পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। একসঙ্গে বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হলে তা সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিয়ে সামলানো সম্ভব হয় না। দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাসাপাতালগুলোতে তাই অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বিশেষায়িত সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে আইসিইউতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আছে। এছাড়াও দেশের কয়েকটি হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কটের বিষয়টি উঠে এসছে। এমনকি করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালে ভয়াবহ অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি অক্সিজেনের অভাবে বাড়তে পারে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হার। এক্ষেত্রে বেশি করে অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আমদানিকারকদের মতে, অক্সিজেনের সামগ্রিক সরবরাহের ও উৎপাদনের এই মুহূর্তে কোনো কোনো সঙ্কট নেই। তবে দেশে করোনা পরিস্থিরি অবনতি হওয়ায় আগের চেয়ে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, উৎপাদনকারকদের সঙ্গে আমরা প্রতিদিন বৈঠক করছি এবং আমাদের চাহিদা জানিয়ে দিচ্ছি। এই মুহূর্তে কোনো সংকট নেই, তবে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে কিছুটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
সূত্রমতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল রোববার দুপুরে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত সাত দিনের করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি প্রায় কাছাকাছি। সংক্রমণ পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। ২ জুলাই রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। ডা. নাজমুল আরও বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার যখন যেখানে ব্যবহার হয়, সেটা আবার রিফিল করার জন্য চলে যায়। সংখ্যাতে সেটা রিজার্ভ হিসেবে জমা থাকে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেটি দ্রুত সরবরাহ করা হয়। যে কারণে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা মাঝেমধ্যে বেড়ে যায়-কমে যায়। তবে বাস্তাবেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা বেড়েছে, তার কারণ চাহিদাও বেড়েছে।
ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, অক্সিজেনের অভাবে কিছু রোগীর মৃত্যু অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে এ বিষয়ে বলা যাবে। তবে অক্সিজেনের সামগ্রিক সরবরাহের কোনো সঙ্কট নেই। উৎপাদনেরও এই মুহূর্তে কোনো সঙ্কট নেই। উৎপাদনকারকদের সঙ্গে আমরা প্রতিদিন বৈঠক করছি এবং আমাদের চাহিদা জানিয়ে দিচ্ছি। এই মুহূর্তে কোনো সংকট নেই, তবে রোগী সংখ্যা বেড়ে গেলে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র মতে, ভারত তাদের দেশের করোনা পরিস্থিরি অবনতি হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে তরল অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করেছে। এরপর দীর্ঘদিন অক্সিজেনবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল একটি অক্সিজেনবাহী ট্যাংঙ্কার খালাশ হয় বেনাপোল বন্দরে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অন্যতম প্রধন উপাদন অক্সিজেন। দেশের বর্তমান অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে আমদানিকৃত অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। তবে বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, অক্সিজেন রফতানি বন্ধ ছিল। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে অক্সিজেন দিচ্ছে ভারত। গতকালও এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ ১৩৫ টন গ্যাস পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশে বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা ১৫০ টন। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে এটা যে কোনো সময় বাড়তে পারে। এর মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ সরবরাহ করছে ৮০ টন এবং স্প্রেক্টা অক্সিজেন লিমিটেড ৩৮ টন। সম মিলিয়ে ১১৮ টন। এছাড়া অধিদফতর ৩টি নতুন উৎস আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লি., ইসলাম অক্সিজেন এবং এ কে অক্সিজেন লি. থেকে ৩৫ টন পাচ্ছে। প্রয়োজন হলে চাহিদা আরও বাড়াবে।
দেশে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশের মুখপাত্র সাইকা মাজেদ ইনকিলাবকে বলেন, অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। লিন্ডে বাংলাদেশ বর্তমানে সরবরাহ করছে ৯০ টন। তাদের উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, ভারত থেকে প্রতি মাসে কয়েক টন অক্সিজেন আমদানি করা হয়। ভারত অফিসিয়ালি অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করলেও আমদানি হচ্ছে। এছাড়া লিন্ডে দেশের শিল্প খাতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যা এখন পুরোপুরি বন্ধ রেখে শুধু মেডিকেল খাতে অক্সিজেন সরবরাহ করছে।
সাইকা মাজেদ বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেনের লিকুইড সঙ্কট নেই। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার যখন যেখানে ব্যবহার হয়, সেটা একটা লেবেল পর্যন্ত নামলে আমাদের কর্মীরা রিফিল করে দেয়। তবে লকডাউনের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে হয়তো রিফিল করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে আগেই রিফিল করা হয় বলে সঙ্কট নেই। তিনি বলেন, সিলিন্ডার ব্যক্তিগতভাবে আমরা বিক্রি করি। এটারও চাহিদা বেড়েছে। যদিও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সিলিন্ডার মজুদ রেখে সঙ্কট তৈরি করতে পারে। এছাড়া আমদানি বন্ধ বললেও অক্সিজেন আমদানি হচ্ছে। তাই সঙ্কটের সুযোগ কম।
ভারতীয় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠাননের প্রতিনিধি বিশ্বজিত দাস জানান, ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা ভেবে ভারত সাময়িকভাবে অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করেছে। কাগজে-কলমে এটা থাকলেও ভারত থেকে বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি এখনও হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অক্সিজেন আমদানিকারকের প্রতিনিধি ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ চলছে ভয়াবহভাবে। কোভিড-১৯ রোগিদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ন হওয়ায় ভারত অক্সিজেন রফতানি বন্ধ রেখেছে। তবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সোহার্দ্য, সম্প্রতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিবেশী দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে অক্সিজেন দিচ্ছে। মতিয়ার রহমান বলেন, এখন সবাই টিকা নয় গ্যাস চায়। তাই গতকালও (রোববার) ভারত থেকে ১৩৫ টন অক্সিজেন বাংলাদেশে এসেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, ভারত অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করলেও আমরা অক্সিজেন পাচ্ছি। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে এরই মধ্যে গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়েছে। গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, কারণ গ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশের কোনো কমতি নেই। এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছি। তাই অক্সিজেনের সঙ্কট হবে না। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সে জন্যও সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা লিকুইড অক্সিজেন আমদানি করি। আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেও বেশি করে লিকুইড অক্সিজেন নেয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া শিল্পখাতে ৪০ থেকে ৫০ টন অক্সিজেনের ব্যবহার হয়। প্রয়োজনে সেখান থেকেও হাসপাতালে ব্যবহার করা হবে। তাই আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে দেশে অক্সিজেনের সঙ্কট হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির আগে দেশে দৈনিক ১০০ টন মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়ায় হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে, যা বর্তমানে ১৫০ টনে পৌঁছেছে। করোনা পরিস্তিতি অবনতি হলে এই চাহিদা আরও বাড়তে পারে। তবে অক্সিজেন সরবরাহকারীরা বলছে, কেউ সিন্ডিকেট না করলে অক্সিজেন সঙ্কট হওয়ার সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।