পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের গতিতে ‘অসন্তুষ্টি’ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, টিকা আসার যে গতি তাতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকা দিতে ২০২৪ সাল লেগে যেতে পারে। যদিও পুরো বিষয়টির সঙ্গে একমত নয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। টিকা সংশ্লিষ্টদের কর্মকর্তাদের মতে, কিছুদিন আগেও ভ্যাকসিন নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য সঠিক ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের প্রচেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সমন্বিত পদক্ষেপে বর্তমানে টিকা নিয়ে দেশে অনিশ্চিত পরিস্থিতি নেই। সারাদেশে চলছে গণটিকাদান কর্মসূচি। বিভিন্ন উৎস থেকে যেভাবে টিকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি আছে তাতে আগামী জুন মাসের দেশের সবাইকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হবে। এমনকি মাসেই মডার্না, সিনোফার্ম এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, আশা করছি দ্রুতই দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে। কিছুদিন আগেও টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। এখন আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা আছে। এমনকি এ মাসেই মডার্না, সিনোফার্ম এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার বড় অঙ্কের টিকা পাবো। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় জাপান থেকে দেশে আসবে।
সূত্র মতে, গত ২ জুলাই রাত ও ৩ জুলাই ভোরের মধ্যে মাত্র ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪৫ লাখ টিকা পায় বাংলাদেশ। যা একবারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টিকা প্রাপ্তি। এর আগে গত জানুয়ারিতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ক্রয়কৃত ৫০ লাখ টিকার চালান বাংলাদেশে পাঠায়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ কোটি টিকা আসবে। তিনি বলেন, আমরা জোরেশোরে শুরুর পরও কাঙ্খিত টিকা না পাওয়ায় তা ধরে রাখতে পারিনি। আশা করছি টিকার আর কোনো অভাব হবে না। আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাচ্ছি, আগামীতে আরও পাব। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি টিকা আসবে, যা ৫ কোটি মানুষকে দেয়া যাবে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের শুরুর দিকে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি টিকা নির্ধারিত সময়ে পাবে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা-অর্থনীতি-রাজনীতি একে অপরের পরিপূরক। সঠিক সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় না আনতে পারলে বাংলাদেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়বে। বিদেশী বিনিয়োগ অন্যত্র যাওয়ার পাশাপাশি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক গতিতে ছন্দপতন ঘটবে। মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। আবার সঠিক সময়ে টিকাদান না হলে একই পরিবারের কেউ টিকা পাবে, কেউ পাবে না। এতে টিকার কার্যকারিতা হারিয়ে যাবে। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকদের মতে, যথাসময়ে সবাইকে টিকার আওতায় না আনতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে বড় ক্ষতিতে পড়বে বাংলাদেশ। টিকার কার্যকারিতা হারাবে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বিদেশি বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন। তাই আগামী বছরটা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জুনের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে না পারলে রাজনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আর তাই টিকার জন্য জোরেশোরে নেমেছে সরকার।
গতকালও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সরকার টিকা কূটনীতিতে হেরে গেছে। সরকার শুধু আশ^াস দিয়ে বলে করোনার টিকা আসছে। কখন আসবে, কিভাবে আসবে বা কোথা থেকে আসবে তা বলতে পারছেনা। তাই করোনার টিকা নিয়ে দেশবাসীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
আর্থিকখাত নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরমের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অন্যান্য দেশের চেয়ে কিছুটা ইতিবাচক। তবে পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করছে কত দ্রুত গণহারে টিকার ব্যবস্থা করা যায়, তার ওপর। তিনি বলেন, এটি একটি বৈশ্বিক মহামারি তাই চাইলে একটি দেশের সবাই টিকা নিলেই হবে না। পারিপার্শ্বিকতাও চিন্তা করতে হবে। কারণ অন্য দেশ বা প্রতিবেশি ভালো না থাকলে নিজে টিকা নিয়ে লাভ নেই। তাই টিকার কূটনীতির মাধ্যমে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশকে আরও টিকা আনতে হবে। কারণ তাদের অর্থনীতিও আমাদের ওপর নির্ভর করবে। আবার আামদের দেশের একটি গ্রুপ টিকা নিল অন্যরা পেলো না। তাহলেও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। তবে সবার আগে দেশে সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হবে। সংক্রমণ কমাতে না পারলে এবং সবাইকে টিকার আওতায় আনতে না পারলে বিদেশীরা দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন না। একই সঙ্গে সবাইকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে পারলে দ্রুতই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, টিকা আনার অগ্রগতি নিয়ে আমরা আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। এখনকার গতি নিয়ে সন্তুষ্টির কিছু নেই। যেরকম আমরা জেনেছি প্রতিমাসে গড়ে ৫০ লাখের মত আসতে পারে। সেই হিসাবে ১২-১৩ কোটি মানুষের জন্য ২৬ কোটি ডোজ লাগবে। তাহলে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে তো ২০২৪ সাল লেগে যাবে।
গত মে মাসের বৈঠকে সংসদীয় কমিটি সেরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিল। বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, ভারত দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেজন্য কমিটি বলেছে, আইনি পথে আর যাব না।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবশ্য ইতোমধ্যে বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে দেশে দেশে অনেক পার্থক্য দেখা যাবে এবং এর প্রধান কারণ হবে টিকা বিতরণে ‘অসাম্য ও অন্যায্যতা’। তাই বাংলাদেশকে টিকা কূটনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে এবং টিকার বিভিন্ন উৎস তৈরি করতে হবে।
সূত্র মতে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রফতানি বন্ধ করে দিলে সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সরকার চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।
সূত্র মতে, কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ফাইজার-বায়োএনকেটের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এবং মডার্নার তৈরি ২৫ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে দেশে এসেছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কবে আসবে, তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এর বাইরে চীন উপহার হিসেবে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে এবং এই কোম্পানি থেকে কেনা টিকার একটি চালান দেশে এসেছে।
সংক্রমণ কমাতে করণীয়
বর্তমানে আমাদের প্রধান কাজ হলো স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা। সামনে ঈদ। ঈদের আনন্দ অবশ্যই থাকবে, কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যবিধির পরিসীমার মধ্যেই রাখতে হবে। যাঁদের দুই ডোজ বা এক ডোজ টিকা নেয়া হয়ে গেছে, তাঁদের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য। তাঁদের এমন ভাবনা ঠিক হবে না যে টিকা নেয়ার ফলে আর সংক্রমণের ভয় নেই। যত দিন পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যার অন্তত ৭০-৮০ শতাংশ মানুষের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা না হবে, তত দিন সংক্রমণের আশঙ্কা কমবেশি সবারই থাকবে। টিকা নিলেও তাঁদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং এ বিষয়ে সবার সচেতনতা দরকার।
টিকা প্রাপ্তি ও কতদিনের মধ্যে দেশের সকল মানুষকে এর আওতায় আনা সম্ভব হবে সার্বিক বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ও দিক নির্দেশনায় টিকা কূটনীতিতে পিছিয়ে পড়া থেকে অনেকটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এবং বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পাওয়ার সাড়া পাচ্ছি, তাতে আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।