Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে ফিরতে পারছে না অবৈধ কর্মীরা

মালয়েশিয়া সরকারের সুযোগ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেল কোয়ারেন্টিনের অর্থ মওকুফের দাবি

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

মালয়েশিয়া সরকার করোনা মহামারির মাঝে জননিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের স্ব স্ব দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটি থেকে অবৈধ কর্র্মীরা বিমান বন্দরে শুধু ৫শ’ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটে দেশে ফেরার সুযোগ পাবে। গত ৮ জুলাই মালয়েশিয়া সরকার এ নির্দেশনা জারি করেন। কিন্ত মালয়েশিয়া থেকে দেশে পৌঁছার সাথে সাথে ১৪ দিন হোটেল কোয়ারেন্টিনের থাকার নির্দেশনা জারি করেছে সরকার।

কঠোর লকডাউনের মাঝে কাজ-কর্ম না থাকায় অনেকেই হোটেল কোয়ারেন্টিনের প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা যোগাতে না পেরে দেশে আসতে পারছে না। দেশটিতে বসবাসকারী অবৈধ কর্মীরা হোটেল কোয়ারেন্টিনের অর্থ মওকুফ অথবা হোম কোয়ারেন্টিনের থাকার নির্দেশনা জারি করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া পাসপোর্টের অভাবে দেশটিতে বৈধতা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অবৈধ কর্মীরা। লকডাউন চলাকালে দেশটির পুলিশী ধরপাকড় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক অবৈধ কর্মী গহীন জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র এ তথ্য জানান।

কুয়ালালামাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট পেতে প্রবাসী কর্মীদের গলদঘর্ম। পাসপোর্টের জন্য মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে চলছে হাহাকার। প্রবাসী কর্মীরা ৬/৭ মাসেও পাসপোর্ট পাচ্ছে না। দালালদের মাধ্যমে তদবির করলে অনেকের ভাগ্যে দ্রুত পাসপোর্ট মেলে। পাসপোর্টের অভাবে মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় অবৈধ কর্মীরা বৈধতা লাভের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে পারছে না। বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কুয়ালালামপুরে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট হাতে পেতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। এতে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অসুস্থ্য প্রবাসীরা পাসপোর্টের অভাবে দেশে ফিরতে পারছেন না। জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাবুল গতকাল ইনকিলাবকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বর্তমান হাইকমিশনার গোলাম সরোয়ার আসার পর থেকে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে দেখা দেন না। কর্মীদের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের হাইকমিশন থেকে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

প্রাণঘাতি করোনা মহামারির কঠোর লকডাউনে মালয়েশিয়ায় ঘরবন্দি সাত লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মীর চরম দুর্দিন চলছে। ঘরবন্দি বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী অনাহার-অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছেন। কঠোর লকডাউনে অনেক প্রবাসী কর্মী দেশে আত্মী স্বজনের কাছে টাকা পাঠাতে পারছে না। গত বছর দেশটিতে নিযুক্ত সাবেক হাই কমিশনার মো. শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা করোনায় ঘরবন্দি অসহায় প্রবাসী কর্মীদের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক প্রবাসী কর্মীর মাঝে নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করা হয়েছিলেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যক্তিরা অসহায় প্রবাসীদের পাশে দাড়িয়ে ছিল। কিন্ত বর্তমানে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ অসহায় ক্ষুধার্ত প্রবাসী কর্মীদের কোনো খোজ খবর নিচ্ছে না এবং তাদের সহায়তায় নির্বিকার। এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার গোলাম সরোায়ারের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সবচেয়ে বেকায় দায় পড়েছে দেশটিতে বসবাসকারী প্রায় দু’লক্ষাধিক অবৈধ প্রবাসী কর্মী। কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে ঘর থেকে বের হলে স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবৈধ প্রবাসী কর্মীরা জিম্মিদাশায় পালিয়ে পালিয়ে বসবাস করছেন। করোনার মাঝে কঠোর লকডাউনে দেশটিতে ইমিগ্রেশন পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। অনেক অবৈধ কর্মী পুলিশী অভিযান এড়াতে দেশটির গহীন জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছেন।

বিএমইটির সূত্র জানায়, ১৯৭৮ সাল থেকে এযাবত দেশটিতে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৫ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এসব কর্মী দেশে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, ২০২০ সালে দেশটি থেকে প্রবাসী কর্মীরা ২১,৭৫২ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ২০১৯ মালে দেশটির প্রবাসী কর্মীরা ১৮,৩৫৪ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কমিউনিটির পক্ষ থেকে কঠোর লকডাউনে অসহায় ক্ষুধার্ত প্রবাসীদের জরুরি ত্রাণ সহায়তা দেয়ার পরামর্শ দিয়েও বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানা গেছে। অসহায় প্রবাসী কর্মীরা কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের একাধিক ফোন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছে না। মালয়েশিয়া থেকে ঘরবন্দি একাধিক প্রবাসী কর্মী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তি করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার সর্বত্র ১১ হাজার ৭৯ জন মানুষ করোনায় শনাক্ত হয়েছে। আর একই দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২৫ জন। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এযাবত মারা গেছে ৬ হাজার ৩৮৫ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিকও রয়েছে।
কুয়ালালামপুর থেকে অভিবাসী জহুরুল হক রেজা গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় মালয়েশিয়া সরকার গত ১ জুন থেকে কঠোর লকডাউন এর সময় আগামী ২১ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করেছে।

অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানে অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় অতীতের সকল সময়ের তুলনায় কঠিন অবস্থা ধারণ করেছে। লকডাউন এর কারণে সকল মিল-কারখানা ফ্যাক্টরির সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের কেউ কেউ পালিয়ে গহীন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, অভিবাসীদের এ কঠিন দুঃসময়ে একদিকে দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না অন্যদিকে নিজেদের খেয়ে না খেয়ে দিন পাড়ি দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বৈধ ও অবৈধ অভিবাসীরা মানবিক সাহায্যের আবেদন করেছেন নিজেদের জীবন রক্ষার্থে। কুয়ালালামপুর থেকে গতকাল প্রবাসী সাংবাদিক কায়সার হামিদ ইনকিলাবকে জানান, মালয়েশিয়া সরকারের কঠোর লকডাউনের কারণে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কর্মহীন পড়া প্রবাসীদের খাদ্য সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেডার্স এসোসিয়েশন মালয়েশিয়া। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয়দের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের সুনাম অর্জন করেছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী প্রিমিয়ার ঈগল ম্যানুফ্যাকচারিং এসডিএন বিএইচডি এর স্বত্ত্বাধীকারি মো. মুস্তাফিজ ও এ জে এইচস ফ্যাশন এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. নাহিদ হোসাইন।

গত সোমবার দুপুরে কুয়ালালামপুরের ডাং ওয়াঙ্গী পুলিশ স্টেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের’কে খাদ্য সহায়তা দেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ট্রেডার্স এসোসিয়েশন মালয়েশিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ