পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি করোনার মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ মেনে ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট পাস হয়েছে। জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২১ পাসের মধ্যদিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের নতুন বাজেট পাস হয়েছে। আর এই বাজেট পাসের মধ্যদিয়ে জাতীয় সংসদ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৪২ কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে। গতকাল বাজেট পাসের পর সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অভিনন্দন জানান।
এখন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ-এর অনুমোদন সাপেক্ষে আজ ১ জুলাই থেকে বাজেট কার্যকর হবে। গত ৩ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। আর বুধবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৯১২ কোটি ৯৫ লাখ ৯ হাজার টাকার বাজেট। আসলে গতকাল জাতীয় সংসদে পাসকৃত বাজেটটি সরকারের আর্থিক খাতের ব্যালেন্স শিট অনুয়ায়ী একটি গ্রস বাজেট, যা পুরোপুরি ব্যয় হবে না। ব্যয় হবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৩ জুন ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার যে নিট বাজেট দিয়েছেন তা। সরকারের কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে গ্রাস বাজেটে অনেক ব্যয় দেখাতে হয়, যা ব্যয় হয় না। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে বাজেটের ব্যালেন্সশিটে সেসব ব্যয় দেখাতে হয়। কারণ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের কিছু অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যা বাজেটের আয় ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাবে মেলানো হয়। প্রেসিডেন্টের অনুমোদনক্রমে আজ বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে এই বাজেট বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
বাজেট পাস উপলক্ষ্যে গতকাল সকাল ১১ টায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে দেয়া বরাদ্দের অনুমোদন পেতে ৫৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এরমধ্যে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই দাবি উত্থাপন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। দাবিগুলো নিষ্পত্তি শেষে বাজেট পাসের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২১ সংসদে পেশ করেন। উপস্থিত সদস্যরা কণ্ঠভোটে সর্বস্মমতিক্রমে অর্থমন্ত্রীর এই আইন অনুমোদনের মধ্যদিয়ে বাজেট পাস করে দেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় উপ-নেতা জিএম কাদেরসহ সরকার ও বিরোধী দলের কিছু সদস্য এ সময় উপস্থিতি ছিলেন। উল্লেখ্য, মহামারি করোনার কারণে পুরো বাজেট অধিবেশনেই সদস্যদের উপস্থিতি সীমিত রাখা হয়।
বাজেট বরাদ্দ কাটছাটের জন্য প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিরোধী দল বিএনপি ও গনফোরামের সদস্যরা মন্ত্রি-প্রতিমন্ত্রীদের উত্থাপিত ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ৬২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব অনেন। নিয়ম অনুযায়ী সবগুলো দাবির ওপর আলোচনার সুযোগ থাকলেও সময়ের স্বল্পতার কারণে সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ৩টি মঞ্জুরি দাবির ছাটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। দাবিগুলো হলো- আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্ব্য সেবা বিভাগ। এই দুই দাবির ওপর আনা ছাটাই প্রস্তাবগুলোর ওপর আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, মুজিবুল হক চুন্নু, পীর ফজলুর রহমান, ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বেগম রওশন আরা মান্নান ও বিএনপির হারুনুর রশীদ, ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা ও মোশাররফ হোসেন এবং গণফোরামের মোকাব্বির খান- এই ১০ জন সংসদ সদস্য। মূলত তাদের আনা ছাটাই প্রস্তাবগুলো ছিল নীতি অনুনমোদন, মিতব্যয় ও প্রতীকি ছাটাই। এসব ছাটাই প্রস্তাবের ওপর আলোনায় অংশ নিয়ে তারা সরকারের তিন মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির সমালোচনা করেন এবং করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করেন। আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কন্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা আলোচনা শেষে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট পাস হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সরকারী ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট পেশ করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। এরপর স্পীকার আগামী ৩ জুলাই সকাল ১১টা পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন মূলতবি করেন।
বাজেট পাস
নির্দ্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে সংসদ অনুমোদিত ৭ লাখ ৯২ হাজার ৯১২ কোটি ৯৫ লাখ ৯ হাজার টাকার মধ্যে সংসদের ওপর দায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এই টাকা অনুমোদনের জন্য সংসদ থেকে কোন ভোটের প্রয়োজন হয় না। সরাসরি সংসদ এই টাকা অনুমোদন করে দেয়। অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৩২ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার টাকা ভোটের মাধ্যমে সংসদে গৃহীত হয়।
গত ২ জুন সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এর পরের দিন ৩ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘ জীবন জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’।
অতীতে বাজেটের ওপর দীর্ঘ আলোচনার রেওয়াজ থাকলেও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবছরও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম সময় আলোচনা করে বাজেট পাস হয়। এবার সম্পূরক বাজেটের ওপর দুই দিন আলোচনা করে সেদিনই তা পাস করা হয়। মূল বাজেটের ওপর আলোচনা হয় ৫ দিন। সচরাচর বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হয়। অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের উপর দুই থেকে চার দিন এবং সাধারণ বাজেট এবং উপর ১২ থেকে ১৫ দিন আলোচনা হয়। বাজেট নিয়ে ৫০ থেকে শুরু করে ৬৫ ঘণ্টার মত আলোচনা রেকর্ড রয়েছে। এর আগে ১৯৯৮ সালের বাজেট অধিবেশন ২০ কার্যদিবস চলেছিল। করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে বাজেটের ওপর প্রায় ৫২ ঘন্টার সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাজেট পাস উপলক্ষ্যে গত ২৮ জুন পুনরায় অধিবেশন শুরু হয়। ২৯ জুন অর্থবিল ২০২১ পাসের মধ্যদিয়ে বাজেট পাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর গতকাল বাজেট পাসের মধ্যদিয়ে এই কার্যক্রম শেষ হলো।
এবারের বাজেট বর্তমান অর্থমন্ত্রীর তৃতীয় বাজেট। আর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৩তম বাজেট। আজ ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবলা ও জীবন-জীবিকার ওপর প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ শ্লোগান সম্বলিত ২০২১-২২ অর্থ-বছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। পাস হওয়া বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। শিল্পে, রাষ্টায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকে আর্থিক বিনিয়োগ সহায়তা, ভর্তুকি খাতে ৩৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, সুদ পরিশোধ বাবত ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।