পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভোগান্তিতে যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীরা
কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধ শিথিলের পর গতকাল শুক্রবার প্রথম ছুটির দিন হওয়ায় সড়ক-মহাসড়কে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বহু মানুষ বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়তে শুরু করে। এছাড়া কোরবানির পশুবাহী ট্রাকও বিভিন্ন মহাসড়কে রাড়ছে। রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশমুখসহ দেশের সবগুলো মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষ ও কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাড়ির পথে জনস্রোত এবং কোরবানির পশুবাহী ট্রাক, কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধি।
ইতোমধ্যে যানজটে আটকা পড়ে গরমে (হিটস্ট্রোকে) ট্রাকের মধ্যেই শরীয়তপুরের নরসিংহপুরে ৬টি গরু মারা গেছে। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে গাড়ির লাইন। অন্যান্য মহাসড়কে কোথাও ২০ কিলোমিটার কোথাওবা তারচেয়েও বেশি লম্বা গাড়ির লাইন। সভারের বিভিন্ন মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা আশুলিয়া, ঢাকা-সিলেট প্রতিটি মহাসড়কে গাড়ির দীর্ঘ সারি স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। এ মহাসড়কের যানজট আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত। তবে এর প্রভাব উত্তরা হয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পড়েছে। শুধু মহাসড়ক নয় দেশের প্রতিটি ফেরি ঘাটেও ছিল ভয়াবহ যানজট। নদী পারের অপেক্ষায় শত শত গাড়ি। ভয়াবহ ভোগান্তিতে যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীরা। মহাসড়ক ও ফেরিঘাটের যানজট ও ভোগান্তির যে চিত্র আমাদের সংবাদদাতারা পাঠিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।
সভার সংবাদদাতা জানান, আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ১৬ কিলোমিটার, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নবীনগর থেকে হেমায়েতপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার ও আব্দুল্লাহপুর-বাইপাল সড়কের বাইপাইল থেকে ধৌড় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কে থেমে থেমে চলছে পরিবহন। সাভার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) রবিউল ইসলাম বলেন, সাভারের সব রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট কমাতে অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে তীব্র যানজট দেখা যায়। এ যানজটে ঢাকার উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে শুরু করে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। বিআরটি-এর কাজের জন্য রাস্তা অনেক জায়গায় সরু এবং ভাঙাচুরা হওয়ায় এ এলাকায় যানজট আরো তীব্র হয়েছে। রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার এবং গরুবোঝাই ট্রাক সবই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীরা।
হালুয়াঘাট থেকে গরু নিয়ে আসা আবুল কালাম বলেন, সকাল ৮টায় গাজীপুর চৌরাস্তা এসেছি। এখন ১১টার বেশি বাজে এখনো টঙ্গী যেতে পারিনি। এ গরু নিয়ে কখন বনশ্রী আফতাব নগর হাটে যেতে পারব আল্লাই জানেন। যে গরম তাতে এভাবে যানজটে আটকে থাকলে গরু বাঁচানো দায় হবে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা আতাউর রহমান আজাদ জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে সকাল থেকে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এতে করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পৌলি পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ঢাকামুখী গরুবাহী ট্রাকেরও চাপ বাড়ে। ফলে দীর্ঘমেয়দি যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘরমুখো যাত্রী এবং গরু ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
গাড়ি চালক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী গাড়ি মহাসড়কের পৌলি এলাকায় যানজটে পড়ছে। এর ফলে ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত জানান, ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে যানবাহনের প্রচুর চাপ রয়েছে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
রাজবাড়ী গোয়ালন্দ থেকে মোজাম্মেল হক জানান, ঈদকে সামনে রেখে দেশের দক্ষিণ বঙ্গের প্রবেশ দ্বার খ্যাত গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ঘাটে পশুবাহী ট্রাক ও গণপরিবহনের দীর্ঘ সারি। নদী পারের অপেক্ষায় শত শত যানবাহন। সরে জমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে ঢাকা খুলনা মহাসড়কে রোদের মধ্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে শত শত পশুবাহী ট্রাক ও গণপরিবহন। দীর্ঘ দিন পর স্বরূপে ফিরেছে দৌলতদিয়া ঘাট। বিগত কয়েক মাস নদী পারের জন্য কোনো যানবাহনকে মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে হয়নি। বেলা ১১টা নাগাত দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দুরে বাংলাদেশ হ্যাচারীজ পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। সময় বড়ার সাথে সাথে আরও দীর্ঘ হয় গাড়ির লাইন। যানবাহনে আটকে থাকা যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি প্রচন্ড গরমে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকাসহ তার আশপাশের জেলার ট্রাকে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া গরু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গুরু ব্যবসায়ী। রোদ ও গরমে বেশিরভাগ গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একমাত্র ভরসা হাত পাখা। প্রতি পশুবাহী ট্রাকে রয়েছে ৮/১০ করে রাখাল। তারা সরাক্ষণ ট্রাকের গরুগুলোকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে।
মাগুরার গরু ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, গরুভর্তি ট্রাকটি নিয়ে আমরা প্রায় দুই ঘণ্টা হলো দৌলতদিয়া ঘাটে এসে লম্বা সিরিয়ালে আটকা পড়েছি কখন ফেরি দেখা পাব এখনো বলতে পারছি না। গরুর গায়ে পানি দিচ্ছি আর বাতাস করছি। গরমে গরুর স্ট্রোক করার আশঙ্কা থাকে। তাই চিন্তায় আছি, ঠিকমতো গরু নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব কি না। কখন ফেরিতে উঠতে পারব তাও বলতে পারছি না।
বাস চালক কাশেম বলেন, দীর্ঘদিন পর বাস চালাচ্ছি। আজ দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়ি নিয়ে এসেছি প্রায় তিন ঘণ্টার মতো বসে আছি। ঘাটে এসে দীর্ঘ সিরিয়ালের পড়েছি। এখনো ফেরির দেখা মিলছে না গরমে যাত্রীরা এদিকে ওদিকে ছুটাছুটি করছে।
বিআইডবিøউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সিহাব উদ্দিন বলেন, এ নৌরুটে বড় ফেরি চলছে ৮টি, ইউটিলিটি ছোট ফেরি চলছে ৭টি। ছোট বড় সব মিলে মোট ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। তবে পশুবাহী ট্রাকগুলো অগ্রঅধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা সংবাদদাতা মো. শওকত হোসেন জানান, ঈদকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের ঢল নেমেছে শিমুলিয়া ঘাটে। কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার দ্বিতীয় দিনে শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যানবাহনে চড়ে যাত্রীদের ঘাটে আসতে দেখা গেছে। ঘাটে আসা যাত্রীরা ফেরি ও লঞ্চেযোগে পদ্মানদী পার হয়। গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়ায় ফেরিতে যানবাহন পারাপারে বেগ পেতে হয়। ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ৬ শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাক। এদিকে লঞ্চগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অর্ধেক যাত্রী ধারণের কথা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চে অধিক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
সরজমিনে দেখা যায়, লঞ্চ ঘাটে শতশত যাত্রীর ঢল। লঞ্চ ঘাট ও যাত্রীছাউনিতে যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। লঞ্চে গাদাগাদি করে উঠেছেন। তাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব ছিল না। বিআইডবিøউটিএর লোকেরা মাইকিং করা সত্তে¡ও যাত্রীরা মাস্ক পরছেন না। ফেরিঘাটের অভিমুখে পার্কিং ইয়ার্ডে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী ছোট বড় শতশত গাড়ি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছে। এতে অপেক্ষারত যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডাবিøউটিএ) শিমুলিয়া নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান ৮২টি লঞ্চ সচল রয়েছে। এ ছাড়া দুটি নতুন ফেরি যুক্ত হওয়ার পর ১৩টি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, খুলনা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গরুবোঝাই যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। এতে শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে তিন কিলোমিটার এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট। ফলে গত দুইদিনে হিটস্ট্রোকে গাড়ির মধ্যেই ৬টি গরু মারা গেছে। ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী বাস পারাপার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। গরুবোঝাই ট্রাককে প্রাধান্য দিয়ে ফেরি চলাচল করছে। বিশ্বরোডের খায়েরপট্টি এলাকা থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার রাস্তায় পাশাপাশি দুইটি করে ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গরু নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডায় বিশ্রাম করানো হচ্ছে। আবার গাড়িতেই গরুর মুখে পানি দিয়ে তাদের তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। গাড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের অভিযোগ, তাদের পার না করে শুধু গরুবোঝাই ট্রাক পার করছে।
যশোর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিজ এলাকা থেকে কয়েকজনের গরু নিয়ে এসেছি। বিক্রি করে তাদের টাকা দেব। কিন্তু গরুর যেই অবস্থা মনে হয়, দুইটা বাঁচানো দায় হয়ে যাবে। দেশে গিয়ে কী জবাব দেব? রাত ১টায় এই ঘাট এলাকায় এসেছি। দুপুর ২টা হলেও এখনও পার হতে পারিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।