পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের নাম কোভিড-১৯ টিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত যে কোনো নামের করোনা টিকার চাহিদা সারাবিশ্বে। করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো এই টিকা ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। কিন্তু উন্নত কয়েকটি দেশ ছাড়া টিকার জন্য শতাধিক দেশ উদগ্রীব। উন্নয়নশীল, মধ্যম আয়, নিম্নআয়ের প্রতিটি দেশ তাদের নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, ধর্মীয়, ব্যবসায়ীক সব ধরনের বৈশ্বিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে। ভারতের নরেন্দ্র মোদি প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে হাজার হাজার নাগরিকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভুলের প্রায়চিত্ত করতে হয়েছে। বাংলাদেশও প্রথম দিকে করোনা তেমন পাত্তা দেয়নি। বোকামি করে অন্য কোনো সোর্সের কাছে না গিয়ে শুধু ভারতের সেরামের টিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে চুক্তি করে। পরবর্তী সময়ে টাকা নিয়েও বাংলাদেশকে টিকা না দেয়া ভারতের বেঈমানি এবং উন্নত দেশগুলোতে করোনার মৃত্যুর ভয়ঙ্কর রূপ দেখার পর টিকা সংগ্রহে সক্রিয় হয় বাংলাদেশ। এ সময় উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে চীন পাশে দাঁড়ায়। এ ছাড়াও আমেরিকা, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করে সফল হয়; এখন টিকা বাংলাদেশে আসছে এবং গণটিকা কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যেই করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টায় আক্রান্ত হয়ে দেশের শত শত মানুষ মারা গেছে। প্রতিদিন দুইশ ওপর মানুষ মারা যাচ্ছে। তারপরও কি আমাদের দায়িত্বশীল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, নেতানেত্রী, আমলারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন? টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিচ্ছেন এক তথ্য, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দিচ্ছেন আরেক তথ্য? আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছে আরেক কথা। প্রকৃত সত্য কোনটা? মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে টিকা সংগ্রহ নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আমলাদের বিভিন্ন সময় পরস্পরবিরোধী দায়িত্বহীন কথাবার্তায় মানুষ কার্যত টিকা পাবেন কি না, তা নিয়ে সরকারের ওপর আস্থাহীন হয়ে পড়েছেন। উদ্বিগ্ন নাগরিকের প্রশ্ন সত্যিই কি টিকা পাব?
প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩০ হাজারের কম মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গণটিকা দেয়া হচ্ছে চাহিদার তুলনায় সামান্যই। জনসংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, এভাবে চললে নমুনা পরীক্ষায় এক যুগ সময় লেগে যাবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষা এবং গণটিকা কার্যক্রম বাড়াতে না পারলে বিপদ ঠেকানো যাবে না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রতিদিন যে প্রক্রিয়ায় নমুনা পরীক্ষা এবং টিকা দেয়া হচ্ছে তাতে ১০ বছরেও নমুনা পরীক্ষা ও টিকা কার্যক্রম শেষ হবে না। টিকার তথ্য নিয়ে সরকার যে উল্টাপাল্টা বলছে মানুষ তা বিশ্বাস করছে না, মানুষ প্রকৃত চিত্র জানতে চায়’। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও একই মন্তব্য করেছেন। তারাও দ্রুত নমুনা পরীক্ষা, টিকা কার্যক্রম বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা টিকা দেয়ার বিষয়ে প্রথম থেকেই সিরিয়াস। করোনা ঠেকাতে তারা অনেক এগিয়ে গেছে। ভারত ও পাকিস্তান প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরবর্তীতে প্রতিবেশী দেশ দুটি প্রতিদিন ব্যাপক সংখ্যক নাগরিকের নমুনা পরীক্ষা করছে এবং টিকা দিচ্ছে। বাংলাদেশও প্রথমে করোনাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি; পরবর্তীতে বুঝতে পেরেও সফলতার জন্য দায়িত্বশীল কর্মকাণ্ড কতটুকু করছে।
কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছে দেশে ২৬ লাখ ডোজ টিকা আসছে। ১৫ জুলাই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানান ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে ৭ কোটি টিকা আসবে। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক এক মাস থেকে বলছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে সব মিলিয়ে ১০ কোটি টিকা আসবে। তিন মন্ত্রীর মধ্যে কার বক্তব্য সত্য? গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মারা গেছে ২০৪ জন। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯২১৪টি। এতে ৮৪৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। যে গতিতে নমুনা পরীক্ষা ও করোনা টিকা কার্যক্রম চলছে, তাতে বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সরকার করোনাবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে। কমিটি যেসব পরামর্শ দেয় তার বেশিরভাগই কার্যকর করা হয় না। তারা বারবার তাগাদা দিচ্ছেন নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে; টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তারা বলছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার হিসেব অনুপাতে কমপক্ষে প্রতিদিন ১০ লাখ লোককে করোনার টিকা দিতে হবে। নমুনা পরীক্ষা করতে হবে প্রতিদিন কয়েক লাখ করে। না হলে করোনা ঠেকানো কার্যক্রমে সফলতা আসবে না। কিন্তু টিকার অভাবে দেশে অনেক দিন নমুনা পরীক্ষা, গণটিকা কার্যক্রম এবং নিবন্ধন বন্ধ ছিল। নতুন করে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর নিবন্ধনও শুরু হয়। গত ৮ জুলাই থেকে ব্যাপকভাবে মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করছেন। অথচ ৮ জুলাই যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা কোন দিন টিকা পাবেন তা এখনো জানেন না। তাহলে আমরা কি করলাম? বিদেশ থেকে টিকা আসছে এটা খুশির খবর। যাদের প্রচেষ্টায় টিকা আসছে, তাদের অভিনন্দন জানাই। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা, গণটিকা কার্যক্রমে এতো বেখেয়ালি কেন? মানুষ তো পর্যাপ্ত টিকা পাচ্ছেন না।
আসুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টিকা কার্যক্রমের চিত্র দেখি। চীন সরকার দেশের ১,৪৩১,৪২০,৬৩৪ জনকে টিকার আওতায় আনার টার্গেট করে। ইতোমধ্যেই টার্গেটের ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশকে টিকার আওতায় এনেছে দেশটি। মার্কিন যুুক্তরাষ্ট্র ৩৩৬,০৫৪,৯৫৩ লোককে টিকার আওতায় আনার টার্গেট করে শতকরা ১০০.৫ জনকে টিকা দিয়েছে। পাশের দেশ ভারত ৩৯১,৩৪০,৪৯১ কোটি লোককে টিকার আওতায় আনার টার্গেট করে ইতোমধ্যেই ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ লোককে টিকা দিয়েছে। এছাড়াও ব্রাজিল ১২০,৭২৬,৭৫২ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৫৬.৮ জন, জার্মানি ৮৪,৯৮৯,৮৫০ টার্গেট করে শতকরা ১০১.৪ জনকে, যুক্তরাজ্য ৮১,৪৩৮,৮৯২ জনকে টিকার টার্গেট করে শতকরা ১২১.৯ জন, জাপান ৬৬,৭১৪,৫২৮ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৫২.৭ জন, ফ্রান্স ৬২,৩২১,৩৫৫ টার্গেট করে শতকরা ৯২.২ জন, তুরস্ক ৬১,৬২১,৮০৬ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৭৩.১ জন, ইতালি ৫৯,৯৬৬,৯০৮ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৯৯.২ জন, শ্রীলংকা ৬,৪৩১,১০০ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৩০.০ জন, ইন্দোনেশিয়া ৫৫,৮১৯,৭৮১ জনকে টার্গেট করে শতকরা ২০.৪ জন, মেক্সিকো ৫২,৭০৪,৯৬০ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৪০.৯ জন, রাশিয়া ৫০,৩৮৩,৬৩৮ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৩৪.৫ জন, স্পেন ৪৯,৫৮৫,১৯৭ জনকে টার্গেট করে শতকরা ১০৬.১ জন, কানাডা ৪৪,২৯৩,৬৫৯ জনকে টার্গেট করে শতকরা ১১৭.৪ জন, সিয়েরালিওন ২২৫,৩৮০ জনকে টার্গেট করে শতকরা ২.৮ জন, মাদাগাস্কার ১৯৭,০০১ জনকে টার্গেট করে শতকরা ০.৭ জন, মালি ১৯৬,৮৬২ জনকে টার্গেট করে শতকরা ১.০ জন, মৌরিতানিয়া ১৮২,৬৪২ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৩.৯ জন, কিরঘিজস্তান ১৭৩,৭০০ জনকে টার্গেট করে শতকরা ২.৭ জন, বাংলাদেশ ১০,১০৮,২২৪ জনকে টার্গেট করে শতকরা ৬.১ জনকে টিকার আওতায় এনেছে। শতাধিক দেশের এমন চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
আসুন বাংলাদেশের টিকার হিসেব দেখি। ফেব্রুায়ারি মাসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। পরবর্তীতে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর বিতর্কের মধ্যে আরো ২০ লাখ ডোজ টিকা দিতে বাধ্য হয় সেরাম। এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের সময় ১২ লাখ ডোজ, ভারতের সেনাপ্রধানের ঢাকা সফরের সময় এক লাখ ডোজ উপহার এবং তারও আগে ভারতের উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে সর্বমোট এক কোটি ৩ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসে। অথচ তিন কোটি ডোজ টিকার দাম অনেক আগেই ভারতের সেরামকে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে চীনের ৫ লাখ ডোজ উপহার ছাড়াও ক্রয় করা চিনের সিনোভ্যাকের ২০ লাখ ডোজ, আমেরিকার মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ, আমেরিকার ১ দশমিক ৬ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এ ছাড়াও এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাতে সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ এবং সোমবার আসবে আরো ৩৫ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে।
পৃথিবীর অনেক দেশ অদৃশ্য ভাইরাসকরোনাকে কার্যত বিদায় জানিয়েছে। সে দৃশ্য আমরা ইউরোপ কাপ ও কোপা আমেরিকা কাপ খেলায় গ্যালারিতে দেখেছি। টিকা গ্রহণের করণেই হাজার হাজার মানুষ এক সঙ্গে খেলা দেখছেন। অথচ এখনো বাংলাদেশে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে ৩০ হাজারের নিচে। প্রতিদিন করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার সংখ্যাও কম। অথচ টিকায় পিছিয়ে পড়া পাকিস্তানে প্রতিদিন ৫ লাখ মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনছে। এনডি টিভির খবর অনুযায়ী গতকাল ১৭ জুলাই ভারতে এক দিনে ৮০ লাখের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৮০ লাখ মানুষকে দেশটি টিকার আওতায় আনছে। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা পারছি না কেন? গতকাল বাংলাদেশে ১৮২৭২৪ জনকে করোনা টিকা দেয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা ৩০ হাজারের নিচে। করোনার নমুনা পরীক্ষা ও টিকা কার্যক্রমে আমাদের পেছনে পড়ে থাকার রহস্য কি? ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রহস্য হলো দায়িত্বশীল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আমলাদের কাজের চেয়ে বেশি কথা বলার অভ্যাস। তারা কাজের চেয়ে কথা বেশি বলে যাচ্ছেন। যার যে দায়িত্ব নয়, তিনি সে বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের অভিতম যার যে দায়িত্ব, তাকেই সে দায়িত্ব পালন ও সে বিষয়ে কথা বলা উচিত। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-আমলাদের অযাচিত ভাবে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা, করোনা টিকা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেয়ায় মানুষ টিকার বিষয়ে সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। মানুষ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেখতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।