Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় পুকুরে শ্বেতপদ্ম দেখতে কৌতুহলী মানুষের ভীড় !

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২১, ১১:৩৭ এএম

৪ দশক আগেও উত্তরের বিল ও পুকুরে পদ্ম ও শাপলা জাতীয় ফুলের সমারোহ ছিল স্বাভাবিক। গ্রামীন হাট বাজারে সবজি হিসেবে বিক্রি হতো শাপলা ও পদ্ম ডাটা। শাপলার বীজ থেকে তৈরি হতো ভ্যাটের খৈ। হায় সেই দিন গুলি আজ কৈ !
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন দুপচাঁচিয়ার বই, কবিতা ও প্রকৃতি প্রেমিক এবং একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক দেওয়ান পলাশ। তিনি আরও জানালেন , তথাকথিত আধুনিক পদ্ধতির মাছ চাষের বিস্তারেই উত্তরের প্রকৃতির এই নির্মম বিনাশ। এখন আর গ্রামের পরে গ্রাম ঘুরেও দেখা মেলেনা শাপলা ও পদ্ম পুকুরের ।
অতি সম্প্রতি বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদের সুর্যতা গ্রামের একটি বিশাল দীঘিতে শে^ত পদ্ম’ ফোটার খবর সংগ্রহে গেলে দেখা মেলে প্রভাষক দেওয়ান পলাশের তিনিও দেখতে হাজির শে^তপদ্ম ফুলের মনোলোভা রুপ।
তবে কিভাবে এই পুকুরে শে^তপদ্ম ফুটলো জানতে চাইলে গ্রামবাসি জানালো , গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত । পুকুরটি যৌথ শরিকানার । সে কারনেই শরিকদের বসিবনা না হওয়ায় মাছ চাষ বা চাষের জন্য লীজ দেওয়া হয়নি। সেকারনেই পদ্মফুলের গাছে ভরে উঠেছে পুকুর ।
পুকুরটির মরিক একজন সুকুমার চন্দ্র (৪৫) জানান , তিনি আদমদীঘি উপজেলার আড়াইল গ্রামে সম্প্রতি বেড়াতে গিয়ে সেখানে দুর্লভ জাতের শে^পদ্ম দেখতে পান। কৌতুহল বশত শে^পদ্মের কয়েকটি শেকড় এনে পুকুরে গেড়ে দেন। অল্পদিনের মধ্যেই পুকুরটি ভরে যায় পদ্ম ফুলের গাছে । আর এ বর্ষায়তো ফুলই ফুটেছে । এখবর জানাজানির পর প্রতিদিনই দেখতে আসছে মানুষ। মিডিয়ার লোকজনও আসছে প্রায়ই।
পুকুরটির অপর অংশীদার শ্রীনন্দন চন্দ্র (৬০) বলেন, ৪০ বছর পূর্বে এই এলাকায় পুকুর ও বিলে মোটামুটি মিলত শাপলা ও পদ্মফুল। বাজারে মাছ মাংস বিক্রি হতো পদ্ম পাতায় । গ্রামীন মজলিস বা পুজা পার্বনের খাওয়া দাওয়ায় খাবার / প্রসাদ বা ভোগ দেওয়া হত পদ্ম পাতায় । অভাবের সময় মানুষ শাপলা ও পদ্ম ডাটা রান্না করে খেত সবজি হিসেবে । তার মতে মাছ চাষের জন্য পুকুর আগাছা মুক্ত করার নামে মুলত শাপলা, পদ্ম সহ সহ বিভিন্ন জলজ ফুলের নিরবে বিনাশ হয়ে গেছে । কত বুনো ফুল যে বিরুপ্ত হয়ে গেছে কে জানে ?
তিনি জানান, তারা এখন শে^তপদ্মকেই বানিজ্যিকভাবে উৎপাদনের চিন্তা করছেন । তাদের ধারনা বানিজ্যিকভাবে চাষ করলেও মাছের চেয়ে কম লাভ হবেনা ।
জানতে চাইলে দুপচাঁচিয়া জেকে কলেজের কৃষি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিনেশ চন্দ্র বসাক বলেন , সাদা পদ্মফুল বর্তমানে অনেকটা বিলুপ্তের পথে। মুলত বর্ষাকালে পদ্মফুল ফোটা শুরু হয়ে শরৎ ও হেমন্তকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছেই পদ্মফুল অধিক প্রিয় ও পবিত্র। পূজা পার্বনে এ ফুলের অনেক চাহিদা ও কদর। চাহিদার কারনে পদ্মফুল সংগ্রহ ও বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাছাড়া পদ্মফুল গাছ ভেষজগুণ সমৃদ্ধও বটে। এর ডাটা সবজি হিসাবে খাওয়া যায়। পদ্মগাছ মানবদেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরন করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ি চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে পদ্মফুল গাছ ওষুধ হিসেবে ব্যকহারও হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ