Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পুঁজি বাড়ল তিন হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

নতুন করে করোনার ভয়াবহতা দেখছে বাংলাদেশ। এ কারণে কঠোর লকডাউন দিয়েই নতুন অর্থবছর শুরু হয়। তবে করোনার মধ্যেও নতুন অর্থবছরের প্রথম সপ্তাহটি ভালো ভাবে পার করলো দেশের পুঁজিবাজার। দুদিন উত্থান আর দুদিন দরপতনের মধ্য দিয়ে নতুন অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম সপ্তাহ পার করল দেশের পুঁজিবাজার। আলোচিত সপ্তাহে সূচক, বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম এবং লেনদেনও বেড়েছে। আর তাতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও।
বেশিরভাগ শেয়ারের দাম ও সূচক বাড়ায় ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বা বাজার মূলধন দুই হাজার ৯০০ কোটি চার লাখ ৯৬ হাজার ৮৩০ টাকা বেড়ে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ১৮২ কোটি ১৮ লাখ ৬৫৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ২৮২ কোটির ১৩ লাখ তিন হাজার ৮২৯ টাকা।
ডিএসইর তথ্যমতে, বিদায়ী সপ্তাহে (৫ জুলাই-৮ জুলাই) ডিএসইতে মোট চার কার্যদিবসে ছয় হাজার ৪১০ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮৮ টাকা লেনদেন হয়েছে; যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৭৮৬ কোটি চার লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৫ টাকা বেশি। শতাংশের হিসেবে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। এর আগের সপ্তাহেও চার কার্যদিবসে লেনদেনে হয়েছিল পাঁচ হাজার ২৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৩৩ টাকা। করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩০টির, কমেছে ১৩৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টি কোম্পানির শেয়ার দাম। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছিল ১৯৭টির, কমেছিল ১৬২টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির।
বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৬২ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ২১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৩৯ পয়েন্ট বেড়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বাড়ার শীর্ষে ছিল সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, রেকিট বেনকিজার, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস, আমান ফিড, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, এপোলো ইস্পাত, ইনফরমেশন সার্ভিসেন, বিকন ফার্মা, আইটি কনসালটেন্ট এবং সিলকো ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড।
লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- বেক্সিমকো লিমিটেড, লাফার্জহোলসিম, কেয়া কসমেটিকস, এমএল ডাইং, লঙ্কা বাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফিড মিলস, আমান ফিড, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, ম্যাক্সনস স্পিনিং মিলস এবং ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২৮৬ কোটি তিন লাখ ৭৩ হাজার ৯৪০ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৮৬ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ২৩৪ টাকা। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন কমেছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২১৩টির, কমেছে ১১২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে সিএসইর প্রধান সূচক ২০৬ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ২০১০ সালের ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বরাদ্দকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বিশেষ কোটার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। নতুন করে যাতে কোটার মেয়াদ না বাড়ানো হয় সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ গোষ্ঠী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে আসছে। আর আইপিওর এই কোটা যুগ ধরে চলতে পারে না। তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়াও এই কোটা পদ্ধতি করা হয়েছে, যখন আইপিওতে বিনিয়োগকারীরা লটারিতে খুব বেশি শেয়ার পেত না। কিন্তু আইপিওর নতুন পদ্ধতিতে এখন সবাই শেয়ার পাচ্ছেন। ফলে এখন আর ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কোটা রাখাও প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যারয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, এখন আর বিশেষ কোটার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। যেহেতু ৩০ জুন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কোটার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ফলে নতুন করে আর বাড়ানোর উচিত নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার প্রফেসর শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আইপিওর ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় এখন খুব বেশি আগ্রহ নেই। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর বিশেষ কোটার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এ সুবিধা তো অনন্তকাল দেওয়া যাবে না, তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতি অবিচার করা হবে। কী করা যায় বিষয়টি নিয়ে কমিশন ভাবছে।
জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০২০ সালের ১ জুলাই পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে বিশেষ কোটা সুবিধা এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল। যার এর মেয়াদ শেষ হয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পুঁজিবাজারের মহাধস কাটিয়ে উঠতে ২০১২ সালের মার্চে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বা স্কিম ঘোষণা করে সরকার। ওই স্কিমের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা সুবিধা রাখা হয়। এরপর টানা নয় বছর এই কোটা সুবিধা ভোগ করেছেন গুটি কয়েক বিনিয়োগকারী।
সার্বিক বিষয়ে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আইপিওর বিশেষ কোটা মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এ সময়ের মধ্যে যেসব কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা সুবিধা থাকবে। সেই হিসেবে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কোটা থাকবে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইপিওর শেয়ার বণ্টনের খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্থির মূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে, সেসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা হবে ২০ শতাংশ শেয়ার। মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য থাকবে ১০ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকবে ৭০ শতাংশ শেয়ার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ