Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ফকির আলমগীরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে। গতকাল শনিবার সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দাফন করা হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে খিলগাঁও পল্লীমা সংসদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সংস্কৃতিক কর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন।

রাষ্ট্রীয় ভাবে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গণসংগীতশিল্পীর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন ফকির আলমগীর (ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে রেখে গেছেন। করোনা আক্রান্ত ছাড়াও ফকির আলমগীরের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল।
ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। শিল্পী কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। গণঅভ্যুথান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের সামরিক শাসনবিরোধী গণআন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তার গান দিয়ে।

সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’।

ফকির আলমগীরের ইন্তেকাল এক কিংবদন্তিকে হারালো দেশ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা বলেন। গভীর শোক জানিয়ে ড. হাছান বলেন, ফকির আলমগীর শুধু গণসংগীতশিল্পীই ছিলেন না, তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। এদেশের গণসংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য লড়াই এবং আশির দশক ও নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ফকির আলমগীরের মতো শিল্পী একদিনে তৈরি হয় না। বহু বছরের সাধনায় তিনি হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি। দক্ষ সংগঠক হিসেবে গণসংগীতকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং জনপ্রিয় করে তোলায় তার ভূমিকা অনন্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ