পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়। তখন এ কার্যক্রমে অনেকটা শৃঙ্খলা ছিল। ওই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি ‘ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট প্লান’ করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী পরিচালিত হতো টিকা কার্যক্রম। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে চলতি মাসে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হলেও নানা ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নিবন্ধনের সময়ে সার্ভার সমস্যায় অনেকেই নিবন্ধন করতে পারছেন না। আর দ্বিতীয় ধাপে ৩৫ বছরের নিচে স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা গনমাধ্যমকর্মীদের টিকা পেতে অগ্রাধিকার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সেখানে রয়েছে জটিলতা। টিকা নিতে ইচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থীই নিবন্ধন করতে পারছেন না। ছুটি কাটাতে দেশে আসা প্রবাসী শ্রমিকরা (রেমিট্যান্স যোদ্ধা) টিকা পেতে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এমনকি সাধারণ মানুষ অনেকে নিবন্ধন করতে পারছেন না, নিবন্ধন করলেও এসএমএস পাচ্ছেন না, এসএমএস পেলেও হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে টিকা শেষ। অথচ পর্যাপ্ত টিকা হাতে রয়েছে। প্রতিদিনই টিকা পাওয়ার সু-খবর আসছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ লাখ নিবন্ধন এবং দুই লাখের কাছাকাছি টিকা প্রদান করলেও দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হলে নিবন্ধন ও টিকা প্রদান বাড়াতে হবে। অথচ সার্ভারের সক্ষমতা না থাকায় নিবন্ধন জটিলতায় পড়তে হচ্ছে অনেককে। আর বর্তমান সুরক্ষা সার্ভার দিয়ে প্রতিদিন ৫ লাখ টিকার নিবন্ধনও সম্ভব নয় বলে জানা গেছে। সার্ভারের সমস্যার কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের নিবন্ধন করতে না পারার অভিযোগও রয়েছে। অনেকে বিক্ষোভও করেছেন।
অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর এমএনসিএন্ডএইচ সার্ভার সমস্যার সমাধান না করে এর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, এবার অনেকে একসঙ্গে টিকার নিবন্ধনের চেষ্টা করছে। সক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ টিকার নিবন্ধন করতে চাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা গণমাধ্যমকর্মীদের টিকা পেতে অগ্রাধিকারের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, টিকাদান কার্যক্রমে যেসব সমস্যা এখন রয়েছে দ্রুতই তার সমাধান করা হচ্ছে। এতদিন ৩৫ বছরের নিচে ফ্রন্টলাইনারদের নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। গতকালও (রোবাবার) এ নিয়ে সভা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে। একই সঙ্গে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকা আছে। পাইপলাইনেও পর্যাপ্ত টিকা আছে। আজ সোমবার মডার্নার আরো ৩০ লাখ টিকা আসছে। পাশাপাশি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে একসঙ্গে কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার বা মডার্নার ৬০ লাখ টিকার একটি চালান আসার কথা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে করোনার টিকা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কোনো মানুষ যেন টিকা থেকে বাদ না থাকে, আমরা সেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের বার্ষিক কর্ম সম্পাদনা চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা টিকা দিতে শুরু করেছি। টিকা আসছে, দেশের সবাই যেন টিকা নিতে পারে, সে জন্য যত দরকার, আমরা কিনব এবং দেব। কোনো মানুষ যেন টিকা থেকে বাদ না থাকে, সেভাবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
এদিকে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ করেছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। টিকার জন্য নিবন্ধন করার চার-পাঁচ দিন পরও এসএমএস পাচ্ছেন না অনেকেই। তার আগে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) নিবন্ধনেও ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব সমস্যা তুলে ধরেন প্রবাসীরা। বিদেশগামীদের টিকা পাওয়া সহজ করার দাবি জানান তারা। অভিবাসী কর্মীদের জন্য করোনার টিকা নিবন্ধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রবাসীদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে টিকা প্রদানে ৮টি চ্যালেঞ্জ এবং সেগুলো সমাধানে ১১টি সুপারিশ তুলে ধরে বিসিএসএম। লিখিত বক্তব্যে ফোরামের সদস্য তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, সার্ভারের ওপর বাড়তি চাপ পড়ায় নিবন্ধনে অনেক সময় লাগছে। বিএমইটিতে নিবন্ধন করা কর্মীদের টিকার জন্য পুনরায় নিবন্ধন করতে গিয়ে ২০০ টাকা দিতে হচ্ছে। কারিগরি ত্রুটির কারণে কেউ কেউ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একাধিকবার টাকা দিচ্ছেন, তা ফেরত পাওয়ার উপায় নেই। তথ্য জানা না থাকায় হয়রানির মধ্যে পড়ছেন অনেকে। অন্যের সহযোগিতায় নিবন্ধন করতে গিয়ে তথ্যে ভুল হলে তা সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়নি। ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলেও এসএমএস পাচ্ছেন না। এমনকি যে দেশে যাবেন সে দেশের অনুমোদিত টিকার বিষয়ে তথ্য পাচ্ছেন না প্রবাসীরা।
সুপারিশে বলা হয়, দাম বেশি হলেও প্রবাসীদের জন্য এক ডোজের টিকা আনা দরকার। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসএমএস দিতে হবে। সংশোধনের উপায় না থাকায় বিএমইটিকে সতর্কতার সঙ্গে নিবন্ধন করতে হবে। প্রচার বাড়ানো দরকার। যাঁদের স্মার্ট কার্ড আছে, তাঁদের কাছ থেকে কোনো ফি না নেওয়া। ভুল করে টাকা গেলে তা ফেরতের ব্যবস্থা করা। সার্ভারের সক্ষমতা বাড়ানো এবং নিবন্ধনের প্রক্রিয়া বোঝাতে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়ে ব্যাপক প্রচার করতে হবে।
নিবন্ধন ছাড়াই গাজীপুরে টিকাদান : এদিকে নিবন্ধন ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই গাজীপুরের চারটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকদের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল কোনাবাড়ি থানা এলাকায় অবস্থিত তুসুকা ডেনিম লি. এবং তুসুকা ওয়াক্সিং লি. এর চতুর্থ তলায় এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। এসময় গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, সেখানে এক সাথে চারটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের এনআইডি নিয়ে টিকাদান শুরু হয়েছে। এনআইডি নেয়ার উদ্দেশ্য হলো প্রয়োজনে পরবর্তীতে নিবন্ধন করা যাবে। গাজীপুরের লক্ষ্মীপুরা চারটি কারখানার ১২ হাজার শ্রমিক প্রাথমিকভাবে এই টিকা পাবেন।
সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসিএন্ডএইচ) ডা. শামসুল হক বলেন, এবার অনেকে একসঙ্গে টিকার নিবন্ধন করার চেষ্টা করছে। সক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ টিকার নিবন্ধন করতে চাওযায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের টিকা প্রদানের নির্ধারিত সক্ষমতা আছে। নিবন্ধন অনেক বেশি হলেও সক্ষমতা অনুযায়ী টিকা দেয়া হচ্ছে। তাই অনেকের এসএমএস পেতে দেরি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হচ্ছে। আমাদের হাতে টিকা আছে, আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম আছে। টিকা দানের পরিমাণ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাজীপুরে নিবন্ধন ছাড়া টিকাদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে একটি পাইলট প্রকল্প হিসাবে গাজীপুরের ৪টি পোশাক কারখানার ১২ হাজার শ্রমিককে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুরুতেই নিবন্ধন করতে না হলেও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেয়া হচ্ছে। যাতে পরবর্তীতে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এই পাইলট সফলভাবে সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে এভাবে টিকাদান করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, আজ সন্ধায় দেশে মডার্নার ৩০ লাখ টিকা আসার কথা রয়েছে। গত শনিবার চীন থেকে দুটি ফ্লাইটে ১০ লাখ ডোজ করে ২০ লাখ সিনোফার্মের টিকা এসেছে। এর আগে জুলাই মাসের দুই ও তিন তারিখে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ৪৫ লাখ ডোজ টিকা আসে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার টিকা এসেছে ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ ডোজ। চীনের সঙ্গে কেনা চুক্তির আওতায় দুই ফ্লাইটে সাইনোফার্মের টিকা এসেছে ২০ লাখ ডোজ। দেশে আগে আসা টিকার মধ্যে ফাইজারের রয়েছে ৯৯ হাজার ৬৭৮ ডোজ এবং সিনোফার্ম রয়েছে ১০ লাখ ছয় হাজার ১৬২ ডোজ। বর্তমানে দেশের সব সিটি কর্পোরেশনে মডার্নার টিকা এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।