Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনে নারী

গাজীপুরের শ্রীপুর সড়ক : গ্রাম-শহরে সমানভাবে কাজ করছে এলজিইডি : প্রধান প্রকৌশলী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম


ভাওয়ালের গভীর অরণ্যের ভিতর দিয়ে দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে গেছে আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ। সবুজে ঘেরা এ সড়কেই দা, কোদাল ও লাঠি হাতে একদল নারী সড়ক পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন। নারীরা বাড়িতে যেমনি ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করেন, সৌন্দর্যবর্ধন করেন সড়কের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গাজীপুরের শ্রীপুরে গ্রামীণ সড়ক মেরামত, সৌন্দর্যবর্ধন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন নারীরা। গত বছর মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে নি¤œ আয়ের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে কর্মহীন হতে হয়েছে। কিন্তু এলজিইডির একটি প্রকল্পের নারী শ্রমিকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার এই দুঃসময়েও কাজ করে নিয়মিত মজুরি পাচ্ছেন।

জানা গেছে, এলজিইডির ‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩ (আরইআরএমপি-৩)’ এর আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এই প্রকল্পে যেসব নারী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছেন তারা প্রায় সবাই দুস্থ, অনেকে স্বামী পরিত্যক্তা। তাদের এই কাজে নিয়োগ দেওয়ার ফলে একদিকে যেমন বেকারত্বের অবসান হচ্ছে, অন্যদিকে সড়কের স্থায়িত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার সুফল ভোগ করছে স্থানীয় জনগণ। আর এসব কিছুই বাস্তবায়িত হচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামের মানবিক, সময়োপযোগী নির্দেশনা ও এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খানের নেতৃত্বে।

জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রামীন সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনসহ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন নারীরা। প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন নারীর একটি দল সপ্তাহের ৬দিন এসব কাজ করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে এলজিইডির আওতাভুক্ত বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে। নারী যে কেবল ঘরের ভেতর নয় বাইরেও পুরুষের মতো সকল কাজে সমান পারদর্শী সে প্রমাণটাই রেখে চলেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৮০জন সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ নারীকর্মী।

শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের আরএমএ সভাপতি হোসনে আরা বলেন, সাধারণত আমরা ছোটখাট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করি। কার্পেটিং এর উপর ঘাস জমে থাকলে সেগুলো তুলে ফেলি, সড়কের পাশে গর্তে পানি জমে থাকলে নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন করে দেওয়া, সেই গর্তগুলো ভরাট করা, সড়কের শোল্ডারে মাটি সরে গেলে সেখানে মাটি দিয়ে মেরামত করা,সড়কের পাশের ঝোপঝাড় কেটে দেয়া ইত্যাদি আমাদের কাজ। প্রহলাদপুর ইউনিয়নের স্বামী পরিত্যক্তা বজনা রানী দাস বলেন, মাসিক সাড়ে সাত হাজার টাকা বেতনে এই চাকুরি করি। এর মাঝে ২৪০০ টাকা ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চয় হিসাবে বাধ্যতামূলক জমা করতে হয়। এই কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে ১ সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবেই জীবনযাপন করছি। আমার একমাত্র সন্তানকে লেখাপড়া করাতে পারছি। তিনি জানান, এই প্রকল্প থেকে এলজিইডির মাধ্যমে অল্প টাকায় ঘরের পাশেই কিছু করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাসিক মজুরি থেকে যে ২৪০০ টাকা জমা হচ্ছে তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষে একবারে উত্তোলন করা যাবে। জমাকৃত টাকা একত্রে পেলে এসব প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য স্থায়ীভাবে আয়ের একটা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এলজিইডি সূত্র জানায়, দুই বছর ধরে এই প্রকল্প চলমান থাকলেও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান হিসাবে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী যোগদান করার পর প্রকল্পের কাজে গতি ফিরেছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লকডাউনের মধ্যেও সকল কাজ-কর্ম মনিটরিং করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর শ্রীপুর এর উপজেলা প্রকৌশলী এ জেড এম রকিবুল আহসান জানান, এলজিইডির ‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী-৩ (আরইআরএমপি-৩)’- এর আওতায় গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ যেমন পাকা সড়কের শোল্ডার, সড়কের ¯েøাপ, রেইনকাট মেরামত, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ফলে সৃষ্ট খাদ ভরাট, প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, জঙ্গল পরিষ্কার, ছোট ছোট ব্রীজ/কালভার্টের এপ্রোচ মেরামত ও সড়ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এলজিইডি গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক জানান, ‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী-৩ (আরইআরএমপি-৩)’ এর আওতায় সারাদেশের ৬৪ টি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারী কর্মী ৪ বছরের জন্য নিযুক্ত হয়ে সারা দেশে এলজিইডির আওতাধীন সড়কসমূহ বছরব্যাপী রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।

গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা ছাড়া অন্যান্য সকল উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারী কর্মী এই কর্মসূচীতে কাজ করছেন।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডি ঢাকা বিভাগীয় প্রধান ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মন্মথ রঞ্জন হালদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এলজিআরডিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী এবং এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের দিক-নির্দেশনায় সারাদেশেই এলজিইডি দুঃস্থ মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মহামারীর সঙ্কটকালে দুঃস্থ নারীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক আরইআরএমপি-৩ প্রকল্পটি সারাদেশের জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে এলজিইডি বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে শহরেও সমানভাবে কাজ করছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে যাতে এলজিইডিও ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম মহোদয়ের সার্বক্ষণিক কার্যকর নির্দেশনায় যুগোপযোগী নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ