বছর ঘুরে আবারও আসছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ত্যাগের মহিমায় পশু কোরবানি করবেন মানুষ। আর এ জন্য রাজধানীতে জমে উঠেছে পশুর হাট। নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী মোট ২১টি হাটে গরু-ছাগল নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। কয়েকটি হাটে উঠ, দুম্বা, ভেড়াও উঠেছে। দেশী, বিদেশি গরু, ছাগল, দুম্বায় জমজমাট হাট।

কিন্তু করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয়) দেশে ছড়িয়ে পড়া বা প্রতিদিন দুইশতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করার পরও হাটে স্থাস্থ্যবিধির বালাই নেই। কোরবানির হাটে নেই সামাজিক দূরত্ব। যারা পশু বিক্রি করছেন তাদের মুখে নেই মাস্ক। ইজাদারদের যেসব স্বাস্থ্যবিধির শর্ত দিয়ে হাট ইজারা দেয়া হয়েছিল সেগুলোও মানা হচ্ছে। কোরবানির পশু নিয়েই ব্যস্ত সবাই। অনেকেই হাটে আসছেন গরু ছাগল দেখতে। তবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কিনতে নয়, ঘুরতে এসেছেন হাটে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন কোরবানির হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। হাটগুলোতে পশুবাহী ট্রাকের ভিড়। প্রত্যেকটি ট্রাকে ১৫ থেকে ২০টি গরু নিয়ে হাটে আসছেন ব্যবসায়ীরা। যারা হাটে আসছেন তাদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এ বিষয়টি সিটি করপোরেশনের ও হাট ইজারাদারদের তদারকি করার কথা ছিল।
হাট ঘুরে দেখা যায়, পুরো জায়গা জুড়ে শুধু গরু আর গরু। হাটের সামনের অংশে গরু রাখা হচ্ছে। ভিতরের দিকে কিছুটা খালি রয়েছে। বেপারী ও গরুর দেখভালের লোকজন নিজেদের থাকা এবং রান্না-বান্নার জন্য জায়গা ঠিক ঠাক করছেন। উৎসুক লোকজন ভিড় করছেন হাটের সবচেয়ে বড় গরু দেখার জন্য। ছোট ছোট কিশোররাও গরু দেখতে হাটে আসছে। কোন গরুর কত দাম জিজ্ঞেস করছেন।
তবে কেউ কেউ গরু কিনছেন আগে ভাগেই। তাদের মতে, এখন ভিড় কম। দুই একদিন পরে লোকেলকারণ্য হয়ে উঠবে হাট। তখন করোনায় আক্রান্ত হাবার ঝুঁকিও বেশি থাকবে। তখন সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হবে না। হাট ইজারাদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগামীকাল থেকে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশু বিক্রি শুরু হবে। তাই কাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে অভিযান বা কড়াকড়ি শুর হবে।
এদিকে হাটের ভিড় এড়াতে খামার থেকে গরু ছাগল কিনছেন অনেকে। রাজধানীর ক্যান্টমেন্টের একটি খামারে গিয়েছেন ফারজানা শোভা। তিনি বলেন, হাটে অনেক ভিড় হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না। তাই খামার থেকে গরু কিনতে এলাম। খামারে তুলনামূলক দাম বেশি বলে জানান তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মেরাদিয়া হাটে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু আসা শুরু করেছে। গত বুধবার মেরাদিয়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বাজার ও দক্ষিণ বনশ্রীর জি ব্লকের আশপাশের রাস্তার দুই পাশে খালি জায়গায় ব্যবসায়ীর গরু এনে রাখছেন। ইজারাদার নির্ধারিত বাঁশের কাঠামোতে গরু ও ছাগল বেঁধে রাখছেন। রাজধানীর রামপুরা খাল সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী মেরাদিয়া কোরবানির পশুর হাট এখনো জমে ওঠেনি। অন্যান্য পশুর হাটের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আগামীকালের মধ্যে গরু ও ছাগলে ভরে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছেন হাট সংশ্লিষ্টরা।
মেরদিয়া হাটের ইজারাদার আওরঙ্গদেব টিটু বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক ও পশু বিক্রেতাদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের ব্যবস্থা রয়েছে। হাটের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে চাইলে টিটু বলেন, সিটি করপোরেশনের ২০০ ভলান্টিয়ার এবং আমাদের পক্ষ থেকেও লোকবল নিয়োগ থাকবে। এখন অল্পস্বল্প গরু আসছে। আমরা আশপাশের এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে প্রচারণা চালাব।
ঢাকা উত্তর সিটিতে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও ঢাকা উত্তরে আরও ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই সেকশন ৩-এর খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ, ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা এবং উত্তরখান মৈনারটেক শহীদনগর হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির যে ১০টি অস্থায়ী হাট নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা। এছাড়াও গোলাপবাগের ডিএসসিসি মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা। এছাড়া সারুলিয়ায় স্থায়ী হাট বসছে।