Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের দরপতনে দিশেহারা চাষি : ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২১, ৪:০৫ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১০ বছরের মধ্যে আমের রেকর্ড পরিমান উৎপাদন হয়েছে এবার। তবে ২০ বছরের মধ্যে এত বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়তে হয়নি আম চাষিদের। তাদের ভাষ্য- মৌসুমের শুরু থেকেই লকডাউনের ধকল পোহাচ্ছেন তারা। তবে ২৭ জুন থেকে সীমিত আকারে বিধি-নিষেধ বলবতের দিন থেকে আমের দাম কমতে থাকে হু হু করে। পহেলা জুলাই থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ কার্যকরের পর বেচাকেনা নামে সিকি ভাগে। এর আগে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে এর আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন শুরু হলে প্রথম দফায় শুরু হয় দরপতন। এরই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে আমের বাজারে। আষাঢ়ের অব্যাহত বর্ষণও বাজারের মন্দা কাটতে দিচ্ছে না। আম চাষিরা আরো বলছেন- ঢাকার পাশের সাত জেলায় লকডাউন শুরুর পর ঢাকা ও আশপাশের আড়তদার, ব্যবসায়ীরা আম কেনা কমিয়ে দেন। ফলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ ব্যাপক থাকা সত্ত্বেও ক্রেতার অভাবে মাথায় হাত পড়ে তাদের। পরিস্থিতি দিন দিন এতোটা খারাপে গড়িয়েছে যে তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। এমনকি চাষের খরচের টাকাও উঠবে না বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তবে স্থানীয় ব্যাপারী ও আড়তদারদের ভাষ্যও অভিন্ন। তারা জানায়, সীমিত আকারে লকডাউনের শুরু থেকেই বাইরের (ঢাকাসহ সারা দেশের) আড়তদাররা আম পাঠাতে নিষেধ করেন। কারণ হিসেবে তারা জানায়, আড়ত খোলা রেখে খুচরা বিক্রেতাদের আম সরবরাহে বাধার মুখে পড়ছেন তারা। আর খুচরা বিক্রেতারাও কোনোভাবে দোকান খুললেও লকডাউনের কারণে গ্রাহক অনেক কম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় বাজারে এবার আমের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্ধেকেরও কম। তাতে উৎপাদন খরচও উঠছে না চাষির। এ কারণে এই বছর এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ গত বছর আমের বাজার ভালো থাকায় এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন। ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের সব আমের আড়ত খোলা রাখা, সরবরাহে সব ধরনের সহায়তা, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্ট সবার যাতায়াতে বাধা না দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’ আম রপ্তানিতে কার্গো ভাড়া কমানো এবং রপ্তানিকারকদের প্রণোদনাসহ উৎপাদনকারীদের বীমার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে- এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর ন্যায্য বাজারমূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, দুই সপ্তাহ আগেও আম চাষিরা কিছুটা ভালো দাম পাচ্ছিলেন। তবে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর আমের বাজারে ধস নেমেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া খিরশাপাত আমের দর মৌসুমের শুরুতে ছিল দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ। পরে তা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে কিছুটা বেড়েছে দাম। তবে মোট আমের ৭০ ভাগের জোগানদাতা ল্যাংড়া ও খিরশাপাত শেষের পথে। আগামী এক থেকে দেড় মাস পাওয়া যাবে আশ্বিনা ও ফজলি। তাই শেষ বেলায় বাজার একটু চাঙ্গা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে জানায় আম চাষিরা। গত বছর খিরশাপাতের দাম ছিল তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা মণ। গত শনিবার আমের বড় বাজার কানসাটে এই আম বিক্রি হয় দুই হাজার ৭০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে মাত্র এক হাজার ৮০০ টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে এবার আমের উৎপাদন বেশি। চলতি বছর ৩৫ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। তবে এবার তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা অন্য বছরের চেয়ে কম লাভবান হতে পারেন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘আম পরিবহনে প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ