Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাটনি সম্প্রদায়ের লোকজন পেশা বদলাচ্ছেন

বিলুল্পির পথে বগুড়ার বাঁশ ও বেত শিল্প

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প বিলুপ্তির পথে। এই শিল্প প্রসঙ্গ এলেই সামনে যে নামটি চলে আসে সেটি হচ্ছে পাটনি। এই একটি সম্প্রদায়ের লোকজন বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরির সাথে জড়িত।
ইতিহাসের পাতায় পাটনি সম্প্রদায় সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে তাদের আদি পেশা ছিল খেয়া পারাপার করানো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। আদিতে এরা সহযোগী পেশা হিসেবে বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার সরঞ্জামও তৈরি করতো। বাঁশের পাশাপাশি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বেতের বিভিন্ন সরঞ্জামও তৈরি করতো।

বর্তমানে দেখা যায় পাটনি সম্প্রদায়ের লোকজন চালুন, চাল রাখার ঢোল, কুলা, মাছ ধরার চাই ইত্যাদি বুনে থাকে। পাটনিরা হিন্দু হয়েও ভিন্ন ধাঁচে পুজা-পার্বন করে থাকে। তবে এই সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। জীবিকার তাগিদে অনেকে বাঁশ-বেত শিল্প ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

বাঁশ-বেত শিল্প থেকে কি কারনে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে পাটনি সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের কথা, প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্র বাজারে আসায় বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের প্রতি লোকজনের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। আর এই কমে যাওয়ার প্রবনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় বাঁশ-বেত শিল্প বিলুপ্ত হয়ে ঠাঁই নেবে ইতিহাসের পাতায়। আর বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র রীতিমত যাদু ঘরের আইটেমে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, গত শতাব্দীর ৮০ দশক পর্যন্ত পাটনি সম্প্রদায়ের লোকজন দলবদ্ধ ভাবে একত্রে বসবাস করতো। বাঁশ ও বেতের সহজ প্রাপ্যতা ও কম দামের কারনে পাটনিরা তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে বানাতো আসবাব ও গৃহস্থালী সামগ্রী। মানুষ তাদের ঘর তৈরীর কাজে বেড়া, বসার জন্য চাটাই, মাদুর, শোয়ার জন্য শিতল পাটি, বাগানের জন্য টোপা, বেড়া, চাউল ঝাড়ার জন্য কুলা, চাল, ডাল, তরিতরকারি রাখার জন্য ঢাকি ইত্যাদি ব্যবহার করতো।

এর ফলে পাটনিদের আয় ভালোই ছিল। তাদের জীবন যাপন অনেকটাই ছিল স্বাভাবিক। তবে ৯০ দশকের পর থেকে বাজার প্লাস্টিক পণ্যের দখলে যাওয়ায় মানুষের চাহিদারও পরিবর্তন হতে শুরু করে। বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে থাকে।

বর্তমানে পাটনি সম্প্রদায়ের গুটি কয়েক পরিবার তাদের বংশের পেশাকে আকড়ে রেখেছে। বগুড়া শহরের মালতি নগরে আশির দশকে পাটনিদের একটা পল্লী ছিল। সেই পাটনি পল্লীর এখন আর অস্তিত্বই নেই। আয় রোজগার না থাকায় পাটনিরা বাড়ি-ঘর বিক্রি করে অন্যত্র কম দামে জমি বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেছে নিয়েছে মুদি দোকান, মজুর, কুলি, ভ্যান, রিকশা চালকের শ্রমসাধ্য জীবন।

বর্তমানে বগুড়া সদরের মালতি নগর নামাপাড়া নামক একটি স্থানে করতোয়া নদীর তীরে ৫/৬টি পরিবারের বসবাস রয়েছে। এই পল্লীর ৩০/৩৫ জন লোক এখনো বাঁশ-বেতের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে জীবীকা নির্বাহের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এই পল্লীর এক সিনিয়র সদস্য নৃপেন জানান, এখনো টিকে আছি। গাছ লাগানোর টোপা, আম পাড়ার কোটা, চালুনি, কুলা, সামান্য পরিমাণে চাঁটাই, বেড়া তৈরি এবং বিক্রি করছি। বাঁশ-বেতের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া এসব তৈরির কাজে ব্যবহ্যত তল্লা বাঁশও আগের মত পাওয়া যায়না। নিরোদ ও তার স্ত্রী কল্পনা জানালেন, এভাবে আর কতদিন। এবার মনে হয় বাঁচতে হলে পেশা বদলাতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ