পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র ঈদুল আজহা পালনে ৮ দিন শিথিলের পর ফের শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের এই লকডাউন শুরু হয়। রাজধানীর রাস্তা ফাঁকা এবং বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে বসেছে চেকপোস্ট। চেকপোস্টে কড়াকড়ি চলছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করতেও দেখা গেছে। সড়কে একটু পর পর টহল দিচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর গাড়ি।
রাজধানীসহ সারাদেশের পথে পথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী খুবই তৎপর। অকারণে বের হলে গুণতে হচ্ছে জরিমানা। কঠোর বিধিনিষেধে বন্ধ রয়েছে বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ সব ধরণের গণপরিবহণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাজের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয়) থেকে বাঁচতে লকডাউন কোনোভাবেই শিথিল করা যাবে না। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, এবারের লকডাউন আগের লকডাউনগুলোর তুলনায় কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। প্রতিমন্ত্রীর কথার সত্যতার আভাস মিলেছে লকডাউনের প্রথমদিনে।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই মাঠে নেমেছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। লকডাউন চলাকালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঈদুল আজহা মুসলমানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম। এ কারণে ঈদ উদযাপনের সময় মানুষের চলাচল ও পশুরহাটে কেনাবেচার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করেছিল সরকার। এ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর গতকাল সকাল ৬টা থেকে শুরু হলো কঠোর লকডাউন। এ লকডাউন বহাল থাকবে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল ঈদের আগেই।
আগের লকডাউনে গার্মেন্টস খোলা থাকলেও এবার সবকিছু বন্ধ। কঠোর লকডাউনের আওতায় রয়েছে সারাদেশ। বন্ধ রয়েছে গার্মেন্টস, শিল্প-কলকারখানাসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট বন্ধ। জরুরি সেবার দফতর বাদে অফিস-আদালত আর শিল্পকারখানাও বন্ধ রয়েছে। তবে কোরবানির পশুর চামড়া সংশ্লিষ্ট খাত, খাদ্যপণ্য এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পণ্য ও ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধের আওতায় বাইরে থাকছে। পাশাপাশি আগামীকাল রোববার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ব্যাংকিং কার্যক্রম।
রাজধানীতে লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট আসাদুর রহমান বলেন, ঈদের পর কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানী থেকে বের হওয়ার প্রবণতা লোকজনের মধ্যে কম দেখা যাচ্ছে। যেসব যানবাহনে মানুষ রাজধানী থেকে বের হচ্ছেন সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের গন্তব্য সম্পর্কে। কেউ কেউ যুক্তি দেখালেও আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেকে অযৌক্তিক বিষয় সামনে আনছেন। অযৌক্তিক বিষয়গুলো প্রতীয়মান হলে আমরা সেসব গাড়ির মালিক-চালকের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি।
ঈদের ছুটি শেষে লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার সকালে দেখা গেছে পুরান ঢাকার সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফেরা মানুষের মিছিল। গণপরিবহন না থাকায় হেঁটেই তারা গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছেন। ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষ আমিন বাজারে নেমে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, ওয়ারি, হাটখোলা, শনিরআখড়া, দয়াগঞ্জ, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, পুরান ঢাকার লালবাগ, বকশিবাজার, আজিমপুর, বঙ্গবাজার, বংশাল, ইংলিশ রোড, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, শান্তিবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ, মৎস্যভবন, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, হাইকোর্টসহ বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে রিকশা ছাড়া মানুষজনের চলাচল একেবারেই কম। ফার্মেসি আর মুদি দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকানপাটও খোলেনি।
জানতে চাইলে নিউ মার্কেট থানার ইন্সপেক্টর মো. মনিরুল হক ডাবলু বলেন, ‘আমরা পুরো এলাকা সিলগালা করে দিয়েছি। সকালে ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন এমন দুই একজনকে মানবিক দিক বিবেচনায় রিকশায় চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই এলাকায় কোনো রিকশাও চলতে দেয়া হয়নি।’
মোহাম্মদপুরের অলিগলিতে কিছু রিকশা ও ভ্যান চললেও সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। টাউন হল বাজারে মুদি দোকানসহ কিছু দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। পল্টনে দেখা গেছে সবকিছু বন্ধ। মানিকনগর বিশ্বরোডে দেখা গেছে সবকিছু বন্ধ। যে দু’চারটি দোকান খোলা রাখা হয় পুলিশ এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়।
ঈদের ছুটি শেষে শুরু হওয়া লকডাউনে বিধিনিষেধ না মেনে বাইরে বের হওয়ায় ঢাকার বাবুবাজার সেতু এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয় অনেককে। আদাবর থানার ইন্সপেক্টর ফারুক মোল্লা বললেন, ‘নানা কারণ দেখিয়ে রিকশা বের করছে। তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে। একান্তই না পারলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে (কঠোর বিধিনিষেধ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনে ২৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয় ১. ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে। ২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহণ (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ৪. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ৫. সব শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। ৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ৭. সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৮. ব্যাংকিং/বীমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজসমূহ অনলাইনে সম্পন্ন করবেন। ১০. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ/বিক্রি, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোডিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশাকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করবে। ১১. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ডভ্যান/নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ১৩. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ১৪. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। ১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। ১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। ১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে। ১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট/প্রমাণ প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে। ২০ ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। ২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। ২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ২৩. সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
জানতে চাইলে গাবতলীতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ মোর্শেদ মিশু বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যারা বের হচ্ছেন তারা যৌক্তিক কারণ না দেখাতে পারলে আমরা মামলা দিচ্ছি এবং জরিমানা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।