পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর বিষয়টি সামনে আসছে না। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে বয়স্কসহ শিশুও রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া জানান, গত সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে ৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২০ জনে দাঁড়াল। তিনি জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫০৪ জন রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ৩৮৪ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গত রোববার বলেন, করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। বর্ষাকালে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটে। এজন্য এডিস মশার প্রজননস্থলে পানি জমিয়ে না রেখে নিয়মিত ফেলে দিতে হবে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ সিটির সাধারণ সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শীর্ষক’ দিক নির্দেশনামূলক সভা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস। এসময় তিনি মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়ি বা ভবন মালিককের সম্পৃক্ত করার আহবান জানান। ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আপনারা ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টভিত্তিক ভবনের মালিক সমিতির সাথে কথা বলবেন। সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছেন, তাদেরকে অনুরোধ করবেন- তাদের আঙিনায়, তাদের বাসা-বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় যেন আমাদের মশক কর্মীরা ঢুকতে পারে। কারণ, আমরা দেখছি- বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে, বিভিন্ন সামগ্রী, চাকা, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল-পাত্রে স্বচ্ছ পানি জমে থাকার কারণে, বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে মশকের বিস্তৃতি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২৭১ জনের, যা চলতি বছরে মোট শনাক্তের ৬৯ শতাংশ। গত বছরের জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২০ জনের। সে হিসাবে গত বছরের জুন মাসের তুলনায় এবারের জুন মাসে রোগী বেড়েছে সাড়ে ১৩ গুণ। ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর-এই চার মাস মূল মৌসুম। কয়েক দিনের থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলছে। করোনা আর ডেঙ্গুর উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় জ্বর হলে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মোবারক হোসেনের স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন গত রোববার। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। মোবারক হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে মশার উপদ্রব বেশি হচ্ছে। অনেকেরই ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার কথা শুনছি। বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখার পরও ডেঙ্গু হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার অনেক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারায়। আর সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
গত বছর ডেঙ্গুর এত প্রকোপ দেখা যায়নি। দুই সিটি করপোরেশন চিরুনি অভিযানসহ বেশ কিছু কার্যক্রম চালায়। এবার ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের সিটি করপোরেশনগুলোকে নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিদিন সকালে মশার লার্ভা মারার জন্য লার্ভিসাইডিং এবং বিকেলে উড়ন্ত মশার মারার জন্য অ্যাডাল্টিসাইডিং করছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, মশা নিধনে নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে সেসব বাসার ৪০০ মিটার এলাকায় বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। গত সপ্তাহে বেশ কিছু এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। নারী কাউন্সিলরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করতে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ডেঙ্গু শনাক্তের সব ধরনের পরীক্ষার সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএস১ সর্বোচ্চ খরচ ৫০০ টাকা। পরিষ্কার পানি জমা হয়, এ রকম পাত্র, ফুলের টব, হাঁড়ি-পাতিল, চিপসের প্যাকেট বাড়ির আশপাশে না রাখতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। দু-তিন দিনের বেশি সময় যাতে কোথাও পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, মহামারি চলার সময় একটা দিকে বেশি খেয়াল থাকে, পাশ দিয়ে অনেক কিছু হয়ে যায়। করোনার মধ্যে ডেঙ্গুও এমন একটা বিষয়। মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতাও জরুরি। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।