পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আগামী ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিনের জন্য শিথিল করতে যাচ্ছে সরকার। আজ মঙ্গলবার যে কোনো সময় নতুন কিছু বিধি যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তবে ঈদের পর আবারও ১৪ দিনের জন্য শাটডাউনে যাচ্ছে সারাদেশ। এই ৮ দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলবে। একই সঙ্গে সীমিত পরিসরে দোকানপাট, শপিংমল খুলবে। তবে বন্ধ থাকবে বেসরকারি সব অফিস। আর সরকারি অফিস চলবে ভার্চুয়ালি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিধিনিষেধ বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমতি দিয়েছেন। সেই সামারি (নথি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এসেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সামারি (নথি) অনুমতি মিললেই যেকোনো সময় জারি হবে প্রজ্ঞাপন। চলমান লকডাউন আগামী ১৪ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আগামী ২১ জুলাই বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিয়ে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঈদে বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেয়ার শর্তে গাড়ি চলাচলের সুবিধা দেয়া হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় তথ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিনের জন্য শিথিল করা হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আজ প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
গত রোববার অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় জানানো হয়, আবহাওয়া অধিদফতর, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, দূর অনুধাবন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী হিজরি ১৪৪২ সনের জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। গতকাল থেকে জিলহজ মাস গণনা শুরু হবে। আগামী ২১ জুলাই দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদ উপলক্ষে শিথিল শাটডাউনের আট দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক আসন ফাঁকা রেখে চলবে সব গণপরিবহন। খুলে দেয়া হবে দোকানপাট, শপিংমল। এ সময় সরকারি অফিস ভার্চুয়ালি খোলা থাকলেও বন্ধ থাকবে বেসরকারি অফিস। ১৫ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ২২ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত শাটডাউন শিথিলের আদেশ কার্যকর থাকবে। ঈদের পর আবারও দুই সপ্তাহের শাটডাউনে যাবে দেশ। তবে ২০ থেকে ২২ তারিখ ঈদের ছুটি। আর ২৩ তারিখ শুক্রবার এবং ২৪ তারিখ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এর পর থেকে আবারও ১৪ দিনের জন্য শাটডাউনে যাচ্ছে সারাদেশ।
গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ ঈদের আগে আগামী ১৫ জুলাই থেকে অনেকটাই শিথিল হয়ে যাচ্ছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, দোকানপাটসহ প্রায় সবকিছুই চালুর অনুমোদন দেয়া হতে পারে। একই সঙ্গে কোরবানির হাটও চলবে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুয়ায়ী কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলা হতে পারে। প্রজ্ঞাপনে বিষয়গুলো পরিষ্কার করা হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকবে শপিংমল, দোকানপাট। সীমিত পরিসরে চালু থাকবে গণপরিবহনও।
গতকাল রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় লঞ্চ চলাচল করবে কি নাÑ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধিবিষয়ক একটি কমিটি রয়েছে। তারা লঞ্চ চলাচলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। যেহেতু এখন দেশে করোনার মহামারি চলছে, সেহেতু ঈদে লঞ্চ চলবে কি না তা মন্ত্রিপরিষদই সিদ্ধান্ত নিবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। প্রথমে ৭ জুলাই পর্যন্ত তা থাকলেও পরে তা আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর হয়, যা আগামী বুধবার (১৪ জুলাই) শেষ হচ্ছে। এ রকমভাবে মোট ২১ ধরনের বিধিনিষেধ চলছে। বিধিনিষেধের শর্তগুলো হচ্ছেÑ সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে পরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকান বন্ধ থাকবে। সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমনÑ কৃষিপণ্য ও উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সরকারি- বেসরকারি, গণমাধ্যম প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরসমূহ, বিমান, সমুদ্র, রেল ও স্থল এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন, সৎকার ইত্যাদি। কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টিকা কার্ড দর্শন সাপেক্ষে টিকা দেয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি অনলাইন, টেকওয়ে করতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলো এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন, যা এখনো চলমান বয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।