দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
খ. যাবিল ফুরুযের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের দ্বিগুণ কুরআন মজীদে যে সকল ওয়ারিশের অংশ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরকে যাবিল ফুরুয বলে। মোট ১২ প্রকার ওয়ারিস যাবিল ফুরুযের অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে ৪ প্রকার পুরুষ, ৮ প্রকার নারী। যাবিল ফুরুয পুরুষগণ হচ্ছে : ১. স্বামী ২. পিতা ৩. দাদা, দাদার পিতা ৪. বৈপিত্রেয় ভাই। যাবিল ফুরুয নারীগণ হচ্ছে : ১. স্ত্রী ২. মাতা ৩. দাদী, নানী, দাদীর মাতা, দাদার মাতা ৪. কন্যা ৫. পুত্রের কন্যা, পুত্রের পুত্রের কন্যা ৬. সহোদরা বোন ৭. বৈমাত্রেয় বোন ৮. বৈপিত্রেয় বোন।
গ. আসাবাতেও নারী বেশি যাবিল ফুরুযগণ তাদের অংশ নেয়ার পর অবশিষ্টাংশ যারা পায় তাদেরকে আসাবা বলা হয়। আসাবা তিন স্তরের। প্রথম স্তরে চার প্রকারের পুরুষ। দ্বিতীয় স্তরে চার প্রকারের নারী আর তৃতীয় স্তরে শুধু এক প্রকারের নারী।
ঘ. কুরআন মজীদে উল্লেখিত মীরাছের নির্ধারিত হিস্যা সর্বমোট ৬টি। আর তা হল দুই ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ এবং তিন ভাগের দুই ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ ও ছয় ভাগের এক ভাগ। এই অংশগুলো যাদের জন্য নির্ধারিত তাদের মধ্যেও নারীর সংখ্যা বেশি।
নিম্নে তফসীল দেয়া হল : দুই ভাগের এক ভাগ : বিভিন্ন অবস্থায় মোট পাঁচ প্রকারের ওয়ারিস এই অংশ পায়। তারা হচ্ছে : ১. স্বামী ২. কন্যা ৩. পুত্রের কন্যা ৪. সহোদরা বোন ৫. বৈমাত্রেয় বোন।
এদের চার প্রকারই নারী, এক প্রকার হল পুরুষ।
চারভাগের এক ভাগ : এটি পায় দুই প্রকারের ওয়ারিস : ১. স্ত্রী ২. স্বামী।
আটভাগের এক ভাগ : এটি স্ত্রীর অংশ।
তিনভাগের দুই ভাগ : মোট চার প্রকারের ওয়ারিসের জন্য এই অংশ নির্ধারিত। এরা সকলেই নারী : ১. দুই বা ততোধিক কন্যা ২. দুই বা ততোধিক পৌত্রী ৩. দুই বা ততোধিক সহোদরা বোন ৪. দুই বা ততোধিক বৈমাত্রেয় বোন।
তিনভাগের একভাগ : এটি নির্ধারিত তিন প্রকারের ওয়ারিসের জন্য। তার মধ্যে দুজনই নারী : ১. মাতা ২. বৈপিত্রেয় বোন একাধিক হলে।
ছয়ভাগের এক ভাগ : এটি মোট সাত প্রকারের ওয়ারিশের জন্য নির্ধারিত। তন্মধ্যে দুই প্রকার পুরুষ ও পাঁচ প্রকার নারী : ১. পিতা ২. দাদা ৩. মাতা ৪. পৌত্রী (একজন হলে) ৫. বৈমাত্রেয় বোন ৬. দাদী, নানী, দাদার মাতা ৭. বৈপিত্রেয় ভাই ও বোন।
নারীর অংশ নির্ধারিত থাকার সুফল : মোটকথা ইসলামী শরীয়তে নারীর হিস্যা সুসংরক্ষিত। আর নারীর অংশ নির্ধারিত হওয়ার কারণে সর্বাবস্থায় সে তার নির্ধারিত অংশ পায়। পক্ষান্তরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই স্তরের পুরুষের অংশ নির্দিষ্ট না থাকার কারণে সে কোনো অংশ পায় না। নীচের দুটি উদাহরণ লক্ষ করুন : ১. শরীফা বেগম নিঃসন্তান অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, একজন আপন বোন ও একজন বৈমাত্রেয় বোন রেখে গেছেন। তাদের মীরাছের হিস্যা হবে নিম্নরূপ : পক্ষান্তরে হাসিনা বেগমও নিঃসন্তান ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, একজন সহোদর বোন ও এক বৈমাত্রেয় ভাই রেখে গেছেন। তাদের মীরাছের হিস্যা হবে এ রকম : তাহলে দেখা যাচ্ছে, শরীফা বেগমের বৈমাত্রেয় বোন সাত ভাগের এক ভাগ তথা শতকরা ১৪.২৮৫% অংশ পেলেও ঐ আত্মীয়দের উপস্থিতিতেই হাসিনা বেগমের বৈমাত্রেয় ভাই কিছুই পায়নি।
নিকটতর ওয়ারিস থাকার কারণে যে সকল দূরবর্তী ওয়ারিস সম্পদ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয় তাদের মধ্যেও পুরুষ বেশি, নারী কম। অর্থাৎ এগার প্রকারের পুরুষ ও পাঁচ প্রকারের নারী। নিম্নে তফসীল দেয়া হল :
১. দাদা : পিতা থাকলে, তেমনি পরদাদা বঞ্চিত হয় দাদা থাকলে।
২. সহোদর ভাই : পিতা, পুত্র, পৌত্র ও প্রপৌত্রের কোনো একজন থাকলে।
৩. বৈমাত্রেয় ভাই : পিতা, পুত্র, পৌত্র বা সহোদর ভাইয়ের কেউ থাকলে, তেমনি সহোদর বোন থাকলে (যদি কন্যার কারণে বোন আসাবা হয়)।
৪. বৈপিত্রেয় ভাই : পিতা, দাদা বা পরদাদা, তেমনি ছেলে কিংবা মেয়ে থাকলে।
৫. পৌত্র : পুত্র থাকলে। তদ্রূপ প্রপৌত্র বঞ্চিত হয় পৌত্র থাকলে।
৬. ভাতিজা (সহোদর ভাইয়ের পুত্র) : পিতা, দাদা, পুত্র বা পৌত্র অথবা প্রপৌত্র কোনো একজনের উপস্থিতিতে, তেমনি সহোদর ভাই ও বৈমাত্রেয় ভাইয়ের উপস্থিতিতে।
৭. বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্র : পিতা, দাদা, পুত্র, পৌত্র বা প্রপৌত্রের উপস্থিতিতে। তেমনি সহোদর ভাই, বৈমাত্রেয় ভাই কিংবা সহোদর ভাইয়ের পুত্র থাকলে।
৮. চাচা (পিতার সহোদর ভাই) : বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্র থাকলে কিংবা বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্র, যাদের কারণে বঞ্চিত হয় তারা কেউ থাকলে।
৯. চাচা (পিতার বৈমাত্রেয় ভাই) : আপন চাচা থাকলে কিংবা আপন চাচা যাদের কারণে বঞ্চিত হয় তারা কেউ থাকলে।
১০. চাচাত ভাই (পিতার সহোদর ভাইয়ের পুত্র) : চাচা (পিতার বৈমাত্রেয় ভাই) থাকলে, কিংবা এই চাচা যাদের কারণে বঞ্চিত হয় তারা কেউ থাকলে।
১১. চাচাত ভাই (পিতার বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্র) : আপন চাচার পুত্র থাকলে কিংবা ঐ চাচাত ভাই যাদের কারণে বঞ্চিত হয় তারা কেউ থাকলে।
নারীগণ : ১. দাদী, নানী : মা থাকলে। ২. পৌত্রী : পুত্র থাকলে, কিংবা একাধিক কন্যা থাকলে (যদি পৌত্রী আসাবা না হয়)। ৩. সহোদরা বোন : পিতা, পুত্র, পৌত্র কোনো একজন থাকলে। ৪. বৈমাত্রেয় বোন : সহোদরা বোন (যখন আসাবা হয়), পিতা, পুত্র, পৌত্র কেউ থাকলে। তেমনি দুই বা ততোধিক সহোদরা বোন থাকলে (যদি তারা আসাবা না হয়)। ৫. বৈপিত্রেয় বোন : পিতা, পুত্র, কন্যা কোনো একজন থাকলে তেমনি পৌত্র বা পৌত্রী থাকলে।
এক পুরুষ দুই নারীর অংশ পায়-এটা ইসলামী উত্তরাধিকারের সর্বক্ষেত্রের নীতি নয় ইসলামের সম্পূর্ণ মীরাছ-ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয় যে, ইসলামে পুরুষকে নারীর দ্বিগুণ হিস্যা দেয়া হয়েছে। ধারণা দেয়া হয় যে, এটা মূলত নারী-পুরুষের মাঝে বৈষম্যমূলক চেতনারই প্রতিফলন। (নাউযুবিল্লাহ)
এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে চাই যে, মীরাছের হিস্যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে তা ঘোষিত হয়েছে। সুতরাং এখানে বৈষম্যের কথা সভয়ে পরিহার করা উচিত। এরপর ইসলাম-বিদ্বেষীদের প্রচারণার অসারতা বোঝার জন্য এ বিষয়ে চিন্তা করতে পারি।
ইসলামের মীরাছ-ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ধারণা দেয়া হয় যে, পুরুষকে পুরুষ হওয়ার কারণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং নারীর দ্বিগুণ দেয়া হয়েছে-এটা সম্পূর্ণ অসত্য প্রচারণা। কারণ গোটা মীরাছ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে তিনটি অবস্থা দেখা যায় : ১. নারী কখনো পুরুষের সমান অংশ পেয়ে থাকে। ২. কখনো পুরুষের চেয়ে বেশি পেয়ে থাকে। ৩. কখনো পুরুষ বেশি পেয়ে থাকে। নীচে কিছু দৃষ্টান্ত দেয়া হচ্ছে।
নারীর অংশ পুরুষের সমান : ক. দাদা-দাদী দুজনের হিস্যা ছয় ভাগের এক ভাগ। যদি মৃতের পুত্র বা পৌত্র থাকে। অর্থাৎ পুত্র ৪৫.১৬৬%, দাদী ১৬.৬৬%, দাদা ১৬.৬৬%, স্ত্রী ১২.৫%।
খ. পিতা-মাতা দুজনেরই হিস্যা ছয় ভাগের এক ভাগ। যদি মৃতের পুত্র বা পৌত্র থাকে। অর্থাৎ পিতা ১৬.৬৬%, মাতা ১৬.৬৬%, স্ত্রী ১২.৫%, ও পুত্র ৫৪.১৬৬%।
এটা কুরআন মজীদেরই বিধান। ইরশাদ হয়েছে- প্রথম উদাহরণে মৃতের কন্যার হিস্যা মৃতের স্বামীর চেয়ে এবং দ্বিতীয় উদাহরণে কন্যার হিস্যা মৃতের পিতার চেয়ে বেশি।
গ. বৈপিত্রেয় ভাই বোন একত্রে থাকলে তিন ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি উভয়ে সমান ভাগে ভাগ করে নিবে। অর্থাৎ বৈপিত্রেয় একভাই এক বোন ৩৩.৩৩%, সহোদর দুই বোন ৬৬.৬৬% পাবে।
এই বিধানটিও কুরআন মজীদে আছে। ইরশাদ হয়েছে-“যদি পিতা ও সন্তানহীন কোনো পুরুষ অথবা নারীর উত্তরাধিকারী থাকে তার এক বৈপিত্রেয় ভাই বা ভগ্নী তাহলে প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠাংশ। তারা এর অধিক হলে সকলে সম অংশীদার হবে এক তৃতীয়াংশে।” -সূরা নিসা : ১২) এসব উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, একই মাইয়েতের মীরাছে বিশেষ কিছু নারী ও পুরুষকে সমান হিস্যা দেয়া হয়েছে।
২. নারীর অংশ পুরুষের চেয়ে বেশি : মীরাছে পুত্র ও ভাইয়ের অংশ যেহেতু নির্ধারিত নয় তাই ভাই ও পুত্র কখনো বোন ও কন্যা থেকে কম পেয়ে থাকে। যেমন মাইয়্যেতের পিতা, মাতা এবং স্বামী বা স্ত্রীর সাথে শুধু দুই কন্যা থাকলে কন্যা যতটুকু পায় শুধু দুই পুত্র থাকলে তারা তার চেয়ে কম পেয়ে থাকে। প্রথম ক্ষেত্রে মীরাছের অংশ হবে নিম্নরূপ : স্ত্রী ১১.১১%, পিতা ১৪.৮১%, মাতা ১৪.৮১% এবং প্রত্যেক কন্যা ২৯.৬২৯% করে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মীরাছের অংশ হবে নিম্নরূপ : স্ত্রী ১২.৫%, পিতা ১৬.৬৬%, মাতা ১৬.৬৬% এবং প্রত্যেক পুত্র ২৭.০৮% করে পাবে। তাহলে ১ম ক্ষেত্রে প্রত্যেক কন্যা ২৯.৬২৯% পাচ্ছে, অথচ ঐ আত্মীয়দের সাথে পুত্র পাচ্ছে ২৭.০৮%।
আরেকটি উদাহরণ : মাইয়্যেতের স্বামী, পিতা ও মাতার সাথে শুধু দুই কন্যা থাকলে কন্যারা যে অংশ পায় শুধু দুই পুত্র থাকলে পুত্ররা তার চেয়ে কম পায়। কারণ প্রথম ক্ষেত্রে মীরাছের অংশ হবে নিম্নরূপ : স্বামী ১৯.৯৯%, পিতা ১৩.৩৩%, মাতা ১৩.৩৩% এবং প্রত্যেক কন্যা ২৬.৬৬% করে পাবে। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মীরাছের অংশ হবে নিম্নরূপ : স্বামী ২৫%, পিতা ১৬.৬৬%, মাতা ১৬.৬৬% এবং প্রত্যেক পুত্র ২০.৮৩% করে পাবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক কন্যা ২৬.৬৬% সম্পদ পেয়েছে অথচ ঐ আত্মীয়দের সাথেই প্রত্যেক পুত্র পাচ্ছে ২০.৮৩%।
তেমনি কখনো বোন-ভাই থেকে বেশি পায়। নীচের ছকটি দেখুন : মাইয়েতের স্বামী, মাতা, বৈপিত্রেয় বোন ও বৈমাত্রেয় বোন থাকলে প্রত্যেকের মীরাছের হিস্যা হয় নিম্নরূপ : স্বামী ৩৭.৫%, মাতা ১২.৫%, বৈপিত্রেয় বোন ১২.৫% ও বৈমাত্রেয় বোন ৩৭.৫%। পক্ষান্তরে স্বামী, মাতা, বৈপিত্রেয় বোনের সাথে যদি বৈমাত্রেয় ভাই থাকে তাহলে প্রত্যেকের হিস্যা হয় নিম্নরূপ : স্বামী ৫০%, মাতা ১৬.৬৬%, বৈপিত্রেয় বোন ১৬.৬৬% ও বৈমাত্রেয় ভাই ১৬.৬৬%। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ক্ষেত্রে যে আত্মীয়দের সাথে বৈমাত্রেয় বোন শতকরা ৩৭.৫% পেয়েছে তাদের সাথেই বৈমাত্রেয় ভাই পেয়েছে তার অর্ধেকেরও কম।
এই উদাহরণগুলির সারকথা হল, একই ধরনের আত্মীয় রেখে দু’জন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেছে, কিন্তু আত্মীয়তার ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়েও এক মাইয়েতের নারী ওয়ারিসরা অপর মাইয়েতের পুরুষ ওয়ারিসদের চেয়ে সম্পদ বেশি পেয়েছে।
আর একই মাইয়েতের পুরুষ ওয়ারিসের চেয়ে নারী ওয়ারিস বেশি পাওয়ার দৃষ্টান্ত ইতিপূর্বে গিয়েছে। যেখানে মৃতের কন্যাকে মৃতের স্বামীর চেয়ে এবং মৃতের কন্যা মৃতের পিতার চেয়ে বেশি পেয়েছে।
সমপর্যায়ের পুরুষ মীরাছ পায় না কিন্তু নারী পায় : ১. নানী ছয় ভাগের এক ভাগ পায়, কিন্তু নানা কিছুই পায় না। ২. মৃতের স্বামী এবং সহোদরা বোনের সাথে বৈমাত্রেয় বোন থাকলে বৈমাত্রেয় বোন অংশ পায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বৈমাত্রেয় ভাই থাকলে সে পায় না।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, পুরুষকে সর্বক্ষেত্রে অধিক হিস্যা দেয়া হয়নি। কোনো ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের হিস্যা সমান, কোনো ক্ষেত্রে বেশি। আর তা দুই মাইয়েতের মীরাছ তুলনা করলে যেমন পাওয়া যায় তেমনি এক মাইয়েতের মীরাছেও পাওয়া যায়। সুতরাং ইসলামে পুরুষের হিস্যা নারীর দ্বিগুণ-এটি ইসলামী মীরাছ-ব্যবস্থার খ-িত উপস্থাপনা।
এক পুরুষ পায় দুই নারীর অংশ : তৃতীয় অবস্থাটি হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন পুরুষ দুইজন নারীর সমান অংশ পেয়ে থাকে। এটাও কুরআন মজীদেরই বিধান। ইরশাদ হয়েছে- এই আয়াতের বিধান হল, মাইয়েতের পুত্র-কন্যা দুটোই যদি থাকে তাহলে পুত্র পাবে কন্যার দ্বিগুণ। তেমনি পৌত্র ও পৌত্রী থাকলে পৌত্র পাবে পৌত্রীর দ্বিগুণ। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- এই আয়াতের বিধান হল মাইয়েতের সহোদর ভাই-বোন দুজনই যদি থাকে তাহলে ভাই পাবে বোনের দ্বিগুণ। একই কথা বৈমাত্রেয় ভাই-বোনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
উপরের দীর্ঘ আলোচনার সারকথা : উপরের মীরাছ বণ্টন সংক্রান্ত শরীয়তের বিধিবিধানের কিছু অংশ উদাহরণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। মনোযোগের সাথে পাঠ করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, ইসলামের মীরাছ বণ্টনের মূল ভিত্তি কখনো এই নয় যে, কাউকে শুধু পুরুষ হওয়ার কারণে অধিক দেয়া হবে, আর কাউকে শুধু নারী হওয়ার কারণে কম দেয়া হবে বা বঞ্চিত করা হবে; এ কারণেই উপরে আমরা দেখেছি যে, সর্বক্ষেত্রে না পুরুষকে অগ্রাধিকার দেয়া হছেয়ে, না নারীকে; বরং কোথাও পুরুষকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, কোথাও নারীকে। আল্লাহ রাববুল আলামীন সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় এবং নারী-পুরুষ উভয়েরই খালিক ও মালিক। উভয়ের জন্যই তিনি রহমানুর রাহীম। সুতরাং বান্দা ও বান্দির কাজ হল তাঁর বিধানের সামনে সমর্পিত হওয়া। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।