Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাজধানীতে ২০৮ জনকে জরিমানা, গ্রেফতার ৩২০

শাস্তির চেয়ে সচেতনতায় মনোযোগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজধানীর প্রধান সড়ক ছিল ফাঁকা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় ৩২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা হয়। একই অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ২০৮ জনকে জরিমানা করা হয়।
ডিএমপি মিডিয়া জানিয়েছে, চলমান লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)’র আট বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় সরকারের বিধি-নিষেধ মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিনা কারণে ঘরের বাহিরে বের হওয়ায় ৩২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া বাইরে বের হওয়ার সঠিক কারণ জানাতে না পারায় ২০৮ জনকে জরিমানা করা হয়। তাদের কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে কতজনকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া হয়েছে সেটি এখনো জানানো হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে পরিচালিত অভিযানে ৬৮টি গাড়িকে এক লাখ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া গতকাল দুপুর আড়াইটা থেকে শাহবাগ এলাকায় আধা ঘণ্টা স্থায়ী চেকপোস্টে নির্দেশনা অমান্যকারীদের শাস্তির দেয়ার পরিবর্তে সচেতনতায় বেশি সক্রিয় দেখা গেছে সেনাবাহিনীকে। শাহবাগ মোড়ে তিন রাস্তার মুখে দাঁড়ায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। চলাচলকারী প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে সেনা সদস্যরা। এ সময় মাস্ক না পরে চলাচল করছে এমন কয়েকজনকে পাওয়া যায়। বাইরে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় তাদের সামনে যেতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
সেনাবাহিনীর এ দলটির দায়িত্বে ছিলেন মেজর হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশ পরিপালনে সেনাবাহিনী কাজ করছে। ব্যক্তির অসচেতনতার কারণে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা তাই ব্যক্তি সচেতনতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। পাশাপাশি কোনো কারণ ছাড়া কেউ যেন ঘর থেকে বের না হন এবং সামাজিক দূরত্বসহ করোনার সংক্রমণরোধে যে পদক্ষেপগুলো রয়েছে সেগুলো যাতে মানা হয় সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সঙ্গে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণে সমন্বিত উদ্যোগে লকডাউন বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।
অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যরা জানান, মূল সড়কের তুলনায় অলি গলিতে সাধারণ মানুষের চলাচল বেশি। তবে গতবারের তুলনায় এবার মানুষের ঘর থেকে বের হওয়ার প্রবণতা কম। শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত রমনা ট্রাফিক বিভাগের ট্রাফিক্স সার্জেন্ট জাফর জানান, এবার লকডাউন বাস্তবায়নে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে খুব কম মানুষই ঘর থেকে কারণ ছাড়া বের হওয়ার কথা বলছেন। এরপরও যাদের কারণ যথোপযুক্ত মনে হচ্ছে না এরকম চারজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি একজনকে পাওয়া গেছে যিনি ঢাকা থেকে রাজবাড়ী উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলে রওনা দিয়েছিলেন। তাকে শাহবাগে আটক করে গাড়িটি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে শাহবাগ মোড়ে সেনা টহল দল চলে যাওয়ার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি টহল দল এসে অবস্থান নেয়। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা চলাকালে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরার সময় শাহিন আলম নামে এক যুবককে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
শুধু শাহবাগ নয়, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে মানুষের ও যানবাহনে উপস্থিত কিছুটা বাড়লেও তা চোখে পড়ার মতো নয়। তাছাড়া রাতের শেষভাগে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি সকাল পর্যন্ত গড়ানোয় মানুষের উপস্থিতি আরও কম ছিল। তবে দুপুরে জুমার নামাজ আদায় করতে অনেকেই বের হয়েছিলেন। কিন্তু তারা প্রধান প্রধান সড়কে না এসে অলিগলিতেই অবস্থান নিয়েছিলেন।
কুড়িল থেকে শুরু করে রামপুরা ব্রিজ, গুলশান, ধানমন্ডি, মহাখালীসহ বিভিন্ন সড়কে থাকা চেকপোস্টগুলোতে খুব বেশি চাপ ছিল না। দুপুর ১২টায় মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত বাড্ডা থানার চেকপোস্টে প্রায় আধঘণ্টা দাঁড়িয়েও কয়েকটি রিকশা, ট্রাক আর ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি। ফুটপাতগুলোতেও পথচারীদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। নিতান্তই বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে কেউ বের হচ্ছেন না। চেকপোস্টগুলোতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলেই যেতে দেয়া হচ্ছে।
বাড্ডা থানার এসআই শাহ আলম বলেন, সকাল থেকে যত মানুষ ও গাড়ির চালকরা এ চেকপোস্ট দিয়ে পার হয়েছেন, তারা সবাই যৌক্তিক কারণ দেখিয়েছেন। সকাল থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়িতে মানুষের উপস্থিতি কম। তাছাড়া ছুটির দিন ও সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি অনেকটা কমেছে।
বিধিনিষেধের প্রথম দিন অনেককে গ্রেফতার-আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন পরিস্থিতির এমন পরিবর্তন কেন- জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের চেকপোস্টে অনেককে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু রাজধানীতে অনেকসংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার, আটক, মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। এ ভয়েই গতকাল জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হয়নি।
তবে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বিধিনিষেধ অমান্য করায় ৩০ জনকে আটক করা হয়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিরপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, শাহ আলী, পল্লবী, কাফরুল থানাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে তাদের আটক করা করে পুলিশ। মিরপুর বিভাগের ডিসি আ স ম মাহতাব উদ্দিন বলেন, লকডাউনের (বিধিনিষেধ) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় বের হওয়ায় মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০ জনকে আটক করেছেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে, সকাল থেকেই প্রগতি সরণিতে র‌্যাব-১ এর একাধিক টিমকে টহল দিতে দেখা গেছে। র‌্যাবের পাশাপাশি রাস্তায় বাড্ডা ও ভাটারা থানার পুলিশের টহল টিমকেও দেখা গেছে। প্রয়োজনে টিমের সদস্যরা গাড়ি থামিয়ে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১৩ জনের কাছ থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৪০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে র‌্যাব।
অপরদিকে প্রথম দিন ‘লকডাউন’ দেখতে বাইরে বেরোনো সেই ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। লকডাউনের প্রথমদিনে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর থেকে একে একে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী তাদের দুইশ’ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে আদেশ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ