বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অবশেষে লক্ষ্মীপুরের সেই অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে ঘরে তুলেছেন ছেলেরা। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়ে বাবার প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়েছে স্বীকার করে ৯৫ বছর বয়সী বাবা শফিকুল ইসলামকে ঘরে তুলে নিলেন তারা। শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে বোনের বাড়ি (বৃদ্ধার মেয়ে) থেকে নিজেদের সেই 'স্বপ্ন মহল' বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। একই সঙ্গে বাবার সেবায় সব ছেলের সমান অংশিদারের ভিত্তিতে ভূমিকা রাখার অঙ্গিকারসহ আর কখনো এমন অবহেলা হবে না মর্মে মুচলেকা দেন তিন বিত্তবান ছেলে।
বৃদ্ধের ছেলে শাহ আলম ও আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অসুস্থ বাবাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ভুল করেছি। এখন থেকে বাবা আমাদের কাছেই থাকবেন। তাঁর সেবাযত্ন আমরাই করব। নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে।’
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা পাটওয়ারী বলেন, ‘বৃদ্ধ সফিকুলের ছেলেরা গিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে নিয়ে এসেছে। এখন তিনি বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ঘরেই আছেন। ভবিষ্যতে ফের এমন কোনো কাজ করবেন না বলে সফিকুলের ছেলেরা লিখিত মুচলেকা দিয়েও জানিয়েছেন।’
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌর ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অসুস্থ বৃদ্ধ শফিকুল ইসলামকে তার বিত্তবান ৩ ছেলের দ্বন্দ্বে শুক্রবার ঘর থেকে বের করে খোলা আকাশের নিচে উঠানে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমের খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিন্দার ঝড় উঠে সর্বত্র। পরে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দের নির্দেশনায় ঘটনাস্থলে যান এনডিসি রাসেল ইকবাল। এসময় তার বড় মেয়ে সুরাইয়া এসে বাবার সেবা শুশ্রুষার দায়িত্ব নেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনের গাড়িযোগে মেয়ের বাড়িতে পৌঁছানো হয়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে বৃদ্ধ বাবার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তিন বিত্তবান ছেলেকে নিয়ে নানা মন্তব্য করেন অসংখ্য মানুষ। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মামমুনুর রশিদকে পাঠান। পরে মামুনুর রশিদ স্থানীয় কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফাসহ বৃদ্ধের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (বিজিবি সদস্য), আরেক ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শাহ আলম ও অন্যজন প্রবাসী আলমগীর হোসেনকে নিয়ে বৈঠক করেন। এসময় বৃদ্ধের ছেলেরা তাদের বাবার সঙ্গে অমানবিক আচরণ হয়েছে স্বীকার করে নিজেদের ভুলের ক্ষমা চান। এসময় তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়। বাবার সেবায় সব ছেলের সমান অংশিদারের ভিত্তিতে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকারসহ আর কখনো এমন অবহেলা হবে না মর্মে স্বাক্ষর করেন তারা। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়া হয় ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধ শফিকুলকে বাড়িতে নিয়ে আসার। শনিবার দুপুরে ছেলেরাই তাদের বাবাকে বোনের বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। এখন বাবার সেবায় ব্যস্ত তারা।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, বৃদ্ধ বাবা শফিকুলের ব্যাপারে প্রশাসনিক নজরদারি আছে। ঘটনার পর তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সন্তানদের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। তাকে তার ছেলেদের ঘরে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি সমাজের জন্য শিক্ষনীয় একটি ঘটনা। পিতা মাতার ভরণ পোষণ আইন রয়েছে। প্রত্যেক সন্তান তাদের পিতা মাতাকে স্বযত্নে রাখুক এটিই আমরা চাই। যেখানেই অবহেলা করা হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত বৃদ্ধ শফিকুলের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। দীর্ঘদিন যাবত তিনি বার্ধ্যকজনিত রোগে ভুগছেন। দুই বছর আগে তিনি তার সম্পত্তি সন্তানদের ভাগ করে দিয়ে দেন। তার সকল ছেলেই প্রতিষ্ঠিত ও সমাজে বিত্তবান হিসেবে পরিচিত। সবারই নিজস্ব বাড়ি রয়েছে এলাকায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।