Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এবার হাসপাতালের খাদ্য নিয়ে সংবাদ করে গ্রেপ্তার সাংবাদিক, প্রতিবাদের ঝড়

স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে সামাজিক মাধ্যমে

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ৮:৫৯ পিএম

এবার ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের খাবারে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকে এ নিয়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ করায় একের পর এক সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে নেট দুনিয়ায়।

সর্বশেষ সরকারি হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ করে গ্রেপ্তার হন দৈনিক ইত্তেফাক ও ইনডেপেনডেন্ট টেলিভিশনের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে রোগীদের খাবার নিয়ে ‘দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করায় তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিককে জামিন দিয়েছে আদালত। রোববার দুপুরে তানুকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ, কিন্তু রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিন দেয়।

তানুকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। সেই সাথে তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হতে দেখা যায়।

ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ফ্রিতানু লিখে জাকির মিয়া আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘‘হাতকড়া পরিহিত কুখ্যাত অপরাধী! দেশ যখন আর্জেন্টিনার সাফল্যে আনন্দে ভাসছে, ঠিক তখনই প্রশাসনও আরেকটা বড় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ছবিতে হাতকড়া পরিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে একজন কুখ্যাত অপরাধীকে! তার অপরাধের কোন সীমা পরিসীমা নাই! তিনশো টাকা বরাদ্দ থাকলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে সত্তর টাকার, এই সংবাদটা এই অপরাধী ছেলেটা তুলে ধরেছিল। এরকম কাজ মানুষ করে! একে কঠিন সাজা দিন, একদম ছাড়বেন না। কেউ বিচার চাইবেন না, এখানে একজন বড় অপরাধী শুয়ে আছে! #সাংবাদিকদের বিভক্তিই নির্যাতনের কারণ! #কিন্তু যারা দুর্নীতি করে তাদের খোঁজ কে নেবে? #তানু ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি চাই.।’’

মোঃ মমিনুর রহমান ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘কি পরিস্থিতি রে ভাই। চোর, লুটেরা আর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে গেলেও কেস খেতে হয়।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে কিভাবে মানুষ? সরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র সারাদেশেই এক, শুধু লুটপাট। সরকার যেভাবে খাদ্য, ওষুধ আর সরঞ্জাম প্রতিবছর বরাদ্দ দেয় তার বেশিরভাগই লুটেরা লুটে খায়। অবিলম্বে সাংবাদিকের মুক্তি আশা করছি। আর যেই হাসপাতালের দুর্নীতি তুলে ধরেছে সেই হাসপাতালেই তাকে নেয়া রহস্যময়!’’

হাসানুর রহমান সুমন নিন্দা জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘সব সম্ভবের দেশ আমাদের। দূর্নীতি নিয়ে নিউজ করলে সাংবাদিক গ্রেফতার, সরকারি অফিসের দূর্নীতির ফাইল প্রকাশ করলে গ্রেফতার, নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিউজ করলে রক্তাক্ত শরীর। কিন্তু বরাবরই সেই দুর্নীতিবাজরা আইনের চোখে ধোঁয়া তুলশী পাতা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা তো এখন সরকারের চক্ষুশুল মনে হচ্ছে। অথচ সাংবাদিক নাকি দেশের চতুর্থ স্তম্ভ।’’

তানুকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে নজরুল ইসলাম নাসির লিখেছেন,‘‘তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কলম চালানোর কারণেই তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। সেখানে ভালো করে তদন্ত করলে বড় বড় দুর্নীতিবাজ বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই।’’

স্বাস্থ্য খাতের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর আয়া থেকে শুরুকরে ডাক্তার ও পরিচালনা কমিটি পর্যন্ত সবাই রাজার হালতে চাকুরীরত।তাদের সাথে রোগ বিষয়ে সাধারণ কোন কথা বলতে গেলে ও হয়রানির শিকার হচ্ছেনা এমন মানুষ নেই বললেই চলে।বর্তমানে স্বাস্থ্যখাতের ডাকাতি দেশের অন্যান্য খাতকে টপকে শীর্ষে রয়েছে। এমনটা হওয়ার কারণ হচ্ছে সরকারের হাইব্রিড অনুপযুক্ত (আনফিট) ব্যক্তিদের নিয়োগ। এমতাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে পারে। চিন্তার বিষয় যেখানে সংবাদ কর্মীরা অনিরাপদ সেখানে সাধারণ মানুষ কতটুকু নিরাপদ। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি পাশাপাশি লাইসেন্সধারী দূর্নীতিবাজ ডাকাতগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করি।’’

আবুল কাশেম লিখেছেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় প্রতিবাদ লিপি পাঠাবে এটাই নিয়ম৷ এজন্য সংবাদকর্মীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার অগণতান্ত্রিক৷ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’’



 

Show all comments
  • গাজি সফিক ১১ জুলাই, ২০২১, ৯:১৯ পিএম says : 0
    সব সরকারি হাসপাতাল এক রকম নয়।আমি গত রমজানে আগে গাজিপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ওখানকার খাবার, আমার খুব ভাল লেগেছিল।তাই আমি ঐ খাবার খেয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছিলাম। আমার তরফ থেকে ওনাদের অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু কেন জানিনা, গুটি কয়েক হাসপাতালের অনিয়ম শুনলে, মনটা নিতান্তই খারাফ হয়ে যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Dadhack ১১ জুলাই, ২০২১, ১০:১১ পিএম says : 0
    ও আল্লাহ এই লুটেরা এবং দেশদ্রোহী দের থেকে আমাদের দেশকে বাঁচান এবং ওদেরকে করোনা দিয়ে বিদায় করে দেন...আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম যে আমাদের দেশে কেউ অন্যায় কাজ করতে পারবে না কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার এই পর্যন্ত সভায় প্রচন্ডভাবে অন্যায় কাজ করছে কেউ কোন কথা বললে তাদেরকে হত্যা খুন গুম এমন ভাবে অত্যাচার করা হয় তারা পঙ্গু হয়ে সারা জীবনের মতো বেঁচে থাকে
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Rajib Hossain ১১ জুলাই, ২০২১, ১০:২০ পিএম says : 0
    গাজি শফিক ভাই- আপনি হসপিটালের খাবার খেয়েই সুস্হ হয়ে গেছেন! ভণ্ডামির একটা শিমা থাকা দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ