পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (ভারতীয়) সংক্রমণ ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত ব্যক্তির নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ২০১ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এই সময়ে শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ১৬২ জন। দেশে করোনা যখন উর্ধ্বোমুখী তখন এগিয়ে আসছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আজহা। এই ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই সারাদেশে বসে কোরবানির পশুর হাট। কোরবানি দেয়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হাটে গিয়ে দেখে-শুনে পছন্দ করে পশু কিনেন। ক্ষুদ্র কৃষক, খামারী, বেপারিরাও অপেক্ষা করেন এই সময়টির জন্য। সারাবছর ধরে তারা পশু লালন-পালন করেন কোরবানির হাটে ভালো দামে বিক্রির আশায়। গতবছর ঈদ উল আজহা করোনার মধ্যে হলেও সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু এবার তা ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। এই অবস্থায় কোরবানির হাট, হাটে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতার জমায়েত ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, যেখানে পশুর হাট না বসালেই নয়, সেখানে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যত্থায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ম্যাসাকার অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপদ ও করোনা থেকে বেঁচে থাকতে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পশু কেনাকাটাকেই সময়োপযোগী মনে করছেন তারা। এজন্য প্রয়োজনে জেলা-উপজেলাতে সরকারি তত্ত্বাবধানে অনলাইন হাট চালু করার আহ্বান জনস্বাস্থ্যবিদদের।
আইইডিসিআর উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, চারিদিকে সংক্রমণ, বায়োলজিক্যালি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। যখন একটা দেশে মহামারি হয়, তখন যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে না এনে জনসমাগম করা যাবে না, এটা আত্মঘাতী হবে।
বিগত বছরগুলোতে কোরবানির হাট ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণাসহ বেশ কিছু জেলা থেকে বেপারিরা কোরবানির পশু নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। কিন্তু এবার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। ফলে কোরবানির হাটগুলোতে এসব জেলা থেকে পশু নিয়ে আসা, ক্রেতা-বিক্রেতাদের জনসমাগম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেপারিসহ রাখালদের বসবাস করোনা ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করা হচ্ছে।
এবারও রাজধানীর পশুর হাটে এসব জেলা থেকেই কোরবানির পশু আসবে। সেক্ষেত্রে যারা পশু নিয়ে ঢাকায় ঢুকবেন তাদের করোনা টেস্টের কোন ব্যবস্থা থাকছে না, নেই আইসোলেশন কিংবা অন্যকোন ব্যবস্থা। এই অবস্থায় পশুর হাটে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পরা কিভাবে রোধ করা সম্ভব হবে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলেছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসমাগমে না যাওয়াই হচ্ছে করোনার সামাজিক সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রথম শর্ত। সেখানে পশুর হাটে মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে। এমনিতেই মানুষের মধ্যে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বা মাস্ক পরার মতো বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। আর গরুর হাটে কোনোভাবেই করোনা প্রতিরোধের এই তিন ‘বেসিক’ মেনে চলা সম্ভব নয়। তাই এর বিকল্প হিসেবে সরকারি উদ্যোগে জেলা-উপজেলায় অনলাইন মাধ্যমকে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
রাজধানীতে এবার ২টি স্থায়ী ও ২১টি অস্থায়ী পশুর হাট অনুমোদন দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। এসব পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা কতটা সম্ভব হবে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, আসলে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে সেটাতো খুবই ভয়াবহ। আল্লাহ না করুন, যদি অবস্থার আরও অবনতি ঘটে তাহলে তো আমরা হাট চালু রাখতে পারবো কিনা না নিয়েই সন্দেহ আছে। আর যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, তাহলেও একেবারে সীমিত পরিসরে হবে এবারের হাট। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তেমন নির্দেশনা আসেনি।
রাজধানীর পশুর হাটে ঢাকার বাইরে থেকে আসা বেপারি ও রাখালদের করোনা পরীক্ষার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা যদি ব্যবস্থা করে, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
দেশে ২০১৪-১৫ সাল থেকেই অনলাইন কেনাকাটা শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে এটি এখন কেনাকাটার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। আর ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, চরাঞ্চলে কৃষকরাও কোরবানিতে বিক্রির জন্য পশু পালন শুরু করেন। এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে খামার।
গত দুই-তিন বছর ধরে এই প্ল্যাটফর্মে বসছে কোরবানির পশুর হাট। ব্যক্তি উদ্যোগে, বিভিন্ন খামারি, ফার্মের পৃথক পৃথকভাবে, সরকারি উদ্যোগেও আয়োজন করা হচ্ছে অনলাইন হাট। এসব কৃষক ও খামারিরাও এখন যুক্ত হচ্ছে এই প্ল্যাটফর্মে। ক্রেতারা চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল থেকেও কিনতে পারছেন কোরবানির পশু। এতে একদিকে যেমন চাষি ও উদ্যোক্তারা বেশি দাম পাচ্ছেন, ক্রেতারাও পাচ্ছেন গৃহপালিত ও দেশিয় জাতের গরু। গতবছর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন। এসব হাটে ঘরে বসেই লাখ লাখ কোরবানির পশু দেখতে পারবেন ক্রেতারা। পছন্দ হলে এক ক্লিকেই কিনতেও পারবেন তারা। কেনার পর বিক্রেতারাই পৌঁছে দিবেন বাড়িতে।
ডিএনসিসির ডিজিটাল হাট, বিক্রয় ডটকম, বেঙ্গল মিট, কিউকম ডটকম, ডিজিটাল হাট, দারাজ গরুর হাট, প্রিয়শপ, দেশি গরু, মাদল, হেক্সা ট্রেডিং, ই-বাজার, অথবা ডটকম, সদাগর, আজকের ডিলসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন হাটে দেখা যায় কোরবানির জন্য পশু বিক্রির ছবি দেয়া আছে প্রতিটি সাইটে। এর সাথে পশুর বিবরণ, কোন স্থানে রয়েছে, কিভাবে প্রতিপালন করা হয়েছে, পশুর মালিক খামারি, কৃষক ও ফার্মের সাথে যোগাযোগের নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য। সেখানে অর্ডার করলেই বিক্রেতারাই হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করবেন। এক্ষেত্রে কোন কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডেলিভারি চার্জ নিচ্ছে, কোন কোনটি আবার ফ্রি ডেলিভারি দিচ্ছে।
এফবিসিসিআই এর সভাপতি জসিম উদ্দীন বলেন, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ধরণ বদলে যাচ্ছে। করোনার এই দুঃসময়ে কোরবানির পশু হাটে না গিয়ে অনলাইনে ঘরে বসে কেনাকাটা করা জনসাধারণের জন্য একটি আর্শীবাদ এবং সবচেয়ে নিরাপদ।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারী থেকে সুরক্ষা পেতে মানুষ বড় ধরনের একটা সহযোগিতা পাবে অনলাইনে পশু ক্রয়ের মাধ্যমে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানেও আয়োজন করা হচ্ছে ডিজিটাল হাট। যা কিছু কিছু উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ৬৪ জেলা প্লাটফর্মগুলোকে সরকারের সহযোগিতা পেলে একসাথে যুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলায় কোরবানির পশু বিক্রির প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে। সব প্লাটফর্মকে একই সূত্রে গেঁথে মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে। তিনি ডিজিটাল কোরবানি হাটে অভিযোগ আসলে তা দ্রুত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আহমেদ জামাল বলেন, ডিজিটাল লেনদেন এর নিরাপত্তা এবং গ্রাহকের আস্থা অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি ও কৌশলগত সহযোগিতা করবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ই-কমার্স সেক্টরে শৃংখলা বজায় রাখতে স্ক্রো সেবা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকেই গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, হাটগুলোতে মাস্ক, সেনিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখার জন্য সিভিল সার্জন ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর হাটগুলোতে বেপারি-রাখালদের করোনা টেস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তবে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মানে সেজন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।
এদিকে শুধু কোরবানির পশুই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ কোরবানির অন্যান্য পণ্যও অনলাইনে কেনার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মহামারির এই সময়ে যতটা সম্ভব ঘরে থাকার পরামর্শ তাদের।
করোনার এই সময়ে ই-কমার্সে অন্যান্য পণ্য কেমন কেনাবেচা হচ্ছে জানতে চাইলে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় ও খাবার অর্ডারই বেশি। পোষাক, প্রশাধনীসহ অন্যান্য পণ্যের অর্ডার অনেক কমে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।