পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টিকা, অক্সিজেন, হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা ও আইসিইউ সঙ্কট কয়েক দিন থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তবে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের প্রচেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সমন্বিত পদক্ষেপে কিছুদিন বিরতির পর আবার বড় অঙ্কের টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার রাতে এবং শনিবার ভোরের মধ্যে মাত্র ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে ৪৫ লাখ টিকা পায় বাংলাদেশ। আবার করোনার সামাজিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউন চলছে। টিকা কার্যক্রম, করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা এবং লকডাউন এক সঙ্গে চলছে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে দেশে।
গতকাল নতুন করে সু-খবর দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ মাসেই আসছে কোভ্যাক্সের আওতায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ। একই সঙ্গে আগামী মাসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান আসার কথা জানিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোভ্যাক্স আমাদের জানিয়েছে, জুলাই মাসে ১০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে। আর সেরাম ইনস্টিটিউটের স্থানীয় প্রতিনিধি আমাদের জানিয়েছে, আগস্ট মাস থেকে তারা টিকা দিতে থাকবে। তবে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কত ডোজ করে টিকা দেবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। এর আগে গত জানুয়ারিতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ক্রয়কৃত ৫০ লাখ টিকার চালান বাংলাদেশে পাঠায়। কিন্তু মোদী হঠাৎ করে সেরামের টিকা বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করায় বিপাকে পড়ে দেশ। তবে সে সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে অন্যান্য উৎস থেকে এ মাসেই বড় অঙ্কের টিকা আবারও দেশে আসছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ কোটি টিকা আসবে। তিনি বলেন, আমরা জোরেশোরে শুরুর পরও কাঙ্খিত টিকা না পাওয়ায় তা ধরে রাখতে পারিনি। আশা করছি টিকার আর কোনো অভাব হবে না। আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাচ্ছি, আগামীতে আরও পাব। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি টিকা আসবে, যা ৫ কোটি মানুষকে দেয়া যাবে। এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা বাংলাদেশের কয়েকজন চিকিৎসক প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের খুব আস্থাভাজন। সে সব চিকিৎসকরা বাইডেন প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেশের মানুষের জন্য ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবস্থা করছেন। যা চলতি মাস বা আগামী মাসের শুরুর দিকে দেশে আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া মহামারি করোনাভাইরাসের গণটিকার বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত (৪০ থেকে ৩৫) নিয়েছে সরকার। গণটিকার কার্যক্রম এ সপ্তাহেই চালু হচ্ছে বলে জানা গেছে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাসাপাতালগুলোতে তাই অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। দু’একটি হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে আইসিইউতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ও কয়েকটি হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কটের বিষয়টি উঠে এসেছে। এমনকি করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালে ভয়াবহ অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে অক্সিজেনের অভাবে বাড়তে পারে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হার। আর তাই পিছিয়ে নেই অক্সিজেন সঙ্কট সমাধানের বিষয়টিও। এক্ষেত্রে বেশি করে অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র মতে, গত ২২ এপ্রিল ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তরল অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করে দেয় প্রতিবেশী দেশটি।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আমদানিকারকদের মতে, অক্সিজেনের সামগ্রিক সরবরাহের ও উৎপাদনের এই মুহূর্তে কোনো কোনো সঙ্কট নেই। তবে দেশে করোনা পরিস্থিরি অবনতি হওয়ায় আগের চেয়ে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। তবে সমন্বয়ের কিছুটা অভাব লক্ষ্য কার গেছে, সেক্ষেত্রে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। একই সঙ্গে হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া খুরশীদ আলম বলেছেন, খুব তাড়াতাড়িই খুলে দেয়া হচ্ছে টিকা নিবন্ধন অ্যাপ। পাশাপাশি গণটিকার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৫ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৪০ বছরের বেশি বয়স হলে টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করা যায়। টিকা নিবন্ধন শুরুর দিকে ৫৫ বছর বয়সীরা নিবন্ধন করার অনুমোদন পেয়েছিলেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে গত ৫ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত টিকা বিবিআইবিপি-করভির হাতে আসার পর সরকার ৩ শ্রেণির জন্য নিবন্ধন অ্যাপ খুলে দেয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গত সোমবার বলেছেন, দেশে অক্সিজেনের কোনো সঙ্কট নেই। হয়তো কোথাও সমন্বয়ের অভাব হতে পারে। তবে যেসব এলাকায় অক্সিজেন সরবরাহ জরুরি সেসব এলাকায় সমন্বয় জোরদারের মাধ্যমে সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ।
অক্সিজেন আমদানিকারকের প্রতিনিধি ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান ইনকিলাবকে জানান, ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ চলছে ভয়াবহভাবে। কোভিড-১৯ রোগিদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ন হওয়ায় ভারত অক্সিজেন রফতানি বন্ধ রেখেছে। তবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সোহার্দ্য, সম্প্রতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিবেশী দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে অক্সিজেন দিচ্ছে। মতিয়ার রহমান বলেন, এখন সবাই টিকা নয়, গ্যাস চায়। ভারত থেকে গত ১ সপ্তাহে বেনাপোল বন্দর থেকে লিন্ডে বাংলাদেশ ৩০০টন অক্সিজেন বাংলাদেশে এনেছে।
দেশে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশের মুখপাত্র সাইকা মাজেদ ইনকিলাবকে বলেন, অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। লিন্ডে বাংলাদেশ বর্তমানে সরবরাহ করছে ৯০ টন। তাদের উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, ভারত থেকে এখনও অক্সিজেন আমদানি করা হয়। ভারত অফিসিয়ালি অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করলেও আমদানি হচ্ছে। এছাড়া লিন্ডে দেশের শিল্পখাতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যা এখন পুরোপুরি বন্ধ রেখে শুধু মেডিকেলখাতে অক্সিজেন সরবরাহ করছে। সাইকা মাজেদ বলেন, দেশে অক্সিজেন সঙ্কটের সুযোগ কম। যদিও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সিলিন্ডার মজুদ রেখে সঙ্কট তৈরি করতে পারে।
এদিকে করোনার ভয়াবহতা বাড়ায় আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে অনেক রোগীর প্রয়োজন পড়ছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউ’র। প্রতিদিনই চাহিদা বাড়ছে আইসিইউ’র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে জেনারেল কিংবা আইসিইউ বেডের ঘাটতি মেটাতে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদিও সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের মহাখালীর মার্কেটকে ২৫০ টি আইসিইউ বেডে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। এ ছাড়া অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ বেড বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যেভাবে দ্রুত করোনা রোগী বাড়ছে তাতে হাসপাতাল কিংবা বেড যতই বাড়ানো হোক না কেন তাতে সংকুলান না-ও হতে পারে। সুতরাং সবাইকে প্রতিরোধের ওপরেই বেশি জোর দিতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।