Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্ষায় ভৈরব নদে হাঁটু পানি

খননের অভাবে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদ হুমকির মুখে ব্যবসা-বাণিজ্য

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

যশোরের অভয়নগর উপজেলার শিল্প, বাণিজ্য ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ার বুকচিরে বয়ে চলেছে ভৈরব নদ। নাব্যতা হ্রাস, দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ভৈরব নদ। নদী খেকোদের উচ্ছেদ ও খনন না করায় বিলীনের পথে এই নদ। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীদের বড় মোকাম নওয়াপাড়া। চলমান বর্ষায় এখন নদের কোথাও কোথাও হাটু পানি।
নওয়াপাড়া ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী মোকাম হিসেবে নওয়াপাড়ার পরিচিতি দেশব্যাপী। এখানে নৌ, সড়ক ও রেলপথ থাকায় চমৎকার ব্যবসায়ী সমৃদ্ধ শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে নওয়াপাড়া। যে কারণে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের গুরুত্ববহন করে। বর্তমান সরকার প্রথম শ্রেণির নদীবন্দর হিসেবে নওয়াপাড়াকে ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ পলি পড়ে, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলে নদ আজ খালে পরিণত হতে বসেছে। এর ফলে ভাটার সময় মালবাহী কার্গো জাহাজ চলাচলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য নওয়াপাড়া থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। সুতরাং নদটি পুনঃখনন করা না হলে ২০-২৫ বছর পর আগামী প্রজন্ম বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে অভয়নগরে ভৈরব নদ নামে একটি নদ ছিল।
নওয়াপাড়া পৌরসভার ভাঙাগেট এলাকার মশরহাটি গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার বলেন, নদ ভাঙনের ফলে মাটি ভরাট হয়ে খালে পরিনত হচ্ছে। তাছাড়া কিছু জায়গায় চর সৃষ্টি হয়েছে। নদের কিছু কিছু স্থানে এই বর্ষায় হাটু পানি। মাঝে মধ্যে নদ খনন করতে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। অজানা কোন কারণে তাও আবার হয় দায়সারা ভাবে। ফলে কিছুদিন পর নদ তার আগের রুপে ফিরে আসে। তাছাড়া ভৈরব নদের ওপর ব্রিজ তৈরি হওয়ার ফলে ওই স্থানে নদের বাঁক পাল্টে গেছে। যে কারণে নদর অপর পাড়ে ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যা এখনও অব্যাহত আছে। এর ফলে নদ তার নাব্যতা হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা ও এমভি হাজেরা-৪ মাস্টার মো. হাসান জানান, নওয়াপাড়া ভৈরব ব্রিজ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় ২ নটিক্যাল নদর তীরে অধিকাংশ স্থানেই চর জেগে উঠেছে। ফলে নাব্যতা হারিয়ে গতিপথ ছোট হয়ে গেছে। জোয়ারের সময়ও মালবাহী কার্গো জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে ভৈরব নদর খুলনা নিউজপ্রিন্ট থেকে নওয়াপাড়া চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ নটিক্যাল। এর মধ্যে কিছু কিছু স্থানে নদর তীরে ছোট ছোট চর দেখা দিয়েছে। ফলে নদ তার নাব্যতা হারিয়ে যেতে বসেছে। ভৈরব নদের এই ১৫ নটিক্যাল দ্রুত সময়ের মধ্যে খনন (ড্রেজিং) করা না হলে, এ নৌপথ দিয়ে মালবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এবং নওয়াপাড়া নৌ-বন্দর অচল হওয়ার আশংকা দেখা দিবে।
নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মন্ডল বলেন, ভৈরব নদের নাব্যতা ও পলি জমা চর দেখে আতংকিত হয়ে পড়ছি। এ বিষয় আমরা নওয়াপাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তাঁরা আমাদের আশ^াস দিয়েছেন অল্পসময়ের মধ্যেই নদ ড্রেজিং (খনন) এর কাজ শুরু করবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুর রহমান বলেন, নদী ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নওয়াপাড়া বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য। নদীকে তার আগের রুপে ফিরে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সকল নদ রক্ষা ও তার পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনতে অভিযান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে পলি পড়ে নাব্যতা সৃষ্টির জায়গায় প্রথমে মাটি কাটা হবে। এরপর ড্রেজিং এর মাধ্যমে ভৈরব নদকে পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ