Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

করোনায় রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি

২০২০-২১ অর্থবছরে আয় ৩৮ বিলিয়ন ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারীকালে পণ্য রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছর। পরিসংখ্যান বলছে, সদ্য শেষ হওয়া এই অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ। করোনার মধ্যে রফতানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধি টেনে তুলেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। এ খাতে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি এসেছে সাড়ে ১২ শতাংশ। যদিও গোটা রফতানি আয়ে লক্ষ্যমাত্র কিছুটা কমেছে। তবে সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে- একক মাস হিসেবে সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে রফতানি আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা আড়াই শতাংশ কমলেও জুনে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার রফতানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। আগের বছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে গত জুন মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করে ৩৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। মে মাসে এই রফতানির পরিমাণ ছিল ৩১১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রফতানি আয় বেড়েছে ৪৬ কোটি ডলার। রফতানিকারকরা বলছেন, করোনার কারণে গত বছরের এপ্রিলে সাধারণ ছুটির কারণে অধিকাংশ শিল্পকারখানা তিন সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল। সে কারণে রফতানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। চলতি বছর করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার উৎপাদন চালানোর সুযোগ দেয়। চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে সচল রয়েছে দেশের কল-কারখানা। বর্তমানে বিশে^র অনেক দেশেই লগডাউন শিথিল করায় রফতানি আয় বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

রফতানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ (৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা মোট রফতানি আয়ের ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে নিট পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ কোটি ডলারের। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৪৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এ খাতে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে। আবারও প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের উৎস চামড়া রফতানি। বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় চাহিদা বেড়ে রফতানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ১১৩ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা আরও কমে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশের মতো।

করোনাভাইরাসের কারণে ধস নেমেছে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি আয়ে। গত অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি করে বাংলাদেশ ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার আয় করেছে। রফতানির এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। এ খাতের লক্ষ্য ছিল ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৩৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

বিভিন্ন কৃষি পণ্য রফতানি করে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলার আয় করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে গত বছরের শেষ দিকে দেশের সব সরকারি পাটকল বন্ধের উদ্যোগ নেয় সরকার। এই মহামারিকালে সরকারের এমন উদ্যোগের মধ্যেও পাট রফতানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া ওষুধ রফতানিতে ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে শ‚ন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ