পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘গলির ধারের ছেলেটি’ গল্প লিখে ড. আশরাফ সিদ্দিকী তীক্ষè অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের চরিত্রের যে লুকায়িত রহস্য উন্মোচন করেছেন। ওই গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণ হয়েছে। একটি গরিব অবহেলিত ছেলের জীবন কাহিনী শুনে মানুষ চোখের পানি ফেলেছে। এখন গলির ধারের ছেলেটি নয়; বরং গলির ভিতরে অগণিত কিশোরের আনাগোনা মানুষের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং শব্দটার অতি ব্যবহারে ভীতি-আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে।
করোনার ৭ দিনের কঠোর লকডাউনে রাস্তাঘাটে মানুষের সংখ্যা কম হলেও রাজধানীর অলিগলিতে অসংখ্য কিশোর আড্ডা দিচ্ছে; গল্পগুজব করছে দিনভর। ফলে কারোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ঠেকানোর চেষ্টায় সরকার যে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে তা কিছুটা হলেও ব্যহত হচ্ছে।
সারা দেশে সরকার ঘোষিত ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন ছিল গতকাল। করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে এই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এই সময়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ কারণে প্রধান সড়কে যান চলাচল এবং লোক সমাগম কম হলেও পাড়া মহল্লায় স্বাভাবিক জনজীবন চলতে দেখা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। মনে হয়েছে আশরাফ সিদ্দিকীর গলির ধারের নিরীহ ছেলেটির মতো অসহায় নয়; এরা খুবই উচ্ছৃঙ্খল। সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, শনিরআখড়া, দোলাইরপাড়, ওয়ারী, কাওরানবাজার, গুলিস্তান, টিকাটুলী, কমলাপুর এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, আগের দুই দিনের মতোই গতকালও মূল সড়ক বেশ ফাঁকা।
তবে গত দুই দিনের তুলনায় কিছুটা মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। সেইসঙ্গে কিছু প্রাইভেট যানবাহন, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ছাড়া অন্য যানবাহন চলতে দেখে যায়নি। কিছু কিছু অফিস খোলা থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অফিসের গাড়ি অথবা রিকশায় চলাচল করছেন। যাত্রাবাড়ির ভিতরের মহল্লাগুলোর অলিগলিতে দোকানপাট গত দুই দিনের তুলনায় একটু বেশি খোলা দেখা গেছে। মানুষের উপস্থিতিও বেশি।
পুলিশের টহল না থাকায় ইচ্ছেমতো নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। অনেকের মুখে কোনো মাস্ক দেখা যায়নি। তবে মূল সড়কে কিছুসংখ্যক পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে তাদের তৎপরতা ছিল কম। এতেকরে যে যার মতো চলাচল করছে।
শনিরআখড়ায় দেখা গেছে প্রচুর তরুণ ও কিশোর অলিগলির বিভিন্ন স্পটে আড্ডা দিচ্ছে। কেথাও কোথাও চায়ের দোকানে চা পান করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবে কিশোররা দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়ায় জরুরি কাজে যারা বের হচ্ছেন তারা ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন। বর্ণমালা হাইস্কুলের পাশের মসজিদের সামনে বেশ কয়েকজন যুবককে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তাদের একজন হোসেন আলী।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসায় একা একা সময় কাটাতে আর ভালো লাগছে না। তাই বন্ধুদের ফোন করে এই জায়গায় আসতে বলেছি। একটু সময় কাটাতে। এখন বসে একটু গল্প করছি।’ দনিয়া এলাকায় দেখা গেল কিছু দোকান খোলা। দোকানে কেনাকাটা করতে এসে মেতে উঠেছেন আড্ডায় তরুণরা। দোকানে মাস্ক পরে এলেও আড্ডায় গল্প করার সময় কারো মুখে ছিল না মাস্ক। একটু পর পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে চলে তাদের আড্ডা।
রাজধানীর টিকাটুলীর আশপাশের মহল্লাগুলোতে এমন ঘটনা প্রতিদিনকার। সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসে এভাবেই জমে উঠে আড্ডা। এভাবেই মানুষজন সকালে, বিকালে নিত্যপণ্য কেনার জন্য দোকানে আসেন, আর চায়ের দোকানগুলো আড্ডা চলে শাটার নামিয়ে। এই আড্ডায় কিশোর তরুণদের বেশি দেখা গেলেও নানান বসয়ী মানুষ আড্ডা দিচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মূল সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থাকলেও পাড়া মহল্লায় অভিযান না থাকায় মানুষের চলাফেরা অনিয়ন্ত্রিত। গোলাপবাগ রেল লাইনে দেখা গেলে কয়েকজন কিশোর বসে আড্ডা দিচ্ছে।
রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, গোলাপবাগ এলাকায় দেখা যায়, প্রধান সড়কে যানবাহন তুলনামূলকভাবে কম। তবে অলিগলিতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেছে। কেউ সকালের নাস্তা কিনতে কিংবা কেউ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তবে এলাকার ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছেন না। প্রধান সড়কে মাস্ক পরে চলাচল করলেও অলিগলিতে মাস্ক পরার প্রতি উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে।
বাসার কাছে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন মো. আসলাম। তিনি ও তার সঙ্গে থাকা কিশোরদের কারো মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসার নিচে তো তাই আর পরিনি। এলাকার থেকে বের হলে অবশ্যই পরি।’
এদিকে কঠোর বিধিনিষেধে কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ায় মানুষদের গত তিন দিনে প্রায় এক হাজার মানুষকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের কারো জরিমানা করা হয়েছে, কাউকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং কাউকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, লকডাউনের তৃতীয় দিন গতকাল সকাল থেকে পুরান ঢাকার প্রধান সড়কগুলোয় যান চলাচল ছিল একেবারেই সীমিত। প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই পড়তে হচ্ছে পুলিশের জেরায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট। মূলত লকডাউনের মধ্যে যে সব অফিস খোলা রাখা হয়েছে, সেখানকার কর্মীদের বহনকারী স্টাফ বাস, দুই-একটি প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব, আনসার এবং সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ প্রাইভেটকার থামিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করছেন। সত্যতা যাচাই না হলেই গুণতে হচ্ছে জরিমানা। কিন্তু লকডাউনে মূল সড়কে লোকজন কম দেখা গেলেও মহল্লার অলিগলিতে তরুণ ও কিশোরদের আড্ডা বেড়েই চলছে। লকডাউনে অলিগলিগুলোর কিশোর আড্ডা বন্ধ করতে না পারলে লকডাউনের উদ্দেশ্য সফল হবে বলে মনে হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।