পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারির ভয়াবহ ‘চাপ সামলাতে’ মৃত-অবসরপ্রাপ্তসহ সহস্রাধিক চিকিৎসককে বদলি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ৪ ও ৫ জুলাই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অন্তত ৪৮টি আদেশে এক হাজার ২৩৯ জন চিকিৎসককে আজ বুধবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সেখানে তারা কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন।
মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভগের উপ-সচিব জাকিয়া পারভিনের স্বাক্ষরিত এসব প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তাদের ‘সংযুক্তিতে পদায়ন’ করা হলো।
মন্ত্রণালয়ের এই বদলি আদেশ যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ ও তুঘলকি। সেখানে রয়েছে মৃত চিকিৎসক, অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকের নাম। এমনকি মেডিক্যাল কলেজের বেসিক সাবজেক্টের অধ্যাপক, হƒদরোগ, চক্ষু, দন্ত বিশেষজ্ঞের নামও রয়েছে। যাদের উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। যেখানে তাদের কোনো পদ নেই এমনকি কোনো কাজও নেই। আমলাদের এমন সিদ্ধান্তে চিকিৎসক সমাজ একই সঙ্গে সংক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। তারা বলছেন, কোনো সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি এ ধরনের আদেশ জারি করতে পারে না। সারাদেশে যখন লকডাউন তখন আদেশ দিয়ে দুই দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজে দিন রাত অনলাইনে ক্লাস চলে। শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করতে অধ্যাপকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এমন সময় এ ধরনের আদেশ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
মৃত-অবসরপ্রাপ্তদের বদলির বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক এবং আমলাদের অদক্ষতার পরিচয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিপাকে ফেলতে আমলাদের একটি চক্র এ ধরনের কাজ করেছেন।
বদলি আদেশে স্বাক্ষর করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভগের উপসচিব জাকিয়া পারভিনের সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃতদের বদলির বিষয়টি জানতে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে কর্মরত অবস্থা মৃত্যুবরণ করেন ডা. জীবেশ কুমার প্রামাণিক। শজিমেক থেকে যে ৪৩ জনকে বদলি করা হয়েছে তার মধ্যে ডা. জীবেশের নাম ১৫ নম্বরে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত অবস্থায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন ডা. ফেরদৌস আরা বেগম। তিনি গাইনি ও অবস্ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তাকেও এ আদেশে বদলি করা হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মমতাজ বেগম। চার মাস আগেই অবসরে যাওয়া এই চিকিৎসককেও বদলি করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকরা বলেন, দুই অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা না করে পদায়নের ফলে চাহিদা নেই এমন অনেক হাসপাতালেও অহেতুক বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-চিকিৎসককে পদায়িত করা হয়েছে। যেমনÑ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শ’খানেক কোভিড রোগী ভর্তি থাকেন। এ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-চিকিৎসকদের তেমন কোনো চাহিদা নেই। অথচ এ হাসপাতালে ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। এ আদেশে হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, নাক-কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, নিউরোসার্জন, জেনারেল সার্জন, ডেন্টাল সার্জন ইত্যাদি নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদর হাসপাতাল, উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব চিকিৎসকরা কোভিড চিকিৎসায় কী করবেন সেটিও স্পষ্ট নয়। কোনো কোনো মেডিক্যাল কলেজে আরটি-পিসিআর ল্যাবে কর্মরত সকল চিকিৎসককে একযোগে বদলি করা হয়েছে। যেমনÑ চট্টগ্রাম ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবের প্রায় সবাই বদলি হয়েছেন। এই ল্যাবগুলো এখন কারা পরিচালনা করবেন, তারও কোনো নির্দেশনা নেই।
সংক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা বলেন, কোভিডকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু আমলার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ও কর্মকাণ্ড পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। গতকাল সোমবার আকস্মিকভাবে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষক-চিকিৎসকের গণবদলির আদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থাকে অস্থিরতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই আদেশ আমলাতান্ত্রিক মূর্খতার আরেকটি উদাহরণ মাত্র।
এ আদেশে বদলির আদেশাধীন চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের বয়স ৫০ পেরিয়েছে। এ বয়সের চিকিৎসকদের কোভিড চিকিৎসা দিতে বাধ্য করা কতটা অবৈজ্ঞানিক। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নীতিমালা এটি সমর্থন করে না। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর পাশপাশি নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। বদলির আদেশে বিভিন্ন বিভাগ খালি করে যে হারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্তিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাতে নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে।
করোনাভাইরাসের এই জটিল পরিস্থিতি ও লকডাউনের মধ্যে গণবদলির কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত চিকিৎসকদের বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। কর্মরত চিকিৎসকরা এই চাপ সামাল দিতে পারছেন না। ফলে তরুণ চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় নিয়োজিত মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসকদের অনেককেও বদলি করা হয়েছে করোনাভাইরাস ডেডিকেটেড হাসপাতালে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকসহ মোট ১৩ জন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে মাইক্রোবায়োলজিতে এমফিল করা শিক্ষক আছেন ৫ জন। করোনাভাইরাসের আরটিপিসিআর ল্যাবগুলোতে তারা কাজ করতেন। তাদেরও বদলি করে দেয়া হয়েছে।
বদলির আদেশ পাওয়া একজন চিকিৎসক এই আদেশকে ‘অদ্ভুতুড়ে’ বলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা পিসিআরে কাজ করছি। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আওতায় এসব ল্যাব চালু থাকে। এখন আমাদের ট্রান্সফার করে দেয়ার ঘটনা অদ্ভুতুড়ে। মজার ব্যাপার হলো, ডেন্টাল সার্জনদেরও করোনা ইউনিটে চিকিৎসা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছে।
আদেশে দেখা গেছে, খুলনা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে বাগেরহাটে, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে মেহেরপুরে, যশোর মেডিক্যাল কলেজ থেকে নড়াইল এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতালে, সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে যশোর জেলা হাসপাতালে। বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল, ঝালকাঠি জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ থেকে বরগুনা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে শিক্ষকদের। রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের বান্দরবানে. কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেলা হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে চাঁদপুর জেলা হাসপাতাল এবং লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতালে। সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ এবং পাবনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে নাটোর জেলা হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতাল বদলি করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, আমলাতান্ত্রিকভাবে করা এই বদলি আদেশ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিপাকে ফেলতে করা হয়েছে। যখন দেশের চিকিৎসকরা বিদ্যমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা করছে, ১৫ মাসেরও বেশি সময় ছুটি ছাড়া দায়িত্ব পালন করছে তখন এই আদেশ সম্পূর্ণ অবৈধ ও হীন উদ্দেশ্যমূলক। অধ্যাপক আজিজ অবিলম্বে এই বদলি আদেশ বাতিলের দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।