Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সার্ভার ত্রুটিতে আটকে গেছে বিদেশগামীদের টিকা

চরম অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধক কার্যক্রমের দায়িত্বরতদের চরম অব্যবস্থাপনা ও খামখেয়ালির বিপদে পড়ে গেছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। সার্ভারে ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে তাদের টিকা গ্রহণের নিবন্ধক কার্যক্রম আটকে গেছে। ফলে সারা দেশের হাজার হাজার বিদেশগামী প্রবাসী শ্রমিক চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিদেশগামী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিক্তিতে টিকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও সার্ভার জটিলতায় আটকে গেছে বিদেশগামী শ্রমিকদের টিকা কার্যক্রম।

গতকাল টিকা নিবন্ধনের দ্বিতীয় দিনেও হাজার হাজার বিদেশগামীকর্মী টিকা নিবন্ধনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সার্ভার জটিলতার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ৫৩টি কেন্দ্রে গতকালও প্রবাসীদের টিকা গ্রহণের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে অনেকের বিদেশযাত্রা। কর্তৃপক্ষ বলছে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জানতে চাইলে গতকাল শনিবার বায়রার সাবেক অর্থ সচিব মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, টিকা গ্রহণের নিবন্ধন কার্যক্রমে জটিলতা দেখা দেয়ায় প্রবাসী কর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সার্ভার ত্রুটির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করার জোর দাবি জানান।

ঘোষণা অনুযায়ী প্রবাসীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনতে প্রতি জেলায় জনশক্তি অফিসে শুক্রবার থেকে রেজিস্ট্রেশনের সময় দেয় সরকার। সকাল ৯টায় নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসি সার্ভারে দেখা দেয় জটিলতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্ভার ত্রুটির কারণে সারা দেশের ৫৩টি কেন্দ্রে শত শত বিদেশগামী কর্মীরা গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনেও করোনা টিকার নিবন্ধন করতে পারেনি। সকল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে জড়ো হওয়া বিদেশগামী কর্মীরা চরম ভোগান্তির কবলে পড়েন। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত সার্ভার সচল হলে প্রবাসী কর্মীরা নিজ নিজ বাসায় বলে অ্যাপস এর মাধ্যমে ঢুকে ২০০ টাকা জমা দিয়ে মাত্র ৬৭টি টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। সকাল ৮টায় সার্ভার আবার বিকল হয়ে পড়লে রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনে বিদেশগামী কর্মীরা হৈ চৈ শুরু করেন। টেকনিশিয়ানের অভাবে গতকাল শনিবার সারাদিন সার্ভার চালু করা সম্ভব হয়নি। বিএমইটির নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।

পরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সরোয়ার আলম দুঃখ প্রকাশ করে প্রবাসী কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সার্ভার ত্রুটির কারণে আপনাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। আপনারা শুধু নিবন্ধনের ফরম, আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ও দুই শত টাকা রেখে যান সার্ভার চালু হলেই আমরা আপনাদের নিবন্ধন করে রাখব। পড়ে বিক্ষুব্ধ প্রবাসী কর্মীরা প্রায় তিনশ’ ফরম জমা দিয়ে নিরাশ মনে বাড়ি ফিরে যান। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান অফিসগুলোতেও একই চিত্র।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিদেশগামী কর্মীদের করোনা টিকা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধনকালে উপস্থিত অন্যান্য প্রবাসীরা টিকা না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বিক্ষুব্ধ এসব প্রবাসী শ্রমিকদের শান্ত করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ফাইজার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর দিনে এই দৃশ্য দেখা যায়। প্রবাসীদের উদ্দেশে সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রবাসী মন্ত্রীর কমিটমেন্ট অনুযায়ী আপনাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়ার যে ব্যবস্থা নিয়েছি, আজকে তার ছোট্ট একটা প্রতীকী উদ্বোধন হলো। ৫-৭ জনকে ভ্যাকসিন দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে।

সচিব বলেন, ‘আমরা বিদেশগামীদের সঙ্গে আছি। এই মন্ত্রণালয় আপনাদের জন্য কাজ করছে। ভ্যাকসিনের সঙ্কটের মধ্যেও আপনাদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ এ সময় প্রবাসীরা হট্টগোল শুরু করলে সচিব সবাইকে থামার অনুরোধ জানান। এই কর্মসূচির আওতায় শুধুমাত্র কুয়েত ও সউদী প্রবাসী কর্মীদের করোনা টিকা দেয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত হয়েছিলেন ইতালিসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা। উপস্থিত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, মাত্র চারটা সেকশনকে উদ্বোধন করা হয়েছে করোনার মধ্যে। একটা হচ্ছে পুলিশ, মেডিক্যাল ছাত্র, আর তৃতীয়টি হচ্ছেন বিদেশগামী কর্মীরা। এটা করা হয়েছে শুধু আমাদের উদ্যোগে। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, অধৈর্য হলে কোনো সমাধান আসবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাতটা হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা। ব্যবস্থাপনা করতে কিছুটা সময় দরকার।
তিনি বলেন, সুরক্ষা অ্যাপ এখনো চালু হয়নি। রোব বা সোমবারের দিকে চালু হওয়ার কথা। আপনারা বিএমআইটিতে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন। নাম আর পাসপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরে চলে যাবে। সেখানে বলে দেয়া হবে, কে কোন হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেবেন। মন্ত্রী বলেন, একটু ধৈর্য ধরেন। আজকালের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। যাদের ভিসার সময় শেষ, কিংবা মেয়াদ নেই, সবাইকেই বিএমআইটিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তাদের রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া হবে মন্ত্রণালয় থেকে।



 

Show all comments
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ৪ জুলাই, ২০২১, ৪:৪২ এএম says : 0
    সব জায়গায় গাফিলতি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ