পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা বাংলাদেশের মানুষকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার এই ভয়ঙ্কর ভ্যারিয়েন্ট। গণটিকা কার্যক্রম চলছে তারপরও প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৭৬৮ হাজার জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। যার শতকরা হার ৩১ দশমিক ১৪ শতাংশ। এটা সংক্রমণের নতুন রেকর্ড। এই সময়ে মারা গেছেন ২২০ জন। এরপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতার বালাই নেই। এ অবস্থায় পবিত্র ঈদুল আজহা আসছে। কোরবানির পশু কেনাবেচার হাট বসেছে। লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। এখন সকলের উচিত সতর্ক হওয়া। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এ অবস্থায় মানুষকে নিজেদের সতর্কতা অতীব জরুরি। তাদের আহ্বান সচেতন হোন, জীবন বাঁচান। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়ার চেয়ে নিজেকে রক্ষা করাই উত্তমপন্থা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষের বসবাস গ্রামে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ ডেল্টা। সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। কিন্তু অতীতের মতো এসব রোগ এমনিতে ভালো হয়ে যাবেÑ এমন ধারণার পাশাপাশি সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়সহ নানা কারণে উপসর্গ থাকার পরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করছেন না। এছাড়া গ্রামের মানুষের মধ্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা দেখা গেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ১৫ জুলাই থেকে শিথিল করা হচ্ছে বিধিনিষেধ। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আরও ভয়াবহ হলে দীর্ঘদিন থেকে নানা সীমাবদ্ধতায় থাকা দেশের স্বাস্থ্য খাত রোগীদের সামলাবে কি করে?
জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এখন যা পরিস্থিতি তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে কোরবানির ঈদের সময়। গরুর হাট ও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঈদের পর গ্রাম থেকে শহরে আরও করোনা বয়ে আনবে। আর ঈদের আগে যাবে শহর থেকে। শহরে ছাড়িয়ে করোনা এখন গ্রামে দাপট দেখাচ্ছে। তারমতে, ঈদের সময় যাতে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়, এটা দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি গ্রামে অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পরছেন না। তাদেরকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে।
এদিকে গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে করোনায় ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা দেশের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জাতির এ ক্রান্তিকালে মহামারি থেকে রক্ষায় দীর্ঘদিনের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার মধ্যেই নিজেদের উজার করে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষকে সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু কারো মুখে তাদের কাজের প্রশংসা বা পৃথক স্বীকৃতিও নেই। এমনকি মেলেনি অতিরিক্ত প্রণোদনা। বরং আমলাদের অত্যাচারে অনেক চিকিৎসক অতিষ্ঠ। করোনার সময় নিজেদের নিংড়ে দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে গুছিয়ে নিচ্ছেন, আর এমন সময়েই হঠাৎ নেমে আসছে বদলির খড়গ। চলমান লকডাউনেও এই বদলির খড়গ থেকে রেহাই পাননি চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গ্রামে করোনার সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতাকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন। তারা উপজেলা পর্যায়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সরবরাহ করাসহ চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে আরও উৎসাহ প্রদান করতে হবে। তারা বলেন, গ্রামের মানুষের সর্দি-কাশি-জ্বর হলে পরীক্ষা করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হলে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমামসহ সকল ধর্মের প্রতিনিধিদের কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি এলাকায় মাইকে কিংবা প্রতিনিধি দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করতে হবে। মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবেন না এবং প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদের ইমাম করোনা প্রতিরোধের বষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করবেন।
গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। চলবে কাল বুধবার ১৪ জুলাই পর্যন্ত। এরই মধ্যে ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা এসেছে। লকডাউনের মধ্যেই দেশে মৃত্যু ও সংক্রমণ প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। সামনে ঈদুল আজহা। তাই এই সময়ে বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে করোনা পরিস্থিতি কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অবশ্য বলেছেন, ঈদের সময় চলাচলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে। গরুর হাটকে নিরুৎসাহিত করে অনলাইন হাটের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঈদের সময় চলাচল এবং গরুর হাটে নিয়ন্ত্রণ আরোপের স্পষ্ট কোনো নীতিমালা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সারা দেশে গরুর হাট বসানোর পুরো প্রস্তুতি চলছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে এবার ১০টি গরুর হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে দক্ষিণে ১০টি এবং উত্তরে ১০টি।
সংক্রমণ কমাতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের কথা উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। করোনার এই সঙ্কটে জনগণকে বাঁচানোর জন্য বিএনপিসহ সবাইকে দলমত নির্বিশেষে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাইরাস দলমত চিনে না। তাই বিষোদ্গার আর সমালোচনার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপিকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেছেন, সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। সংক্রমণ রোধ করতে হলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় সারাদেশকে হাসপাতাল বানালেও কাজ হবে না। তিনি বলেন, সংক্রমণ গ্রামাঞ্চলে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। আর গ্রামের মানুষ করোনাকে স্বাভাবিক জ্বর-সর্দি ভাবছে। রোগীর পরিস্থিতি জটিল হলেই হাসপাতালে আসছেন, কিন্তু ততক্ষণে আর চিকিৎসকদের কিছুই করার থাকছে না। তিনি বলেন, প্রতিদিনই দেশের কোনো কোনো হাসপাতালে শয্যা, হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা, আইসিইউ বেড, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেÑ এভাবে চলতে থাকলে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল করে ফেললেও রোগী রাখার জায়গা দেয়া যাবে না। তাই সংক্রমণ রোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অন্যথায় এ মহামারি রোধ করা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অন্য জেলায় থেকে অনেক রোগী ঢাকায় চলে আসছে। অন্যান্য জেলায় যেমনÑ খুলনা, যশোর, রাজশাহী, রংপুরসহ প্রায় সব বিভাগ এবং জেলাগুলোতে নতুন করে আরও কিছু হাসপাতাল নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যেন আমরা বেডের সংখ্যা বাড়াতে পারি। শুধু বেড বাড়ালে চলবে না, আমাদের জনবলও লাগবে। বেড বাড়ানোরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা তো পুরো দেশকে হাসপাতাল বানাতে পারব না। আমাদের সেটা বুঝতে হবে। বেড বাড়ালেও আবার জনবল কোথা থেকে পাবো। সেই চিন্তা করেও আমরা গত কয়েকদিনে চার হাজার নতুন চিকিৎসক ও চার হাজার নার্স নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এই করোনাকালীন সময়ে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার নতুন লোক কাজ করছে করোনার সেবাতেই।
২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ হাজার ৭৬৮ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তের হারও এখন সর্বোচ্চ ৩১ ২৪ ভাগ। চিকিৎসকরা বলছেন, লকডাউন চললেও ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। বড় সড়কে যানবাহন চলছে না, এটা দেখে বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে না। কারণ রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই আগের মতো যানজট লেগে আছে, অলিগলিতে লোকজন আড্ডা দিচ্ছেন, আর গ্রামেও একই অবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি অনেকেই মানছেন না এবং মাস্ক পরায় ব্যাপক অনীহা।
ডা. মুশতাক মনে করেন, এই লকডাউনে কতটা সংক্রমণ কমেছে তা ১৪ জুলাইর পর বোঝা যাবে। আর মৃত্যু কমছে কি-না তা বুঝতে ১৪ জুলাইয়ের পর আরো দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। আশা করি, কিছুটা সুফল পাওয়া যাবে। তবে আরো বেশি সুফল পেতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করে চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোরভাবে করতে হবে। সর্বোপরি করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে সবাইকে আরও অধিক সচেতন হতে হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ঈদের সময় সবকিছু ঢিলেঢালা হয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তিনি মনে করেন, ঈদের সময় তাই কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। সেটা হলে এখনকার লকডাউনের কোনো ফলই স্থায়ী হবে না। সেটা করতে হলে গরিব মানুষকে খাদ্য আর অর্থ সহায়তা দিতে হবে। তা না হলে তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না। তিনি আরো বলেন, ৫০ ভাগ বলা হলেও বাস্তবে মোট আক্রান্তের ৭০ ভাগ এখন গ্রামে। শুরুতে ঢাকা হটস্পট হলেও এখন প্রতিটি জেলা উপজেলাই হটস্পট। সীমান্তে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আটকাতে না পারায় এই পরিস্থিতি হয়েছে। গ্রামে অনেক রোগীর তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারা হাসপাতালেও যাচ্ছেন না। টেস্টও করাচ্ছেন না। সর্দি-কাশি নিয়ে স্বাভাবিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই এবারের লকডাউনের উদ্দেশ্য হলো ঢাকায় যেন গ্রামের মানুষ আসতে না পারে। তবে তার ফল বুঝতে আরো সাত থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী সচেতন হলে লকডাউনে সংক্রমণ কমবে। কিন্তু সেটা শতকরা পাঁচ ভাগের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। তাদের মতে, সেটা করতে হলে লকডাউন অব্যাহত রাখতে হবে। ঈদকে বিবেচনা করলে চলবে না। যদি ঈদের সময় ঢিলেঢালা হয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। বাংলাদেশে গড়ে এখন প্রতিদিন ১৩ হাজার আক্রান্ত হন। কিন্তু তাদের মধ্যে হাসপাতালে যান পাঁচশর মতো। বাকি যারা বাড়িতে থাকেন, তাদের ব্যাপারে মনিটরিং নেই। সেই কারণেও সংক্রমণ বাড়ছে। করোনা কার্যকরভাবে ঠেকাতে হলে গণটিকার কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।