পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া চারলেন মহাসড়ক। বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের প্রভাবে গত চার দিন ধরে ব্যস্ত এই মহাসড়ক এখন অনেকটাই নীরব, নিস্প্রণ। মাঝে মধ্যে যানবাহন চললেও দাঁড়াতে হচ্ছে চেকপোস্টে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যানবাহন ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ জানায়, লকডাউনে যারা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছেন তাদের বেশিরভাগই মুন্সিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। ফেরি বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার কোনো যানবাহন নেই। এ কারণে এক্সপ্রেসওয়ে চারদিন ধরে একেবারেই ফাঁকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চারলেনের এই এক্সপ্রেসওয়ে যেন যানবাহনের অভাবে খাঁ খাঁ করছে। পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা সেতুর অংশে কিছু যানবাহনের দেখা মিললেও সেতুর ওপাড়ে কোনো গাড়ির দেখা নেই। বুড়িগঙ্গা সেতুটি এক্সপ্রেসওয়ে এবং সার্ভিসওয়ের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। সে কারণে এ পাড়ে সার্ভিস রোড ব্যবহারকারী যানবাহনের দেখা মেলে। বুড়িগঙ্গা সেতুর টোল ইজারাদার সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে এই মহাসড়ক দিয়ে দিনে ৩ থেকে ৪ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। মোটরসাইকেল এই হিসাবের বাইরে। গত চারদিনে সেতু দিয়ে যানবাহন চলেছে হাতে গোনা। কারণ সেতুর দুই মাথায় রয়েছে চেকপোস্ট। এ ছাড়া খানিক দূরেই ধলেশ্বর সেতুতেও রয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশের চেকপোস্ট। এই দুই চেকপোস্টে আটকে যাচ্ছে অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি।
৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। মূলত তারাই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা দুই দফা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এরপরও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেওয়া হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন বাস্তবায়নে ব্যয় গিয়ে ঠেকেছে ১১ হাজার তিন কোটি ৯১ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় পড়ছে ২০০ কোটি সাত লাখ টাকা, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের নকশা করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। এক্সপ্রেসওয়েটিতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হয়েছে আটটি পথ। ঢাকার বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ, আব্দুল্লাপুর, আব্দুল্লাপুরসংলগ্ন টোলপ্লাজা, শ্রীনগর ফ্লাইওভার ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া মোড়ে রয়েছে এসব প্রবেশ-নির্গমনপথ। আর এক্সপ্রেসওয়ের ভেতরে কিছু দূর পরপর নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী ছাউনিসংবলিত বাস-বে।
চলতি মাসের এক তারিখ থেকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায়ের কথা ছিল। এজন্য সওজ টোলও নির্ধারণ করে ফেলেছিল। কিন্তু টোল আদায়ের অবকাঠামো তৈরী না হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সওজ। দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তি টোল প্রস্তাব করা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ৯ টাকা ৯০ পয়সা। এক্সপ্রেসওয়েতে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের মতে, টোল আদায় শুরু হলে এক্সপ্রেসওয়েতে বিশৃঙ্খলা কমবে। কারণ কিছু কিছু গাড়ি ও মোটরসাইকেল এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়াভাবে চলে। এতে করে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।
হাইওয়ে পুলিশের পরিসংখ্যান মতে, গত দেড় বছরে এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া অংশে কমপক্ষে ৯০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধ-শতাধিক। তবে স্থানীয়দের মতে, দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নকশাগত দুর্বলতা এবং নজরদারি না থাকার কারণে বেপরোয়া চলতে গিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ের ভেতরে বাস-বে রাখা নিয়ে। এ ছাড়া ব্যারিয়ার সঠিকভাবে না বসানো এবং পথচারি পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ না রাখায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, যদি এক্সপ্রেসওয়ে আমরা বানাই, তাহলে এক্সপ্রেসওয়ের যেসব বৈশিষ্ট্য সেগুলো আমাদের রাখতে হবে। নাহলে সেটা একটা সাধারণ মহাসড়কের মতো হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-বে রাখা যাবে না। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে এটি রাখা হয়েছে। এতে বাসে উঠতে বা নামতে গিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের ভেতরে চলে আসছে যাত্রী। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। তখনই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। সওজ সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই টোল আদায়ের অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এরপরই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হবে। তখন এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।