জমি চাষাবাদ করতেন কৃষক। এখন এই খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌকার ব্যবহার তেমন হচ্ছে না। যেখানে বছরের দুই মাস রামচন্দ্রপুরের মিস্ত্রিরা ব্যস্ত সময় পার করতেন ও নৌকা দিয়ে জেলেরা মাছ ধরতেন। এখন তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নৌকা প্রস্তুতকারক সুবল ও বিমলসহ ৪/৫জন ইনকিলাবকে জানায়, বর্ষা এলে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতাম। এখন নৌকার চাহিদা অনেক কমে গেছে। যারা নৌকা নিতে বাজারে আসছেন তারা নির্ধারিত মূল্যের চাইতে কম দাম বলছেন। অনেকেই এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করলে এবং বিভিন্ন প্রণোদনা বা সুদমুক্ত ঋণ দিলে বাঙালির ঐতিহ্য নৌকা শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। তা নাহলে নৌকা শুধু পোস্টারেই দেখা যাবে বাস্তবে থাকবে না।
রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সরকার ইনকিলাবকে বলেন, আমার দাদার কাছ থেকে এই নৌকা হাটের গল্প শুনেছি। আশপাশের ৫ উপজেলার মানুষ নৌকা দিয়ে এসে এ বাজারে ক্রয় বিক্রয় করতেন।
বর্তমানে বিভিন্ন কারণে নৌকার ব্যবহার কমে যাওয়ায় এ শিল্পটা বিলীন হওয়ার পথে। নৌকা তৈরির অনেক মিস্ত্রি ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। সঠিক প্রদক্ষেপ নিলে এ শিল্পটা টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ ইনকিলাবকে বলেন, নৌকা বাঙালি জাতির ধারক বাহক। কি ধরনের সহযোগিতা পেলে এ শিল্প টিকে থাকবে তার একটা সুস্পষ্ট ব্যাখা আমাদেরকে দেয়া দরকার। তাহলে আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে অবহিত করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ