পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুলনার খালিশপুর হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। এইচএসসিতে অকৃতকার্য হয়ে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অনেকটাই বিপথে চলে গিয়েছিলেন। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। অল্প শিক্ষায় কোথাও চাকরি মেলেনি।
এরপর বাড়ির ছাদে শখ করে কবুতর পোষা শুরু করেন। প্রথমে ছিল ৪ জোড়া কবুতর। গিরিবাজ জাতের চার জোড়া কবুতর থেকে আড়াই বছরে বেড়ে হয়েছে ৪৩ জোড়া। গিরিবাজ ছাড়ও তার কাছে রয়েছে নানা জাতের কবুতর। প্রতি মাসে কবুতর বিক্রি করে আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
এক সময়কার সংসারের বোঝা আমিনুল এখন মূল উপার্জনকারী। কবুতর পোষা এবং ব্যবসার পেছনের কাহিনী আমিনুলের মত না হলেও খালিশপুর এলাকার আলম, জামান, সিদ্দিক, দৌলতপুর এলাকার তৌহিদ, নাজমুল-ওরা সবাই কবুতর পুষে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। এ অঞ্চলের প্রায় ২০০ যুবক কবুতর বিক্রি করে এখন স্বচ্ছল জীবনযাপন করছে।
মহানগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর এলাকায় উঠতি প্রজন্মের বড় একটি অংশের কবুতর পোষা এবং তাদের উদ্যোগেই প্রতি শুক্রবার নয়াবাটি এলাকায় বসে খুলনাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় কবুতরের হাট। শুধু কবুতর নয়, অন্যান্য কিছু প্রজাতির পাখিও এ হাটে বিক্রি হয়। সকাল থেকে দুপুর অবধি চলে বেচাকেনা। ভীড় জমে যায় পাখিপ্রেমীদের। কিং, জ্যাকোবিন, ফিলব্যাক, সোয়া চন্দন, লক্ষা, সিরাজী, গিরিবাজ, গোল্ডেন সুইট এসব নজরকাড়া নাম আর বাহারি রঙের কবুতরের মেলা বসে নয়াবাটির এ বাজারে।
খালিশপুর নয়াবাটি মোড় থেকে পার্শ্ববর্তী গোলচত্বর পর্যন্ত রাস্তার দুই দিকে বিক্রেতারা সারিবদ্ধভাবে খাঁচায় কবুতর নিয়ে বসেন। ঘুঘু, টিয়া, ময়না, টার্কিসহ দেশি-বিদেশি পোষা পাখিও বিক্রি হয়। আছে কোয়েল ও খরগোশও। বিক্রি করা হয় পাখির খাঁচাও। বাজারের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পোষা পাখির ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন এখানে।
নয়াবাটি হাটের কবুতর বিক্রেতা আমিনুল জানালেন, প্রতি শুক্রবার কবুতরের হাট বসে। এ হাটে লক্ষা, সিরাজী, হোমার, হাউস পেজার, কোটাবলসহ বিভিন্ন জাতের কবুতর ওঠে। কবুতরের জাতভেদে বিভিন্ন দাম ওঠে। তিন হাজার থেকে এক লাখ টাকার কবুতরও পাওয়া যায়। ঘিয়া চুল্লি কবুতর পাঁচ থেকে আট হাজার ও বল কবুতর তিন থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
গিরিবাজ কবুতরের জোড়া ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। জ্যাকবিন প্রতিজোড়া বিক্রি হয় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকায়। এরপরই অবস্থান ফিলব্যাকের। এক জোড়া বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। এছাড়া দুই থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় রাজ গিরিবাজ। সিরাজী বিক্রি হয় ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা হাঁকা হয় একজোড়া কিংয়ের দাম। বিত্তশালীরা বেশিরভাগ ফেন্সি নামের কবুতর লালন-পালন করেন।
হাটের আরেক কবুতর বিক্রেতা শহিদুল হক জানালেন, তার কাছে লক্ষা, কিং, লাহোড়ি, শর্টপিস, ফিলব্যাক, রাশিয়ার ভোগলা ডামলা, পোটার, বল কবুতর, পেন্সিল পুটার, রেসার হুমারসহ বিভিন্ন ধরনের কবুতর রয়েছে। ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের কবুতর রয়েছে। এসব কবুতর বিত্তশালী ও সৌখিন মানুষরা পোষেন। প্রায় ৩০০ যুবক এখানে কবুতর বিক্রি করেন। প্রতিদিন হাটে ৪ হাজার ক্রেতা আসেন বলে তিনি জানান।
যশোর থেকে খুলনার কবুতরের হাটে এসেছেন মো. অনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, কবুতর কেনার জন্য খুলনায় এসেছি। এখান কবুতর কিনে নিয়ে বাড়িতে তৈরি করা খামারে ছেড়ে দেব। এছাড়া যারা কবুতর পোষেন তাদের কাছে বিক্রি করব। তিনি আরও বলেন, গিরিবাজ কবুতরের চাহিদা বেশি। কবুতর কেনাবেচা করে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়।
মহানগরীর ইকবাল নগর থেকে আসা পাখিপ্রেমী সরকারি কর্মকর্তা জিনাত আরা ফেরদৌস বলেন, হাটে এসেছি কবুতর দেখতে। যদি পছন্দ হয় তাহলে কিনব। কিংসহ নানা প্রজাতির কবুতর পছন্দ তার। এক জোড়া সিরাজী কবুতর তার কাছে ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।