Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাস্তায় গাড়ি ও মানুষ বেড়েছে

তৃতীয় দিনের লকডাউন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

লকডাউনের তৃতীয় দিন গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা অবস্থা। রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের সংখ্যা গতকাল অনেক বেড়েছে। আইন শৃংখলাবাহিনীর টহল থাকলেও তাদের তৎপরতা তেমন ছিল না। প্রথম দুই দিনের চেয়ে গতকাল রাস্তায় প্রচুর প্রাইভেট কার ও রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব গাড়ির বেশির ভাগই কোন তল্লাশি ছাড়া রাস্তায় চলেছে। রাজধানীর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, এসব এলাকায় অবাধে অনেক লোকজন চলাচল করেছে।

গতকালও রাজধানীসহ সারাদেশে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবসহ আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। তবে তাদের অবস্থান আগের দু’দিনের মতো এত কঠোর মনে হয়নি। পুলিশ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টহল, চেকপোস্ট ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। দোকানপাট, বিপনীবিতান, শপিংমল সবই ছিল বন্ধ। তবে পাড়া মহল্লায় দোকান খোলা ছিল এবং তাতে বেশ কিছু লোক সমাগমও দেখা গেছে। বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় বের হওয়ার দায়ে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ১৫২ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রাজধানীর সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ৮৮৫টি মামলায় ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অকারণে ও নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হওয়ায় ৬২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৩৪৬ জনকে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ৮৮৫ মামলায় ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট জরিমানার পরিমান ২০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

আমাদের সংবাদাতারা সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন গত দু’দিনের মতো গতকালও প্রধান প্রধান সড়ক ছিল ফাঁকা। মিরপুর, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, মগবাজার, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, সব সড়কে অনেক প্রাইভেট কার ও রিকশার চলাচল। কিছু কিছু অফিস খোলা থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অফিসের গাড়ি অথবা রিকশায় চলাচল করছেন। এ ছাড়া আমাদের সারাদেশের সংবাদদাতারা লকডাউনের তৃতীয়দিনের যে তথ্য পাঠিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সর্বাত্মক লকডাউনে সড়কে যান চলাচল বাড়ছে। গতকাল তৃতীয় দিনে নগরীর অনেক এলাকায় রিকশার পাশাপাশি ব্যাপকহারে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস, ইপিজেড ও কলকারখানা চালু রয়েছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব কর্মজীবীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশায় তাদের যাতায়াত করতে হয়েছে। আমদানি-রফতানি ও পণ্যপরিবহনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পথে পথে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। লকডাউন নিশ্চিতে নগরীতে সেনা বাহিনী এবং র‌্যাব পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় চেক পোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলেও তৃতীয় দিনের মত কঠোর লাকডাউন চলছে। আইন-শৃংখলা বাহিনী মাঠে তৎপড়তার মধ্যে বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি শহরসহ উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব কিছু বন্ধ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরেও শুনশান নিরবতা। দক্ষিণাঞ্চলে অভ্যন্তরীন ও আঞ্চলিক অন্তত ৫০টি রুটে সড়ক পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি ৩০টি নৌ রুটেও সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সরকারি বিধি নিষেধ প্রতিপালন করতে জেলা প্রশাসনসহ ৯টি উপজেলায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। জেলা সদরসহ কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই, চুনারুঘাট, মাধবপুর, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী তৎপর রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, তৃতীয় দিনের লকডাউনে লক্ষ্মীপুরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন, আইনশৃংখলাবাহিনি ও সেনা সদস্যরা। এর আগের দুইদিনে লকডাউন অমান্য করায় ২১৩জনের বিরুদ্ধে মামলায় ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানা করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গঠিত ১৮টি ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্টেটরা। এছাড়া বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের গনপরিবহন। পাশাপাশি ৫টি উপজেলার প্রতিটি শপিংমলসহ দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। সব সড়ক রয়েছে ফাঁকা।

ফরিদুর জেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর বিধি-নিষেধ পালনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জেলা সদরে কোতয়ালী থানা ও অন্যান্য ৮টি থানা এলাকায় মোট ১২টি চেকপোস্ট ও ২৯ টি মোবাইল টিম গঠনের মাধ্যমে নিরলসভাবে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ফরিদপুর জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জঅই, বিজিবি এবং বাংলাদেশ আনসারের সদস্যবৃন্দ মোতায়েন রয়েছে। সরকারি বিধি-নিষেধ অমান্য করায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সদরপুর থানা এলাকায় ১৯ জনকে ৯৩০০ টাকা, চরভদ্রাসন থানা এলাকায় ৭ জনকে ২০০০ টাকা, নগরকান্দা থানা এলাকায় ১০ জনকে ৮০০ টাকা জরিমানা করেছে।

গাইবান্ধার স্টাফ রির্পোটার জানায়, তৃতীয় দিন লক ডাউন চলছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে সর্বস্তরের লোকজন সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিধিনিষেধ প্রতিপালন করছে। গাইবান্ধা থেকে আন্তজেলা ও ঢাকা রাজধানীর সাথে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানায়, লকডাউনরে তৃতীয় দিনও মাঠে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। সকাল থেকেই মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাবসহ জেলা প্রশাসনের একাধিক টিমকে টহল দিতে দেখা গেছে। লকডাউন বাস্তবায়নে নগরীতে ২ পাল্টুন বিজিবি ৪টি ভাগে বিভক্ত হয়ে টহল দিচ্ছে। এছাড়া, রংপুরের ৮ উপজেলায় ৮টি এবং সিটি কর্পোরেশনে একটি সেনাবাহিনীর টহল টিম কাজ করছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে পুলিশ ও র‌্যাবের মাইকিং চলছে।

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা জানান, লকডাউনের তৃতীয় দিনে বরগুনায় মাস্ক না পড়ার অপরাধে ২২জনকে ৯ হাজার ৮শত ৫০টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া রাস্তায় অযথা ঘোরাঘুরি অপরাধে ১৮জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনে অফিস আদালত শহরের দোকান পাট বন্ধ হওয়ায় এখন সাধারণ মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন গ্রামের হাট বাজারে। ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছেন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত স্বল্প আয়ের মানুষজন। এতে ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, করোনা সংক্রমণ যে হারে বেড়েছে তাতে কঠোর লকডাউনের বিকল্প কিছু নেই।

মাগুরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, তৃতীয় দিনে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ দিনব্যাপী সমগ্র জেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, রোভার স্কাউটস ও রেডক্রিসেন্ট মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সার্বিক সহায়তা প্রদান করছে। বিনা কারনে বাইরে আসা, মাস্ক না পরা সহ বিভিন্ন কারনে জরিমানা করা সহ শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনকরা হয়েছে।

পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, তৃতীয় দিনের মত কঠোর লকডাউন চলছে। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপয়েন্টে পুলিশ অবস্থান নেয়। পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়, অনন্ত মোড়, আলিয়া মাদ্রাজ মোড়, লাইব্রেরি মোড়, দোয়েল চত্বরে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা যায়। এসময় শহর প্রায় জনশূন্যই ছিল। পাবনা সদর উপজেলায় বিভিন্ন অজুহাত ও যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার রেইনার নেতৃত্ব মোবাইল কোর্ট ২ জনকে ১শত টাকা করে জরিমানা করা হয়।

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, লকডাউনের তৃতীয় দিনেও সড়কে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান রয়েছে। জেলায় ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে জেলা পুলিশের সঙ্গে আছে ১শ সেনাবাহিনী, ২ প্লাটুন বিজিবি ও ১ প্লাটুন আনসারসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হোটেল-রেস্তোরাঁ, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া শহরের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বিধি নিষেধ অমান্য করায় জেলায় ১৩১ টি মামলায় ৮০ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি মাঠে কাজ করছে। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৪টি চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিসস্ট্রেটদের নের্তৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতও মাঠে রয়েছে। বিনা কারণে কেউ রাস্তায় বের হলে ও মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখা গেলেই ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করছে। পুরো জেলায় শহর এলাকায় মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেয়া হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ