Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পাস

ব্যাংক খাতে লুটপাটে সরকার খুবই চিন্তিত : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৫ পিএম, ৩০ জুন, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাস হলো ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের মেগা বাজেট। সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে গতকাল দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পাস করে। আজ শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থ বছরের বাজেট পাসের প্রস্তাব করেন। এর আগে বেলা ১টা ৩২ মিনিটে স্পিকারের ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট পাস হয়। এসময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২ জুন সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর ৮ জুন থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় শুরু হয়। এতে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য বাজেটের পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন। এরপর ২৯ জুন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে রফতানি খাতে উৎস কর কমানো হয়। এর বাইরেও কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়।
এছাড়া বাজেটের উপর ৫৫টি দাবির বিপক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মোট ৪২০টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। এতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৬ জন এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ৩ জন আলোচনা করেন। মোট ৭টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয় বাকীগুলো সরাসরি ভোটে গৃহিত হয়।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরের পাস হওয়া বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থা থেকে আদায় করা হবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বিদেশি অনুদান ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এ অনুদান পাওয়া গেলে সরকারের মোট আয় হবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় হবে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ দেয়া হবে ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। মূলধনী ব্যয় ২৬ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ব্যয় হবে ৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
এছাড়া উন্নয়ন ব্যয় করা হবে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের অর্থায়ন ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা নেয়া হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।
জিডিপির ৫ শতাংশ ধরেই ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী বছরে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা (অনুদান ছাড়া)। তবে বিদেশি অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেয়া হবে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক উৎসের মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে আগের নেয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হচ্ছে ৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
এটি অর্থমন্ত্রী আবুল মালু আবদুল মুহিতের দশম বাজেট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ৮ম বাজেট। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেটও এটি।
ব্যাংক খাতে লুটপাটে সরকার খুবই চিন্তিত : অর্থমন্ত্রী
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকারও খুবই চিন্তিত বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে একথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পাসের প্রক্রিয়া নিজের বক্তব্যে মুহিত বলেন, ব্যাংক খাতের লুটপাট নিয়ে আমরাও খুবই চিন্তিত। এটা যাতে আর না হয়, এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি এবং তদন্তের পরে মামলা হচ্ছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ২ হাজার ৫২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির এমপি নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে অব্যবস্থা তাতে তাদের টাকা দেয়ার কোনো মানেই হয় না। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে।
এসময় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট হলে যে ক্যাপিটাল ঘাটতি হচ্ছে, সেটা জনগণের টাকা দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে, সারা জীবন এভাবে চলতে পারে না।
ব্যাংক খাতে লুটপাট সংসদ সদস্যদের এই উদ্বেগ দেখে অর্থমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে সবগুলো মামলা এখনও হয়নি। এই রিপোর্টটি দুদকের কাছে আছে। তবে আপনারা নিশ্চিত থাকেন, যেসব লোকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে এবং তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়েছে তাদের সকলকেই দুদক মামলার আওতায় নিয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, আজ ৭৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে আজ সকালেই অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিকেলেই দুর্নীতির দায়ে দুদক গ্রেফতার করে ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিজানুর রহমানসহ দুইজনকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ