পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে জ্বরব্যাধি বেড়ে গেছে। ঘরে ঘরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। এমনো বাড়ি রয়েছে যে ৬ সদস্যের পরিবারের সবাই জ্বরে আক্রান্ত। জ্বরে আক্রান্ত এসব রোগীর করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। ফলে তাদের করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ তা জানা যায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষের করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয় তাতে সকলের নমুনা পরীক্ষা করতে ১০ বছর লেগে যাবে।
মূলত গ্রামের মানুষের করোনার নমুনা পরীক্ষা এখনো শুরুই হয়নি। ফলে আক্রান্ত রোগীরা জ্বরের ওষুধ খাচ্ছেন। এর আগে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তিবাসীদের মধ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ঢাকায় ৭১ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, নির্দিষ্ট এই এলাকাগুলোতে কী পরিমাণ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে একটা ধারণা মিলছে এই জরিপের ফলাফলে। আইসিডিডিআর’বি বস্তিগুলোতে সমীক্ষা চালিয়েছিল। কিন্তু গ্রামে এখনো করোনা নিয়ে কোনো নমুনা পরীক্ষা, গবেষণা কিছুই হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ৭টি বিভাগের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা থেকে জিনোম সিকোয়েন্সে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৭টি বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৫০টি নমুনায় ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট বি ১৬১৭ পাওয়া গেছে। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণে জর্জরিত এখন পুরো বাংলাদেশ। গত ৯ দিনে মারা গেছেন ১৫০১ জন আর আক্রান্ত ও শনাক্ত হয়েছেন ৮৭ হাজার ২৭৫ জন। ইতোমধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, বর্তমান সংক্রমণে ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্টই বেশি।
জানতে চাইলে সরকারের পাবলিক হেলথ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ভারতে যেরকম আচরণ করেছে, বাংলাদেশেও তা-ই করছে। মানুষকে অধিক হারে সংক্রমিত করছে। আবার অনেকেই সংক্রমিত হয়ে বাড়িতেই থাকছেন। সংক্রমিত হওয়ার পর বুঝতে পারছে না, হাসপাতালে আসতেও দেরি করে ফেলছেন, যার ফলে দ্রুত মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে। এখন আমাদের দেশের সর্বত্রই ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট আছে।
রংপুরের পীরগাছা মহিলা কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক আমিনউল্লাহ জানান, তার গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে ৪ থেকে ৫ জন জ্বরে আক্রান্ত। রাজশাহীর পদ্মার চরের আবদুল হাদি জানান, চরাঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতে সর্দি-জ্বরের রোগী রয়েছে। কুড়িগ্রামের একটি বীমা কোম্পানির প্রধান মশিউর রহমান জানান, শহরের ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বরের রোগী। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, গ্রামের ঘরে ঘরে রোগী। অধিকাংশই জ্বরে আক্রান্ত। কিন্তু করোনার নমুনা পরীক্ষা না থাকায় কেউ বুঝতে পারছেন না তাদের করোনা পজেটিভ না নেগেটিভ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুলাই নতুন করে ৮ হাজার ৩০১ জনের শরীরে ডেলটা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এরপর ২ জুলাই ৮ হাজার ৪৮৩ জন, ৩ জুলাই ৬ হাজার ২১৪ জন, ৪ জুলাই ৮ হাজার ৬৬১ জন, ৫ জুলাই ৯ হাজার ৯৬৪ জন, ৬ জুলাই ১১ হাজার ৫২৫ জন, ৭ জুলাই ১১ হাজার ১৬২ জন, ৮ জুলাই ১১ হাজার ৬৫১ জন এবং গতকাল ৯ জুলাই ১১ হাজার ৩২৪ জন আক্রান্ত-শনাক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ গত ৯ দিনে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮৭ হাজার ২৭৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। তার আগের সপ্তাহে ৩৫ হাজার রোগী শনাক্ত হলেও পরে তা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার সঙ্গে মৃত্যু বেড়ে যায় ৪৬ শতাংশ। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে হাসপাতালে খালি বেড আর আইসিইউর সংখ্যা। তাছাড়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারাদেশের ১৫ হাসপাতালে ভর্তি আছেন শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী।
জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, নওগাঁ, নোয়াখালী, পাবনা, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও জেলায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনায় ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই জেলাগুলো ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়া দেশের অন্য ৭টি বিভাগের অন্তর্গত।
গত ৩ ও ৪ জুলাই বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) জিআইএসএআইডিতে ১৭টি জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য আপলোড করেছে। সেখানে তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, নওগাঁতে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত নমুনা পাওয়া গেছে ১১টি, বাকিগুলো পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা এবং ঢাকায়।
এর আগে গত ১ জুলাই আইইডিসিআর ৩৬টি জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য আপলোড করে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৬টি ডেলটা ভ্যারিয়েন্টই পাওয়া গেছে সিলেট থেকে সংগ্রহ করা নমুনায়।
দেশে ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট বি ১৬১৭-এর সামাজিক সংক্রমণের কথা আগেই জানিয়েছিল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গত ৩ জুন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পর্যায়ে জিনোম সিকোয়েন্স করে জানায়, সারাদেশে ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টিতে ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, যা শতকরা হিসাবে ৮০ শতাংশ।
চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গত ২৬ জুন আপলোড করা জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের প্রাপ্ত ৬টি ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ৫টি ঢাকা বিভাগে এবং একটি কুষ্টিয়া জেলায়। ঢাকা বিভাগের মধ্যে আছে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা।
২১ জুনে আপলোড করা আইসিডিডিআরবি’র জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য বলছে, তারা ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছে ৩৪টি নমুনায়। এর মধ্যে ১৬টি নমুনা ঢাকার। ঢাকার মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মধুবাগ ও মহাখালী এলাকার পাশাপাশি রাজবাড়ী এবং শরীয়তপুর আছে এই তালিকায়। তাছাড়া খুলনা, যশোর এবং রাজশাহীতে আছে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া জেলার মধ্যে। এ পর্যন্ত ঢাকায় পাওয়া ৩৭টি ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের তথ্য সেখানে জমা আছে। আর সারাদেশের আছে ৯৫টি ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের তথ্য।
সর্বশেষ গত ৪ জুলাই আইইডিসিআর জানায়, বাংলাদেশে গত এপ্রিলে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ভারতের ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের শনাক্তের হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট মে মাসে ৪৫ শতাংশ ও জুন মাসে ৭৮ শতাংশ নমুনায় শনাক্ত হয়। বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের সুস্পষ্ট প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে।
আইইডিসিআর বলছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিকোয়েন্স করা সব নমুনায় আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। মার্চ মাসে সিকোয়েন্সকৃত মোট নমুনার ৮২ শতাংশ বিটা ভ্যারিয়েন্ট ও ১৭ শতাংশ আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এপ্রিল মাসেও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য ছিল।
আইইডিসিআর জানায়, কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষায় প্রাপ্ত ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কিত তথ্য জিনোম সিকোয়েন্সের বৈশ্বিক ডাটাবেজে জিআইএসএ আইডিতে জমা দেয়া হয়ে থাকে। যে ধরনের ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন, তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাই একমাত্র উপায়। এর সঙ্গে কোভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন নেয়া প্রয়োজন।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণের উচ্চমুখী এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, জুলাইয়ে রোগী সংখ্যা এপ্রিল ও জুন মাসকে ছাড়িয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।