পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। এ সময়ে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা রাজধানীর গণপরিবহনসহ বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার সব বাস। তারপরও সবকিছু উপেক্ষা করেই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। ভিড় করছেন ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ মুখে।
সরকার ঘোষিত কঠোর লাকডাউনে রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা থাকার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল রাজধানীর আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। হাজার হাজার মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। সেখানে সহজেই মিলছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল।
পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে চুয়াডাঙ্গা যাচ্ছেন মিলন। আমিনবাজার এসে তিনি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আগেভাগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ঢাকায় একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। কোম্পানি বন্ধ রয়েছে। বেতন পাচ্ছি না। বসে বসে খেয়ে হাতের জমানো টাকাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। তবে সরকারের কড়াকড়িতে ভোগান্তি হচ্ছে।
আমাদের সংবাদদাতা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চেপেই যাত্রীরা যাচ্ছেন আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটের দিকে। এজন্য প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় যাত্রীদের গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার গিয়েই গাড়ি ধরে বাড়ির পানে ছুটছেন। মহাসড়কে গাড়ি ছুটে চললেও খুব ভিড় দেখা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন ফেরি ঘাটে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যাচ্ছে।
টঙ্গী থেকে মো:ঢ় হেদায়েত উল্লাহ জানান, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকা ও টঙ্গীতে বিভিন্ন পেশার কর্মরত মানুষ নাড়ির টানে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে যেতে শুরু করেছে। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ইজিবাইক, হোন্ডা ও অটোরিকসায় করে কর্মজীবি এইসব মানুষ ঈদের আগের অতিরিক্ত বিড়ম্বনা এড়াতে কিছুটা আগেভাগেই ঢাকা ও টঙ্গী ত্যাগ করছেন। গতকাল সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা আব্দুল্লাহপুর, স্টেশন রোড, চেরাগ আলী মার্কেট ও গাজীপুরা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে রওয়ানা দেয়া যাত্রীদের সাথে কথা বলে এইসব জানা গেছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস না চললেও উত্তরার আব্দুল্লাহপুর হয়ে টঙ্গী ও আশুলিয়া সড়কে মালবাহী ট্রাক, লরি ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, ইজিবাইক ও অটোরিকসায় যাত্রীসাধারণকে স্বল্প ও দূর গন্তব্যে চলাচল করতে দেখা গেছে। আশুলিয়া ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশ সদস্যগণ দাড়িয়ে থাকলেও যাত্রীবাহী এইসব যানবাহন চলাচলে তেমন কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি। আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে গতকাল দুপুরে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম তার দুই ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ফেনীর দাগনভূঁইয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তিনি বলেন, গত দশ দিন ধরে লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ। ব্যবসা বাণিজ্য নেই। ঢাকায় থেকে লাভ কী? তারজন্য আগেভগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি। পরিবহন শ্রমিক মহর আলী তার পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে টঙ্গীর গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে অটো রিকসায় উঠেন। কোথায় যাবেন প্রশ্ন করলেই বলেন, নেত্রকোনায় যাব। রিকসায় কীভাবে এতদূর যাবেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আল্লাহর নামে রওয়ানা দিলাম ভাই, যাইতে যাইতে একটা ভাও (এক ব্যবস্থা) অইবোনে।’
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা শাহীন তারেক জানান, ঈদকে সামনে রেখে লকডাউনের মধ্যেও পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ বিকল্প যানবাহন হিসাবে প্রাভেটকার, মাটরসাইকেল, অটো ইত্যাদি করে যাতায়াত করছে। পাটুরিয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের সুযোগে সাধারণ যাত্রীরাও ফেরি পার হচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা তরিকুল ইসলাম নয়ন জানান, চলমান লকডাউনের ঢাকার প্রবেশমুখ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাাইল মোড় এবার নেই কোনো যাত্রীদের চাপ। রাস্তাঘাট দূরপাল্লার বাস না থাকায় অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। তবে বিকল্প যানে মানুষ বাড়ি ফিরছেন। মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল এসব ছোট ছোট যানে মানুষ বাড়ি যাচ্ছে বলে রাস্তায় খুব ভিড় দেখা যাচ্ছে না। দেশের পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৬টি জেলার লোকজন এই শিমরাইল মোড় দিয়ে যাতায়াত করে। প্রতিবছর ঈদের আগে থেকে এখানে মানুষের ঢল নামে। তবে এবার লকডাউনের কঠোর বিধি নিষেধেরে কারণে যাত্রীরা বিভিন্নভাবে বাড়ি ফিরছেন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা সংবাদদাতা মো. শওকত হোসেন জানান, কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই রাজধানী ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে মানুষ। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌরুটে বিআইডব্লিউটিসির ঘোষণা উপেক্ষা করে চতুর্থ দিনে প্রচুর ঘরমুখো মানুষ ও ব্যক্তিগত যানবাহন পদ্মা পার হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে উভয়মুখী মানুষ করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে ফেরিতে যাত্রীবাহী গাড়ি ও যাত্রী পরাপার হতে দেখা যায়। পুলিশের চেকপোস্ট, ঘাট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আর কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে যাত্রীদের ফেরিঘাটে আসতে দেখা যায়। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ট্রাক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানে চড়ে বা পায়ে হেঁটে যাত্রীরা ঘাটে পৌঁছায়।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার আলমগীর জানান, লকডাউনে ঢাকায় কাজ নেই হাতে টাকা পয়সা নাই বাসা ভাড়া দেব কীভাবে খাব কী তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি। শিবচরের জামাল উদ্দিন জানান, মেস বাসায় থেকে বঙ্গবাজার রেডিমেড কাপড়ের দোকানে চাকরি করি মনে করছি ১ সপ্তাহ লকডাউনের পরে মার্কেট খুলব এখন দেখি আবার বাড়াইছে আবার শুনতাছি কারফিউ দিবো তাই মালিক বলছে দোকান খুললে আসতে তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ঢাকা থেকে শিমুলিয়া ঘাট কিভাবে আসলেন জানতে চাইলে যাত্রী জোবায়ের বলেন, বাবুবাজার থেকে কদমতলী এসে অটোরিক্সয় ইকুরিয়া এসে মোল্লার বাজার দিয়ে বেতকা বালিগাঁও হয়ে ভেঙে ভেঙে মাওয়া চলে আসছি এদিক দিয়ে কোনো চেকপোস্ট নাই।
ঘাট কর্তৃপক্ষ জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা ও লকডাউনের সময় বৃদ্ধিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে ঘাটে পৌঁছাচ্ছে। এরপর নির্দেশনা উপেক্ষা করে ফেরিতে নদী পার হচ্ছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের পারাপার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসির) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহম্মেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে সকাল থেকে ১১টি ফেরি চলাচল করছে। সকালের দিকে ফেরিতে যাত্রীর চাপ ছিল এখন কিছুটা কম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।